গিনেস বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুলতে আগুন দিয়েও ছবি আঁকছেন সমরেশ
কখনও মুখে তুলি নেন, কখনও হাতে, কখনও পায়ে, কখনও বেঁধে নেন মাথায়-- তারপর সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন ছবির পর ছবি। ছবি আঁকেনও অতি দ্রুত। মাত্র ২ মিনিট। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২২টি তুলি বেঁধে তিনি অবলীলায় এঁকে ফেলেন ফুল বা সিংহ।
নকীব উদ্দিন গাজী
সাদা ক্যানভাসে রঙিন তুলির টানে তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের স্বপ্ন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছুটেও চলেছেন তাঁর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সমরেশ মাইতি। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে লডছেন।
তবে ইতিমধ্যেই সমরেশ নিজের নাম নথিভুক্ত করেছেন 'ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ড'সে। নাম নথিভুক্ত করেছেন আঁকার কঠিন কৃৎকৌশলের সূত্রেই। দারিদ্র্য উপেক্ষা করে কঠিন অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। এবার তাঁর লক্ষ্য গিনেস বুক। সেখানে নিজের নাম তুলতে এবার মরিয়া তিনি।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপ পাথরপ্রতিমা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গা অঞ্চল দক্ষিণ গোবিন্দপুরের এক চিলতে বাড়িতে বাস চিত্রকর সমরেশ মাইতির। শিশুদের আঁকা শিখিয়েই যৎসামান্য উপার্জন করে সংসার চলে তাঁর। তবু দমে যাননি।
সমরেশের ছবি আঁকার কৌশল অবশ্য আর পাঁচজন চিত্রশিল্পীর মতো নয়। তিনি কখনও মুখে তুলি নেন, কখনও হাতে, কখনও পায়ে, কখনও বেঁধে নেন মাথায়-- তারপর সাদা ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নানা ছবির পর ছবি। ছবি আঁকেনও অতি দ্রুত। মাত্র ২ মিনিট। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ২২টি তুলি বেঁধে তিনি অবলীলায় এঁকে ফেলেন ফুল বা সিংহ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এখানেই থেমে থাকেননি সমরেশ। আগুন জ্বালিয়ে সাদা ক্যানভাসে আঁকার আশ্চর্য পদ্ধতিও রপ্ত করেছেন তিনি।
নিজের এই নানা আঙ্গিকে ছবি আঁকার বিষয়ে সমরেশবাবু কথা বলেন। কথা বলেন তাঁর লড়াই ও স্বপ্ন নিয়েও। সমরেশ জানান, খুব ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই শুরু তাঁর। দারিদ্র তাঁর নিত্যসঙ্গী। তবু স্বপ্ন দেখেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে তিনি বলেন, আগামী দিনে কতটা এগোতে পারব জানি না, কিন্তু অনুশীলন চালিয়ে যাব। সরকার যদি আমার পাশে থাকে তাহলে স্বপ্নপূরণ করতে পারব বলেই বিশ্বাস।
কিন্তু কেন এভাবে ছবি এঁকে চলেছেন তিনি?
তাঁর অবশ্য শারীরিক কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষদের ছবি আঁকা দেখেই আসলে অনুপ্রাণিত হন সমরেশ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে তিনিও ছবি আঁকার কৌশল রপ্ত করেন। চলে কঠিন অনুশীলন।
সমরেশের সত্তরোর্ধ্ব মা জানান, 'কোনওরকমে এক চিলতে ঘরে বসবাস করি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যে কোনো দিন উড়ে যাবে ঘরের চাল। ছেলেদের যৎসামান্য উপার্জনে টেনেটুনে চলছে সংসার। সরকার আমাদের পাশে দাঁড়ালে সংসারটা বাঁচে।'
সমরেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য গৌতম পাত্র। তিনি জানান, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার প্রতিভা সমরেশ। অভাবের জন্য এরকম একজন চিত্রশিল্পী হারিয়ে যাবেন, সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। সমরেশ যাতে তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে পারেন সেজন্য পঞ্চায়েতের তরফ থেকে তাঁকে সবরকম সাহায্য করা হবে।
সমরেশ কি পারবেন তাঁর স্বপ্নপূরণ করতে? সেটা অবশ্য শুধু সময়ই বলতে পারে। আপাতত অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: Mamata In Asansol: তিস্তা আর জুবেরকে গ্রেফতার করা হল কেন? আসানসোলে বিজেপিকে তোপ মমতার