নিজস্ব প্রতিবেদন: ২৯ মাসের ব্যবধানে দু'বার উদ্বোধন হল একই শীতল পানীয় জল প্রকল্প। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ব্যানার ঝুলিয়ে ঘটা করে উদ্বোধন হয়। আর দ্বিতীয়বার একেবারে চুপিসারে শুধুমাত্র প্রকল্প কাজের দেওয়ালের ফলকে লেখা থাকা অর্থ প্রাপ্তির তথ্য ও উদ্বোধনের তারিখ মুছে দিয়েই হয়ে যায় উদ্বোধন। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের এই কীর্তি প্রকাশ্যে আসতেই প্রকল্পের কাজে নিয়ে উঠেছে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। সেটা নিয়ে স্বোচ্চার হয়েছে বিরোধীরাও


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

প্রচণ্ড গরমে পথ চলতি মানুষজন যাতে রাস্তার ধারেই শীতল পানীয় জল পান সেই বিষষে উদ্যোগী হয় জামালপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত। এই কাজের জন্য তারা স্থানীয় হাড়ালা এলাকার বিপদতারিণী মন্দির সংলগ্ন জায়গা বেছে নেয়। মন্দিরটি মেমারি- তারকেশ্বর সড়কের ধারে। এই মন্দিরে প্রতিদিন প্রচুর ভক্ত ও পুণ্যার্থী যেমন পুজো দিতে আসেন তেমনই প্রণাম জানানোর জন্য যানবাহনের চালকরাও সেখানে গাড়ি দাঁড় করান।


২০১৯ সালে শুরু হয় বিপদতারিণী মন্দিরের সামনে শীতল পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ ।প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবার পর ওই বছরেরই ২২ অক্টোবর জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। ওই জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া একটি ব্যানারও ঝোলানো হয় । তাতে প্রকল্পের বিষয়ে সব তথ্য উল্লেখ করা থাকে ।


জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ওই দিন শীতল পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার,পঞ্চায়েত প্রধান ডলি নন্দী ও উপ-প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শীতল পানীয় জল প্রকল্পের দেওয়ালে যে ফলক লাগানো হয়েছিল তাতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের নামও বড়বড় অক্ষরে লেখা থাকে। এছাড়াও জনগনের জ্ঞাতার্থে ওই প্রকল্পের দেওয়ালে লেখা থাকে ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষে পঞ্চায়েত তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই শীতল পানীয় জল প্রকল্প গড়ে তুলেছে।


কিন্তু প্রায় তিন বছর বাদ চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে হাড়ালা এলাকায় শোরগোল ফেলে দেয় ওই শীতল পানীয় জল প্রকল্প। হাড়ালার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন ,২০১৯ সালে প্রকল্পের উদ্বোধনের সময়ে তার দেওয়ালে এবং ফলকে লেখা ছিল পঞ্চায়েত তার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি গড়ে তুলেছে। তখন প্রকল্পের উদ্বেধনের তারিখ লেখা ছিল ২২-১০-২০১৯। 


আরও পড়ুন: Lakhimpur Kheri: বাতিল Ashish Mishra-র জামিন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করতে হবে ১ সপ্তাহের মধ্যে


কিন্তু সম্প্রতি ওই ফলকে লেখা থাকা নানা তথ্য রাতারাতি বদলে দেওয়া হয়। এখন ফলকে দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিলের অর্থে বিনিময়ে তৈরি হওয়ার বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে ফলক থেকে। পরিবর্তে সেখানে লিখে দেওয়া হয়েছে ১৫ তম সেন্ট্রাল ফিনান্স কমিশনের (সি এফ সি ) অর্থে প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছে । এছাড়াও প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ ২২-১০-২০১৯ মুছে দিয়ে সেখানে ২২-০৩-২০২২ লিখে দেওয়া হয়েছে।


হাড়ালার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন,ফলকের লেখা এই ভাবে চুপাসাড়ে বদলে দেওয়া থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে এই প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বাসিন্দারা আরও জানান, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন এই একই প্রকল্পের জন্য চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত নতুন করে ওয়ার্ক অর্ডার পাশ করায়। আর ওই ওয়ার্ক অর্ডার পাশ করিয়েই ১৫ তম সেন্ট্রাল ফিনান্স কমিশনের তহবিল থেকে ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৩০ টাকা তারা হাতিয়ে নিয়েছে। 


এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, এখানে কোনও বেনিয়ম হয়নি। ভোটের জন্য সেই সময় পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা খরচ করে প্রকল্পের কাজ করে। কিন্তু পরবর্তী কালে নোডাল অফিসার তথা বিডিওর উপস্থিতিতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নিজস্ব তহবিলের পরিবর্তে ১৫ তম অর্থ কমিশনের টাকায় কাজটি করা হবে। তাই প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে বলে দেবু টুডুর জানিয়েছেন। বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, দুর্নীতি হয়েছে তা প্রমাণিত। কারণ বেনিয়মের কথা বলছেন খোদ তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)