অয়ন ঘোষাল: উত্তর কলকাতার অন্যতম পুরনো পুজো কুমারটুলি সর্বজনীনের পুজো। প্রথমে একচালা এবং তারপর পরিবর্তন হয় ঠাকুরের ধরন। কীভাবে? এর নেপথ্য়ে রয়েছে এক কাহিনী। ৯০ বছরে পদার্পণ করা কুমারটুলি সর্বজনিন দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল ১৯৩১ সালে। এরপর ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত সাবেকি একচালা প্রতিমার আরাধনাই ছিল এই পুজোর রীতি। প্রতিমা তৈরি করতেন প্রবাদপ্রতিম শিল্পী গোপেশ্বর পাল, যিনি জি পাল নামে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

১৯৩৮ সালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই পুজোর সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন। দেশে তখন তীব্র দেশাত্মবোধ। তাই বাগবাজার সর্বজনীন এবং কুমারটুলি সর্বজনীনের একযোগে সভাপতি করলেন নেতাজি। বিপত্তি ঘটল পঞ্চমীর রাতে। কুমারটুলিতে গোপেশ্বর পালের তৈরি একচালা প্রতিমায় হঠাৎ আগুন লেগে যায়। পরদিন দেবীর বোধন। সমূহ সর্বনাশ। কী উপায়? রাতারাতি প্রতিমা তৈরি হবে কীভাবে? শুধু চালা তৈরি করে কাঠামো গড়তেই তো দুদিন লেগে যাবে।


আরও পড়ুন: চিরাচরিত প্রথা ভেঙে যেমন খুশি মূর্তি নয়, পুরনো ঐতিহ্য মেনেই জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরে


গোপেশ্বর পাল গেলেন সুভাষচন্দ্রের এলগিন রোডের বাড়িতে। নিদান দিলেন নেতাজি। বললেন, একচালা প্রতিমার বদলে আলাদা করে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, কার্তিক, গনেশ, সরস্বতী তৈরি করলে কেমন হয়? তাহলে সময় কম লাগবে। আলাদা আলাদা শিল্পী রাতারাতি আলাদা কাঠামোয় আলাদা মূর্তি গড়বেন। কাজ এগোবে দ্রুত। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। এক রাতেই রাতারাতি তৈরি হল পাঁচ চালা দুর্গামূর্তি। 



সেই প্রথমবার। পন্ডিতরা ছিঃ ছিঃ করলেন। তবে নেতাজি যুক্তি দিলেন, মা দুর্গা যখন অসুর বিনাশ করছেন, তখন কাছেপিঠে সন্তানরা না থাকাই শ্রেয়। এতো যুদ্ধ। কেউ সন্তান সন্ততি নিয়ে যুদ্ধ করতে যায়? যুক্তি শুনে কার্যত থমকে গেলেন সমাজের মাতব্বররা। সেই প্রথম আধুনিক দুর্গা মূর্তির পুজো হল। সেই শুরু। নেতাজির হাত ধরে শহর কলকাতাকে আধুনিক এক দুর্গাপুজো উপহার দিলেন গোপেশ্বর পাল।


ব্যোমকেশ পাল, গোপেশ্বর পালের বংশধর বেশিদিন দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে পারেননি জি পাল। ১৯৪৪-এ স্বল্পায়ু এই শিল্পী এ প্রয়াত হন। মাত্র ৭ বছর প্রতিমা তৈরি করতে পেরেছিলেন। প্রতি বছর চমকে ভরিয়েছেন নিজের প্রতিমা। আবক্ষ মূর্তি গড়ে চমকে দিয়েছেন সাহেবদের। উপহার পেয়েছেন অটো রিভলভিং মরিস গাড়ি। আর কুমারটুলির পুজোকে দিয়ে গেছেন নিত্যনতুন পরীক্ষা নিরীক্ষার উদ্দীপনা ।