`পড়াশোনা করতে চাই,` নিজেই নিজের বিয়ে রুখে `রূপশ্রী`র টাকা ফেরাল নাবালিকা
চাপের মুখেও বেঁকে বসে মাজেদা। নিজের উদ্যোগে ও ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আতিকুল্লাহ মোল্লার চেষ্টায় বিডিও সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
নিজস্ব প্রতিবেদন : জন্মের পর থেকেই দুনিয়া বলতে এক চিলতে একটা ঘর। কিন্তু সেই ঘরে বসেই স্বপ্নের জাল বুনছিল সে। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখত ভালো করে পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হবে। ভালো চাকরি করবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। সমাজের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্নে হঠাত্ই ছেদ পড়ে। আর্থিক অনটন তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই ছাদনাতলায় প্রায় টেনে নিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়াল নাবালিকা মাজেদা খাতুন। নিজে হাতে নিজের বিয়ে রুখে ফিরিয়ে দিল 'রূপশ্রী'র টাকা। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার শতলকলসা গ্রামে।
বাবা আলি হোসেন মল্লিক কর্মসূত্রে আরবে থাকেন। ছোট ভাই, মা আবেদা বিবি ও মাজেদা- ৩ জনের ছোট্ট সংসার। ছোট্ট থেকেই আর্থিক সংকট মাজেদার নিত্যসঙ্গী। বাবা বাইরে কাজ করেন। তাই ছোট্ট মাজেদাকে পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের হাতে হাতে পরিবারের সমস্ত কাজকর্ম-ই করতে হয়। কিন্তু তাতেও দমে যায়নি মাজেদা। পড়াশোনা করে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখত মাজেদা। এদিকে সংসারে অভাব, অনটন নিত্যসঙ্গী। এই পরিস্থিতিতে মেয়ে মাজেদাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মা আবেদা বিবি। সেইমতো তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের দিন ঠিক করা থেকে লোককে নিমন্ত্রণও সারা হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু চাপের মুখেও শেষে বেঁকে বসে মাজেদা। পরিবারের চাপে প্রথমে বিয়েতে রাজি হলেও, পরে সে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে এখন সে করবে না। পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাবে। এরপরই নিজের উদ্যোগে ও ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ আতিকুল্লাহ মোল্লার চেষ্টায় বিডিও সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাজেদা। তাঁর হাতে 'রূপশ্রী' প্রকল্পের টাকা তুলে দেয় নাবালিকা মাজেদা খাতুন। তার এমন সাহসিকতায় খুশি পরিজন থেকে প্রশাসন। আগামী দিনে মাজেদার পড়াশোনার বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও সন্দীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন, জোড়াবাগান কাণ্ড: নাবালিকার উপর পৈশাচিক নির্যাতন, ছাদ থেকে মিলল ৪টে ভাঙা দাঁত-ছুরি