অরূপ লাহা: আকাশ থেকে মাছ পড়ার গল্প কাল্পনিক হতে পারে। কিন্তু আকাশ থেকে এটিএম কার্ড পড়েছে পূর্ব বর্ধমানে। যা নিয়ে এখন তোলপাড় প্রশাসন থেকে ব্যাংক সকলেই। আর এটিএম কার্ডের মালিকরা পড়েছেন মহা ফ্যাসাদে। তাঁদের মাথায় এখন আকাশ ভেঙে পড়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তাঁরা হন্যে হয়ে ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন কিংবা ব্যাংকের দরজায় ঘুরলেও কোনও সুরাহা হয় নি। ফলে তাদের বিপদ বাড়ছে। প্রশাসনের গাছাড়া  মনোভাবের উপরে ব্যাংক আবার এই কার্ডের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে।


তাই এখন অতান্তরে বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষের কালনা গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা কিছুই জানেন না। তাঁরা কোনও দিন এটিএম কার্ড তো দূরের কথা অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংকের দরজায় যান নি অথচ তাদের নামে গোছাগোছা এটিএম কার্ড। গোল বেঁধেছে এখানেই।


ঘটনার সূত্রপাত মাস পাঁচ ছয় আগে। হঠাৎই একজন ক্যুরিয়ার বয়, এক ব্যাগ এটিএম কার্ড নিয়ে কালনা গ্রামে হাজির হন। কিন্তু কার্ড ভর্তি খামের উপর গ্রাহকের নাম ঠিকানা মিললেও ফোন নম্বর মিলছিল না। ক্যুরিয়র বয় খামের উপর যে মোবাইল নম্বর ছিল সেই নম্বরে ফোন করলে ফোনে কাউকে পাচ্ছিলেন  না।এদিকে গ্রামে ব্যাগ ভর্তি এটিএম কার্ড খুলতেই গ্রামের বাসিন্দারা অবাক হয়ে যান। দেখা যায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের বর্ধমান শহরের কার্জনগেটের পাশে সিটি টাওয়ারে অবস্থিত শাখা থেকে কার্ডটি গুলি পাঠানো হয়েছে।


আরও পড়ুন: Bankura: রডের বদলে বাঁশের বাতা দিয়ে ঢালাই ঠিকাদারের, কাজ বন্ধ বাঁকুড়ায়


গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন তাঁদেরকে বলা হয় যে তাদের অ্যাকাউন্ট আছে ওই ব্যাংকে। তাই তাদের মানে গ্রাহকদের নামে এটিএম কার্ড এসেছে। আরও অদ্ভুত বিষয় হল এটি প্রথম কার্ড নয়। প্রথম বার এটিএম কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এবার দ্বিতীয় বার এটিএম কার্ড এসেছে। অথচ গ্রামবাসীরা পরিষ্কার দাবী করেন, তাঁরা কোনদিনই ওই বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেন নি।


গ্রামবাসী সেখ মতিউর রহমান বলেন, তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে ব্যাংকে গেলে প্রথমে তাদেরকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনও পাত্তায় দেয় নি। পরে আরও বেশী লোকজন নিয়ে ব্যাংকে গেলে ব্যাংকের ম্যানেজার জানান, ‘আপনাদের নামে এখানে অ্যাকাউন্ট আছে। তাই এটিএম কার্ড গিয়েছে বাড়িতে’।


তাঁরা আরও জানতে পারেন, গত কয়েক বছরে এক একজনের একাউন্টের মাধ্যমে মোটা টাকার লেনদেন হয়েছে। অথচ গ্রামের মানুষজন পুরো অন্ধকারে।


ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেখানো হয়, তাদের পাসবুকে তাদের ছবি। সেখ মতিউর রহমান বলেন, ‘কেউ মাঠে একশোদিনের কাজ করছে, কেউ বাড়িতে রান্না করছে, আবার কেউ গোয়ালে কাজ করছে সেই অবস্থার ছবি দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে’।


গ্রামের বাসিন্দারা এরপর প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। তবে তাতে এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয় নি। পাঁচ মাস ধরে নাকি তদন্ত চলছে।


আরও পড়ুন: Asansol Shootout: উত্তপ্ত আসানসোল! টোটো পার্কিংকে কেন্দ্র করে গুলি দোকান মালিককে


এই বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে।


বিরোধীরের দাবী এই গোটা ঘটয়ায় শাসকদলের নেতারা জড়িত। তাঁরাই এই সব কারসাজি করেছেন।


বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘দক্ষিণ দামোদর এলাকায় যেমন প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হয়। তেমনি এখানে বহু সংখ্যক রাইস মিল আছে। একশ্রেণির অসাধু রাইসমিল মালিক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে যোগসাজশ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের নামে অবৈধ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। সঠিক তদন্ত হলে আসল রহস্য বের হবে’।


একই দাবী করেন সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই ঘটনায় জড়িত’। তিনিও সঠিক তদন্তের দাবী করেন।


খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম জানান, এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আসবে।


জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, ‘অভিযোগ জমা হয়েছে। পুলিস তদন্ত শুরু করেছে’।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)