‘মুখে কালো কাপড় বেঁধে গুলি চালিয়েছে পুলিস’, বুক চাপড়ে কেবল বুলি আউড়ে চলেছেন তাপসের মা
তরতাজা ছেলেটাকে হারিয়ে এখন কথার বলার শক্তি নেই বর্মন পরিবারের।
নিজস্ব প্রতিবেদন: এখনও বাড়ির সামনে পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্তের দাগ। শুকিয়ে গিয়ে কালচে হয়ে গিয়েছে। এখনও রাস্তায় পড়ে রয়েছে তাপসের এক পায়ের চটি। তাপস বর্মন- ইসলামপুরের দাঁড়িভিট হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলনের দ্বিতীয় বলি।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর গুপ্তরোগ, বন্ধুর কথা শুনে রাস্তায় স্ত্রীর পিছনে হাঁটছিলেন স্বামী-তাতেই কাজ হাসিল!
তাপসও স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নন তিনি। স্কুলের সামনেই তাঁর বাড়ি, আর বাড়ির সামনে মিষ্টির দোকানে। দোকানে রাজমিস্ত্রি কাজ করছিলেন। সেই কাজরই তদারকি করছিলেন তাপস। আচমকাই ওপর প্রান্ত থেকে গুলি এসে লাগে তাঁর বুকে। এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় শরীরটা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কে গুলি চালিয়েছিল? কেন? কোনও আন্দোলন, বিক্ষোভ, অশান্তির মধ্যে না থেকেও কেন মরতে হল তরতাজা ছেলেটাকে? উত্তর হাতরাচ্ছে তাপসের পরিবার। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে তাপসের। রক্তে ভেসে যাওয়া ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে হাসপাতাল-বাড়ি করেছেন মা। তাঁর শাড়িতেও এখনও লেগে রক্তের দাগ। মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। আর যখনই জ্ঞান ফিরছে কেবলই বলে চলেছেন, ‘পুলিসের গুলিতেই মরে গেল আমার ছেলেটা...’
জি২৪ ঘণ্টার প্রতিনিধি কথা বলেছিলেন তাপসের মায়ের সঙ্গে। কে গুলি চালিয়েছিল, প্রশ্ন করতেই এক নাগাড়ে তিনি বললেন, ‘পুলিস গুলি চালিয়েছিল, মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল।’ তাপসের মায়ের কথায় উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি বলেন, ‘মুখে কালো কাপড় বেঁধে গুলি ছুড়েছিল পুলিস। যে লোকটা গুলি চালিয়েছিল, সে নীল রঙের পোশাক পরে ছিল। পুলিসের সঙ্গে এসেছিল, না র্যাফের সঙ্গে এসেছিল, তা বলতে পারব না। তবে ও পুলিস। র্যাফের গায়ে বড় বড় লেখা ছিল। ওদের গায়ে কিছু লেখা ছিল না।
তরতাজা ছেলেটাকে হারিয়ে এখন কথার বলার শক্তি নেই বর্মন পরিবারের। চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে তাপসের মা, এক নিমেশে যেন গোটা পৃথিবীটাই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে তাঁর কাছে। শুধু একটাই আফসোস, ‘কেন দোকানের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলি তুই… না হলে তো ছেড়ে যেতিস না!’