পুরীর রথযাত্রা বিশ্বময় আলোচিত। সেই রথের রশি টানার জন্য দেশ বিদেশ থেকে রথযাত্রার দিন  লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয় পুরীতে। কিন্তু কম নস্টালজিক নয় কলকাতার বাগবাজারের বলরাম মন্দিরের রথযাত্রা। ছোট্ট একটা রথ। কিন্তু এই রথটির নেপথ্যে রয়েছে শিহরণ জাগানো এক ইতিহাস । 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেমন বলরাম মন্দিরের রথের সেই ইতিহাস


বললাম বসু। শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরহমংস দেবের একজন শিষ্য। কলকাতায় এলে বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে কখনও কখনও রাত কাটাতেন। এই বলরাম বসুর বাড়িতে রথের দিন উৎসব হত। রথের আকৃতি ছোট হলেও বলরাম বসুর বাড়ির রথযাত্রার বেশ নামডাক ছিল। রথটি ১৮৮৪ সালে ৩ জুলাই বাংলার আবেগের সঙ্গে অতোপ্রতভাবে জড়িয়ে গেল। সেদিন ছিল উল্টোরথ। হঠাৎ ঠাকুর রামকৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের নিয়ে হাজির বলরাম বসুর বাড়িতে। নাচ গানের মাধ্যমে এই ছোট্ট রথের রশি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন ঠাকুর।


আরও পড়ুন: করোনায় ঘরবন্দি মানুষ, লকডাউনে মাসির বাড়ি যাওয়া হল না জগন্নাথেরও!


ভক্তদের নিয়ে বলরাম বসুর বাড়ির রথ টেনেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ। পরের বছর রথের দিন আবার আসেন ঠাকুর। রথের রশিতে টান দিয়েছিলেন। কয়েকটি শতাব্দী চলে গেলেও ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের টানা সেই ছোট্ট রথটি আজও রথযাত্রার দিন আলাদা গুরুত্ব পায় অগনিত ভক্তদের হৃদয়ে। ঠাকুর দেহ রাখার পর বলরাম বসুর নির্দেশে ১৮৮৬-র ১৬ আগস্টের পর থেকে এই ছোট্ট রথে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার সঙ্গে পূজিত হন ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। এই বলরাম বসুর বাড়ির মধ্যেই ঘোরানো হত।


তবে  ঠাকুর দেহ রাখার পর বলরাম মন্দিরের জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মাসির বাড়ি হল রামকৃষ্ণদেব বাড়ি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঠাকুর তিনমাস বাগবাজারের যে বাড়িতে ছিলেন সেই বাড়িটি বর্তমানে একটি মন্দির। সেই মন্দিরটি বর্তমানে বলরাম মন্দিরের জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি বলে বিবেচিত হয়।


আরও পড়ুন: লকডাউনে কীভাবে পালিত হল ইসকনের রথযাত্রা? দেখুন ছবিতে


বেলুড়মঠের সঙ্গে বলরাম মন্দিরের সম্পর্ক


ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব যেহেতু নিজে  বলরাম মন্দিরের রথের রশি টেনে ছিলেন, তাই প্রতি রথযাত্রার দিন বেলুড়মঠের সন্ন্যাসীরা এই বলরাম মন্দিরে আসেন। প্রায় আড়াই শতাব্দী ধরে রথযাত্রার দিন এই রীতি মেনে আসছেন বেলুড়মঠের সন্ন্যাসীরা। 


বলরাম মন্দিরের নামকরণের ইতিহাস


ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব দেহ রাখার চার বছর পর ইহলোক ছেড়ে পরলোকে যান বলরাম বসু কথিত আছে ১৮৯০ সালে ১৩ এপ্রিল স্বামীর মৃত্যুশয্যায় বলরাম বসুর স্ত্রী কৃষ্ণাভাবিনী দেবী অন্দরমহল থেকে দেখতে পান রামকৃষ্ণদেব একটি রথ নিয়ে তাদের বাড়ির ছাদে নামেন। তারপর সেই রথে শিষ্য বলরাম বসুকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। এরপরই বলরাম ভবনের নাম বদলে নামকরণ করা হয় বলরাম মন্দির। 


আজ রথের দিন অচেনা ছবি বলরাম মন্দিরে


করোনা আবহে বলরাম মন্দিরে রথযাত্রার দিন এই প্রথম অচেনা ছবি। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবর স্পর্শ করা ছোট্ট রথের রশি টেনে ভক্তরা প্রতি বছর পূণ্য অর্জন করতেন।  সেই নস্টালজিয়াতে পর্দা টেনে দিয়েছে কোভিড ১৯। নিয়ম মেনে আচারবিধি ও জগন্নাথের পুজো হলেও এবছর মন্দিরের অন্দরে ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ ।