Siliguri: বাড়ি ফেরেননি টানা ১৫ বছর; `মাটির` সাবিত্রীদেবী অবশেষে মাটিতেই মিশে গেলেন!
গ্রামসভায় সিদ্ধান্ত হয়, সাবিত্রীদেবীকে মৃতই ভেবে নিতে হবে এবং তাঁর আত্মার শান্তির জন্য তাঁর মূর্তি বানিয়ে দাহকাজ করা হবে। সেই কথামতো সাবিত্রীর তিন ছেলে রবিবার কালারাম শ্মশানঘাটে দাহকাজ করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মাটির সাবিত্রীদেবীই মিশলেন মাটিতে!
ভারতীয় বিশ্বাসে মানবশরীর হল পঞ্চভূতে গড়া। পঞ্চভূত কী কী? ক্ষিতি, অপ, তেজ মরুৎ, ব্যোম। অর্থাৎ, মাটি, জল, আলো, বাতাস, আকাশ। কোনও মানুষ প্রয়াত হলে, বিশ্বাস করা হয়, তার মরশরীর এই পঞ্চভূতেই বিলীন হয়ে যায়।
কিন্তু ঘটনাচক্রে যদি এমন মানুষের দাহ সম্পন্ন করতে হয়, যিনি প্রকৃতপক্ষে মারা গিয়েছেন বলে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই, শুধু তিনি চোখের সামনে বেশ কয়েকটা বছর ধরে নেই বলে ধরে নিতে হয়েছে তিনি মৃতা, তখন?
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ফাঁসিদেওয়া অঞ্চলের রাঙ্গাপানি স্টেশনপাড়ার বাসিন্দা সাবিত্রী চৌধুরীর ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ তিনি। কেউ ১২ বছর ধরে নিখোঁজ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মৃত ভেবে নেওয়ার একটা চল এমনিতেই আছে। এক্ষেত্রে সেটা ১২-র বেশি, ১৫! সম্ভবত এই কারণেই সাবিত্রীর পরিবার এবং তাঁর গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে মনে করে নেওয়া হয়েছে, তিনি মৃতা! তাই তাঁর মাটির মূর্তি বানিয়ে কালারাম বিষ্ণুপুর শ্মশানঘাটে দাহকাজ করা হল আজ, রবিবার।
পরিবারসূত্রে জানা যায়, সত্তর বছর বয়সে সাবিত্রীদেবী নিখোঁজ হন। তবে টানা ১৫ বছর নিখোঁজ থাকার আগেও তিনি বারকয়েক নিখোঁজ হয়েছেন, আবার বাড়িও ফিরে এসেছেন। কেন হঠাৎ করে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া শুরু করলেন?
এর একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। দীর্ঘ ২৭ বছর আগে সাবিত্রীর বাবা জয়লাল চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে সাবিত্রী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এবং বেশ কয়েকবার নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে আবার বাড়িও ফিরে আসেন। তবে ১৫ বছর আগে তিনি নিখোঁজ হওয়ার পরে আর বাড়িতে ফিরে আসেননি।
সাবিত্রী চৌধুরীর তিন ছেলে। দীর্ঘ কতগুলি বছর তাঁরা মায়ের সঙ্গচ্যুত, মায়ের স্নেহবঞ্চিত। মা ফিরে না আসায় তাঁরা গভীর মনোকষ্টে। কিন্তু এ ভাবে বিষয়টা ফেলে রাখতেও তাঁদের মন চাইছিল না। গ্রামবাসীর সঙ্গে তাঁরা আলোচনাও করেন। গ্রামে একটি সভাও বসানো হয় এ নিয়ে। সেই সভাতেই ঠিক হয়, সাবিত্রীদেবীকে মৃতই ভেবে নিতে হবে এবং তাঁর আত্মার শান্তির জন্য তাঁর মূর্তি বানিয়ে দাহকাজ করা হবে। সেই কথামতো সাবিত্রীর তিন ছেলে রবিবার কালারাম শ্মশানঘাটে দাহকাজ করেন। মাটির সাবিত্রীদেবী অবশেষে মাটিতেই মিশে গেলেন!