নিজস্ব প্রতিবেদন:  ট্রেনের কামরার মতন ক্লাসরুম। ক্লাসের বাইরে বারান্দা যেন প্ল্যাটফর্ম। ঝাঁকে ঝাঁকে শিশুর দল ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামছে। আবার প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে উঠছে। জানা আর শেখার রেলঝমঝম জার্নি তমলুকের এক প্রাইমারি স্কুলে। তমলুক স্টেশনে দাঁড়িয়ে হাওড়া-দিঘা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস। ঝাঁ চকচকে কামরা। কামরার বাইরে জ্বলজ্বল করছে যাবতীয় ডিটেলস্। হঠাত্‍ দেখলে মনে হবে, রেলগাড়িতে চড়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে এসেছে পড়ুয়ারা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

তমলুকের পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতানুগতিক শিক্ষার একঘেয়েমি কাটাতে এখানে অভিনব উদ্যোগ। শিশুমনের কথা মাথায় রেখে, রেলগাড়ির কামরার আদলে সাজানো হয়েছে ক্লাসরুম। বারান্দা জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তমলুক স্টেশন। কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তমলুকের পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা অন্য রকম ভাবে ভেবেছেন। ফল মিলেছে হাতেনাতে। কোনও স্কুলছুট নেই। ছেলেমেয়েরা রোজ স্কুলে আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। এমনকি ঘোর বর্ষাতেও মায়েরা সন্তানদের নিয়ে স্কুলে চলে আসেন।


তমলুকের এই প্রাইমারি স্কুল মনে পড়াচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের এক স্কুলের কথা। ১৯৩৭ সালে টোকিওতে ট্রেনের পুরনো কামরায় স্কুল খুলেছিলেন শিক্ষাবিদ সোসাকু কোবায়শি। পড়ুয়াদের বেশির ভাগই ছিল বিশেষ ভাবে সক্ষম। কোবায়শি বিশ্বাস করতেন, কোনও শেকল দিয়ে জানা আর শেখাকে আবদ্ধ রাখা যায় না। শিক্ষা হবে রেললাইনের মতন সমান্তরাল, যা কোনও দিন এক বিন্দুতে মিশবে না। এমন ভাবনা থেকে রেলগাড়ির কামরায় চালু হয়েছিল ক্লাসরুম। টোকিওর ওই স্কুলের নাম ছিল "তোমিও গওকন।' শেখা আর জানা, দুই লৌহপথের ওপর দিয়ে অনন্ত যাত্রা। ট্রেনের কামরায় ক্লাসরুম ছিল দারুণ ভাবে প্রতীকী।


আরও পড়ুন- ঘূর্ণাবর্তের বাধা কাটিয়ে ফের ফিরছে শীতের আমেজ


কোবায়শি বিশ্বাস করতেন, ছোটরা ভালবেসে যা পড়তে চাইবে, তাদের সেই সুযোগ দেওয়া উচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় কোবায়শির রেলগাড়ি স্কুল। পরে ওই স্কুলেরই স্টুডেন্ট তেতসুকো কুরোইয়ানাগি তাঁর স্মৃতিকথা নিয়ে লিখেছিলেন "তোত্ত-চান, দ্য লিটল্ গার্ল অ্যাট দ্য উইন্ডো'। সারা বিশ্বে সমাদৃত সেই বই। কেরলের পেরুরে DVUPS থজহথু কুলক্কড় নামে একটি স্কুলে ক্লাসরুম সেজে উঠেছে ট্রেনের কামরার আদলে। একই আদর্শে ছকভাঙা পথে হাঁটল পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়। যুদ্ধের গোলা বারুদ অনেক কিছু ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু সব কিছুকে বোধহয় চিরতরে মুছে ফেলতে পারে না। তাই টোকিওর স্কুল কখনও ফিনিক্স পাখির মতন জেগে ওঠে কেরলার পেরুরে। কখনও আবার এই বাংলার তমলুকে।