নিজস্ব প্রতিবেদন : তাঁর পরিচয় পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন বাড়ি থেকে দূরে ভিন রাজ্যে। অনেক চেষ্টা ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর শেষে বাসে করে সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে বাড়ি ফেরার পথ ধরেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার বাসিন্দা সুদর্শন মণ্ডল। কিন্তু এত চেষ্টার পরেও তাঁর আর বাড়ি ফেরা হল না। ওড়িশা সীমান্তে বাসের মধ্যেই প্রাণ হারান সুদর্শন। কিন্তু করোনার সংক্রমণের ভয়ে রাস্তায় তাঁর দেহ নামাতে দেয়নি ওড়িশা সরকার। ফলে বাসেই রয়ে যায় দেহ। আজ ভোরে তাঁর নিথর দেহ নিয়ে বাস পৌঁছয় মেদিনীপুর শহরে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পিংলার জাহারদা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুদর্শন মণ্ডল। মহারাষ্ট্রে একটি নামীদামি হোটেলে হাউসকিপিং স্টাফের চাকরি করতেন তিনি। করোনার জেরে লকডাউনে সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকার ফলে অর্থাভাব। তীব্র খাদ্যসংকট। শেষে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাড়ি ফেরার একটা ব্যবস্থা করে ফেলেন সুদর্শন। দিন তিনেক আগে সুদুর মহারাষ্ট্র থেকে ৩৫ জন পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে পিংলার জলচকের উদ্দেশে রওনা দেয় একটি বাস। সেই দলে ছিলেন পিংলার সুদর্শনও। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর পিংলায় গ্রামের বাড়িতে ফেরা হল না সুদর্শনের।


রাজ্যে ঢোকার আগেই মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ বাসের মধ্যেই মৃত্যু হয় সুদর্শন মণ্ডলের। বাস তখন ওড়িশা সীমান্তে। বাস থেকে দেহ নামাতে চাইলে বাধা দেয় ওড়িশা প্রশাসন। প্রসঙ্গত, ভারতের মধ্যে মহারাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা সর্বাধিক। সেই মহারাষ্ট্র থেকে ফিরছে বাস। পরিযায়ী শ্রমিকদের শরীরে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাতেই বাস থেকে দেহ নামাতে বাধা দেয় ওড়িশা সরকার। ফলে বাসেই রয়ে যায় দেহ। ২৪ ঘণ্টা পর সেই দেহ নিয়ে বাস পৌঁছয় মেদিনীপুর শহরে।


বুধবার ভোর রাতে দাঁতন সীমান্ত দিয়ে বাস এসে পৌঁছয় মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে গ্লোকাল হাসপাতালের কাছে। এরপর রীতিমতো ব্যারিকেড করে দেহটি বাস থেকে নামায় পুলিস। দেহটি বাস থেকে নামানোর পর তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে করোনার সংক্রমণেই ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য দেহ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে লালারসও। করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই দেহ তুলে দেওয়া হবে পরিবারের হাতে। 


অন্যদিকে,মেদিনীপুর শহরে পৌঁছনোর পর বাসের বাকি ৩৪ জন পরিযায়ী শ্রমিককে অন্য বাসে পিংলার উদ্দেশে রওনা করিয়ে দেয় প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই বাসে সফর করা সব পরিযায়ী শ্রমিকদেরই লালারস পরীক্ষা করে দেখা হবে। এদিকে পিংলায় সুদর্শন মণ্ডলের গ্রামের বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। এালাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 


আরও পড়ুন, '৬০ শতাংশই কোভিড পজিটিভ, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত'