নিজস্ব প্রতিবেদন: রাস্তায় এলোপাথাড়ি বোমা-গুলি, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু, রাস্তার ধারে একের পর এক দোকানে আগুন, ভাঙচুর, ধারালো অস্ত্র হাতে এলাকায় উন্মত্ত দাপাদাপি, বিরোধীদের তুলে নিয়ে গিয়ে ‘মারধর’, সংঘর্ষ, প্রাণ বাঁচাতে এলাকা থেকে বেপাত্তা নিরীহ গ্রামবাসী--সোমবার বর্ধিত মনোনয়নের দিনে বীরভূমের খণ্ডচিত্র এমনটাই। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই সব ঘটনার জেরে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে প্রশাসনের ভূমিকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে তাঁর জেলায় এতকিছু ঘটে গেলেও বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল নিজস্ব ভঙ্গিতে এদিনও অকাঠ্য যুক্তি দিলেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, সংঘর্ষের কোনও ঘটনাই ঘটেনি বীরভূমে। তবে অস্ত্র হাতে টহলদারি কেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে অনুব্রত যা বলেন তা শুনে তাজ্জব সকলে। অস্ত্র হাতে চহলদারি নিয়ে প্রশ্ন করায় এদিন বীরভূমের কেষ্টদা বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষদের প্রত্যেকেরই বঁটি, কাটারি থাকে। কিন্তু গ্রামে যেহেতু শান দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই সেগুলিকে শান দিতেই গ্রামের মানুষ বাইকে চড়ে বেরিয়েছেন।’’ 


মনোনয়ন ঘিরে বীরভূমের খণ্ডচিত্র এক ঝলকে দেখে নিন...


সিউড়ি ১ নম্বর ব্লক, বেলা সাড়ে ১২.৩০ টা-
মনোনয়ন জমা ঘিরে সোমবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বীরভূমের একাধিক এলাকা। এদিন অগ্নিগর্ভ চেহারা নেয় সিউড়ির ১ নম্বর ব্লক। মূলত গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। সোমবার বেলায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন যুবক। সকাল থেকেই এলাকা ছিল থমথমে, রাস্তায় লোক সংখ্যাও ছিল অন্য দিনের তুলনার কম। অভিযোগ, আচমকাই তাঁদের লক্ষ্য করে আচমকা শুরু হয় এলোপাথাড়ি গুলি। আর তাতে বুকে গুলি লাগে দিলদার নামে এক ব্যক্তির। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। রাস্তার ধারে একাধিক দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। ওই অবস্থাতেই প্রাণে বাঁচতে এলাকা থেকে চম্পট দেন স্থানীয়রা।  


অভিযোগ, জ্বালিয়ে দেওয়া দোকানগুলির মালিকদের কেউই কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তবু রাজনৈতিক সংঘর্ষের রোষে পড়তে হয়েছে আপাত নিরীহ গ্রামবাসীদেরও। এদিকে, নিহত যুবকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। বিজেপি দাবি করে নিহত যুবক তাদের সদস্য। কিন্তু, শাসকদল তা মানতে নারাজ। এলাকায় এই মুহূর্তে চরম উত্তেজনা, মোতায়েন কার হয়েছে পুলিস বাহিনী।


আরও পড়ুন: ফেসবুকে শাঁখা সিঁদুর পরা ছবি দেখেই তরুণীকে হবু স্বামীর ফোন! তারপর...


ইলামবাজার, বীরভূম-
সংঘর্ষের খবর আসে বীরভূমের ইলমবাজার থেকেও। পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি প্রার্থী গৌতম লোহারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে গ্রামের ক্যানেল পাড়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। 


অন্যদিকে, মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে আক্রান্ত বিজেপি মোর্চার সভাপতি দীপঙ্কর রুজ। লাঠি দিয়ে মারধরের অভিযোগ বিজেপি নেতাকে। জেলা জুড়ে শাসক দলের দাপাদাপি বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও অনুব্রত মণ্ডল নির্বিকার। তিনি বরং বলেছেন, ‘‘বীরভূমে কোনও হিংসা নেই...বিজেপি মনোনয়ন জমা দিতে চাইলে আমার কাছে আসুক, আমি ব্যবস্থা করে দেব।’’


আরও পড়ুন: মামলা পিছু ছাড়ছে না পঞ্চায়েত ভোটের!
মুরারই, বীরভূম-
মুরারইতেও বিরোধীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে।


মনোনয়ন নিয়ে যেকোনও সমস্যা এড়াতে বীরভূম জেলা প্রশাসন তত্পর ছিল। কড়া নির্দেশ ছিল নির্বাচন কমিশনের। পুলিসি বলয়ের মধ্যে থেকেছে প্রশাসনিক চত্বর। কিন্তু বীরভূম প্রশাসনের এই উদ্যোগও যে যথেষ্ট ছিল না, তারই প্রমাণ মিলল ১ ব্যক্তির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।