নিজস্ব প্রতিবেদন : সুস্থ সমাজ গড়ার কারিগর অপূর্বলাল সাহা। পেশায় কলকাতার একটি নামী স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক। পেশাগত কারণে দমদমে থাকলেও পৈত্রিক বাড়ি নদীয়ার শান্তিপুরের ঢাকাপাড়ায়। মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর আগেই শান্তিপুরে চলে আসেন তিনি। পরিযায়ী শ্রমিকেরা ঘরে ফেরার পর অপূর্ববাবু উপলব্ধি করেন করোনা আবহে এরা বড় অসহায়। এখন লকডাউনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ । তাই ঘরে বসে না থেকে নিজেই খুঁজে নিলেন সুস্থ সমাজ গড়ার  কাজ। করোনা ভীতি এবং সমস্ত প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে এলাকার মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন "শান্তিপুর করোনা প্রতিরোধ মঞ্চ।" এই মঞ্চের প্রতিটি সদস্য এখন সমস্ত সুরক্ষা অবলম্বন করে বুকে নানা স্লোগান লিখে রাস্তায় নেমে কাজ করছেন।  লক্ষ্য একটাই করোনামুক্ত শান্তিপুর গড়ে তোলা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এই মঞ্চের কর্ণধার শিক্ষক অপূর্বলাল সাহা জানান," করোনা মোকাবিলায় লকডাউন শুরু হওয়ার পর দেখলাম সাধারণ মানুষ দিশেহারা। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকরা অসহায়। শান্তিপুর জুড়ে আতঙ্ক এবং খাদ্যাভাব গ্রাস করছে। তখন ঠিক করলাম ভয় পেলে চলবে না। পথে নেমে এর মোকাবিলা করতে হবে। পাশে পেয়ে গেলাম এলাকার মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের। প্রথমে আমার নিজের ওয়ার্ড ২ নম্বর দিয়ে কাজ শুরু করলাম। এই ওয়ার্ডের সমস্ত বাসিন্দাদের পুরসভার খাদ্যসশ্য,স্যানিটাইজার এবং মাস্ক দিলাম। তারপর শান্তিপুর পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডের ১০২২ কর্মীকে স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং খাদ্যশস্য দেওয়া হল। এবার শান্তিপুরের সমস্ত বাজারে দোকানদার এবং পথচারীদের স্যানিটাইজার এবং মাস্ক দেওয়া শুর হল। সেইসঙ্গে ওয়ার্ডভিত্তিক এলাকা ধরে ধরে সপ্তাহে দুদিন করে এলাকা স্যানেটাইজ করা হয়। তারপর আমরা শান্তিপুরের সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতালগুলোকে নিয়ম করে স্যানিটাইজ করা শুরু করি। আমাদের একটাই লক্ষ্য করোনাকে জয় শান্তিপুরকে করোনা মুক্ত করা। যতদিন গোটা শান্তিপুর করোনা মুক্ত না হচ্ছে ততদিন আমাদের মঞ্চের এই কর্মসূচি চলবে।"


গোটা দেশ যখন ঘরবন্দি, তখন  অপূর্বলাল সাহা ঘরে  বসে না থেকে শান্তিপুর জুড়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। এই বৃহত্‍ কর্মযজ্ঞে নিজের জমানো সঞ্চয় অবলীলায় খরচ করে চলেছেন তিনি। কোথা থেকে পাচ্ছেন এত টাকা? এর উত্তরে অপূর্ববাবু জানিয়েছেন, তিনি প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকার মত মাইনে পান, এছাড়া তাঁর জমানো যা অর্থ, সেটা ব্যয় করা হচ্ছে এই সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এখানেই শেষ নয় , তাঁর স্ত্রীও ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে তাঁদের এই মঞ্চকে অর্থ দান করেছেন। ইতিমধ্যেই শান্তিপুর শহরের সমস্ত ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতালে  স্যানিটাইজার মেশিন বসিয়ে দিয়েছে 'শান্তিপুর করোনা প্রতিরোধ' মঞ্চ। ৬ মাস ধরে সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন অপূর্ববাবু। ইতিমধ্যেই এই কর্মকাণ্ডে তাঁর ব্যয় হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা। অপূর্বলাল সাহার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে এসেছেন এলাকার মো-বোনেরাও। শান্তিপুর করোনা প্রতিরোধ মঞ্চে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।


আরও পড়ুন, সিট 'ফাঁকা' পড়ে, নেই বসার জন্য মারামারি! নিউ নর্মাল মেট্রোয় স্বেচ্ছায় দাঁড়িয়ে যাত্রীরা