নিজস্ব প্রতিবেদন: বিহার পুলিসের পরিচয় দিয়ে তাণ্ডব চালাল একদল লোক। শুক্রবার সন্ধ্যেয় তারা ঢুকে পড়ে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের সাদলিচক পঞ্চায়েতের সহরাবহর এলাকায়। সেখানে রাস্তার ধারে বসবাসকারী কুড়িটি পরিবারের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়। মারধরও করা হয় পরিবারের লোকজনকে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

এদিকে, ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে  এলাকার এক তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে। দাবি করা হচ্ছে, রাস্তার ধারে তৃণমূল নেতার জমি রয়েছে। তার জমির সামনে রাস্তার ধারে বসেছিল ওইসব পরিবার। এনিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিস।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সহরাবহরা মৌজা সাদলিচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাজ্য সড়কের ধারে কুড়িটি পরিবার ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে। এদের নিজস্ব কোন জমি-জমা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি জমিতে রাস্তার ধারে কুঁড়ে ঘর বানিয়ে জীবন যাপন করছিল। অভিযোগ, ওইসব, ওইসব কুঁড়েঘরের পেছনেই ছিল এলাকার এক তৃণমূল নেতার জমি। সেই নেতা মাঝমধ্যেই এদের উঠে যাওয়ার হুমকি দিতেন। এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঝামেলা লেগেই ছিল। শুক্রবার জেসিবি দিয়ে কয়েক মিনিটে ভেঙে ফেলা হয় কুঁড়েঘর গুলি। অভিযোগ এই সময় ওই পরিবার গুলিকে ব্যাপক লাঠিপেটা করে বিহারের পুলিস। এমনকি বাচ্চা এবং মহিলাদেরও বাদ দেওয়া হয়নি। সবাই পুলিসের পোশাক পরে  এসেছিল। সবাই হিন্দিতে কথা বলছিল। এর মধ্যে অনেকেই হাতে বন্দুক ছিল।


এদিকে এই ঘটনার পেছনে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। অভিযোগ, হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার পরোক্ষ ভাবে এই কাজে জমির মালিক ওই তৃণমূল নেতাকে সাহায্য করেছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকার। সাদলিচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ওটা বিহার পুলিসের ব্যাপার। এটাতে তার কিছু করার নেই।


বিহার পুলিসের হাতে মার খাওয়া আকালু দাস জানান, আমরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। এর মধ্যেই একদল সশস্ত্র পুলিস আমাদের উপর হামলা চালায়। এরা বিহারের বিভিন্ন থানায় কর্মরত। আমাদের সমস্ত ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। ব্যাপক মারধর করে। রেহাই পায়নি মহিলা শিশুরাও। আমরা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে হরিশ্চন্দ্রপুরের এই রাজ্য সড়কের ধারে বসবাস করছি। আমাদের আধার ভোটার সমস্ত কাগজপত্র বাংলার। আমাদের ঘরবাড়ি গুলির পেছনে তৃণমূল নেতা গণেশ প্রামাণিকের জমি। সেই সূত্রে আমাদেরকে সরানোর জন্যই চক্রান্ত করে বিহারের পুলিসের সাহায্য নিয়ে আমাদের উপর এই আক্রমণ চালিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।


এদিকে এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান জানান ওই পরিবারগুলি দীর্ঘদিন ধরেই হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকাতে বাংলার সীমানাতেই বসবাস করছেন। বিহারের পুলিস এই ভাবে এসে আক্রমণ চালাবে এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। ওরা বাংলার জমিতে বসবাস করছে না বিহারের জমিতে বসবাস করছে সেটা দেখার জন্য আইন রয়েছে। বাংলার জেলা পুলিস-প্রশাসনকে না জানিয়ে এই ভাবে অতর্কিতে বাংলার মানুষের উপর বিহার পুলিসের হামলা আমরা কখনো বরদাস্ত করব না। তবে এর পিছনে তৃণমূলের কোনো হাত নেই। তৃণমুলকে ঘটনার সঙ্গে জড়াতে চাইছেন সেটা ভিত্তিহীন।


অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি জানান গরিব মানুষ গুলোর উপর তৃণমূল নেতাদের মধ্যেই এই আক্রমণ। রাস্তার পেছনের জমি তৃণমূল নেতারা কিনে নিয়েছেন। এখন জমির সামনে থেকে এই কুঁড়ে ঘর গুলি সরিয়ে দিতে হবে। তাই বিভিন্ন অজুহাতে বিহারের পুলিসের কিছু কর্মীকে ভাড়া করে এই কাজ চালিয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতারা। যে সমস্ত গরিব মানুষ এই ঘটনায় ক্ষতি-গ্রস্ত হয়েছেন বিজেপি তাদের পাশে রয়েছে। ওরা বাংলারই মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে ওরা এখানে বসবাস করছে। আমরা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের ন্যায্য লড়াই-এ প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করব।


আরও পড়ুন-মন্ত্রীর জবাবে সন্তুষ্ট নয় CBI, শনিবার সকালে ফের তলব পরেশ অধিকারীকে 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)