দিব্যেন্দু সরকার: আজ থেকে প্রায় ৭০/৮০ বছর আগেকার কথা। তখন এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন বরাবরের বন্যাকবলিত এক এলাকা। আরামবাগের সাহাপুর। প্রত্যন্ত এক গ্রাম। রাজা রামমোহন রায় সরনির পাশে এই গ্রাম। এ গ্রামে তৎকালীন সমাজ ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে কন্যারা ছিল ব্রাত্য। তাঁরা যেন উপেক্ষিত, অবহেলিত ও নিপীড়িত ছিলেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Lakshmi Puja: সিংহবাড়ির ৪০০ বছরের প্রাচীন লক্ষ্মীপুজোয় ১০ টাকায় হত রাতভর যাত্রা...


কিন্তু সাহাপুরের ঘোষ পরিবার ছিল সেই সময়ের নিরিখে ব্যতিক্রমী উদার এক পরিবার। যে পরিবারে কন্যাদের সম্মান করাই ছিল নিয়ম। হলে কী হবে, এ পরিবারে কোনও কন্যাসন্তান ছিল না! পরিবারের তৎকালীন কর্তা কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষের পর পর আট পুত্র জন্ম নিয়েছিল। কোনও কন্যাসন্তান হয়নি। কন্যাসন্তান না হওয়ায় পরিবারে সুখ ছিল না। এদিকে, পরিবারের কর্তা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ নিষ্ঠাবান সৎ মানুষ। তাঁর যাতে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয় সেজন্য দেবতার কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। শোনা যায়, মা লক্ষ্মী তাঁকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন। স্বপ্নে দেবী বলেছিলেন, 'আমাকে প্রতিষ্ঠা কর। আমার পুজো কর। তোর মনস্কামনা পূরণ হবে। তোদের বংশে আমি আসছি। কন্যা রূপেই।'


আর ঠিক যেন তাই হল। এর পরে অলৌকিক ভাবেই কৃষ্ণচন্দ্র ঘোষের বন্ধু-বান্ধবেরা লক্ষ্মীপুজোর সময়ে লক্ষ্মীপ্রতিমা নিয়ে হাজির হন। তারপর দেবী লক্ষ্মীকে কন্যারূপে পুজো করতে শুরু করেন কৃষ্ণচন্দ্র। আর কী আশ্চর্য! এর পরেই তাঁর এক কন্যাসন্তানের জন্ম হল। তবে সেই কন্যাসন্তান বেশিদিন এই ধরায় থাকল না। কিন্তু মা লক্ষ্মী এই পরিবারে রয়েই গেলেন, রয়ে গেলেন কন্যারূপে। সেই থেকে আজও ঘোষ পরিবারে মা লক্ষ্মী কন্যারূপেই পূজিতা হন।


অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দুর্গা পুজোর মতোই চারদিন ধরে লক্ষ্মীপুজো হয় এই পরিবারে। এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড়, খেলা, প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-- সব মিলিয়ে ঘোষ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা হয় গোটা সাহাপুরই। এই পরিবারের সদস্যরা লক্ষ্মীপুজোর চারটে দিন কোথাও যান না। একসঙ্গেই থাকেন। 


মহিলারা এই পুজোয় বিশেষ অংশগ্রহণ করেন। বলতে গেলে এই পুজোর সবটুকু করেন মহিলারাই। এই পরিবারে পুরুষের থেকেও মহিলাদেরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবারের গৃহবধূরাও নিজেদের ধন্য ও গর্বিত বলে মনে করেন। কারণ, তাঁরা বলেন, তাঁরা মা লক্ষ্মীর উপস্থিতি বুঝতে পারেন। লক্ষ্মীর মাহাত্ম্য যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। 


আরও পড়ুন: Lakshmi Puja: বুনোহাতির কবল থেকে বাঁচতে এখানে ১০০ বছর ধরে চলছে গজলক্ষ্মীর পুজো...


সেই বিশ্বাস আর সাবেকিয়ানার ওপরে নির্ভর করেই আজও এই পরিবার নিষ্ঠার সঙ্গেই মা লক্ষ্মীর পুজো করে চলেছে। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই এই পুজো করে আসছে এই পরিবার। এই পরিবারের বর্তমান সদস্যদের দাবি, জীবনের সব ক্ষেত্রে যতই আধুনিকতার ছোঁয়া আসুক না কেন, তাঁদের পরিবারে মায়ের আগমন হলেই তাঁরা আগের স্মৃতিভরা দিনগুলিতেই ফিরে যান। কেননা, তাঁরা মনে করেন, সাবেকিয়ানার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আনন্দের অনুভূতি।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)