Midnapur: স্কুল বন্ধ, লেখাপড়া ছেড়ে নেশা-চুরিতে আসক্ত সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া, ছেলেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখল বাবা
ছেলেকে বেঁধে রাখার কারন জানাতে গিয়ে বাবুরাম কেঁদে ফেলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে
নিজস্ব প্রতিবেদন: করোনা লকডাউনের জেরে বদলে গিয়েছে পড়ুয়াদের জীবন। মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন তলকুই এলাকায় ধরা পড়ল এমনই এক ছবি।
পড়াশোনায় ডামাডোল চলায় বাড়িতে থাকতেই অসৎ সঙ্গ, নেশা, চুরিতে আসক্ত হয়ে পড়ে সনাতন সরেন নামে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। একাধিক জায়গায় এমন কাজ করার পর নিরুপায় বাবা-মা ছেলের হাতে-পায়ে-গলায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন গত ৬ দিন ধরে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গেল এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পুলিস। উদ্ধার করে তাকে পাঠানো হল পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
মেদিনীপুর শহর লাগোয়া তলকুই। এলাকার বাবুরাম সরেনের মেজো ছেলে সনাতন সরেন। বাবুরাম মেদিনীপুর পৌরসভার অস্থায়ী শ্রমিক। পরিবারে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলেরা বড় হতেই একে একে বিভিন্ন রকম শ্রমিকের কাজে লেগে পড়েছে। মেজো ছেলে সনাতন সরেন সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে। কিন্তু করোনা লকডাউন এর পরে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার জেরে বাড়িতে থেকে সে বিভিন্ন অসৎ সঙ্গে চলে যায়। পড়াশোনার থেকে শ্রম জীবন বেছে নেয় সে। সেই কাজে গিয়ে বিভিন্ন রকম নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর কাজ না করে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতো। সেই নেশার টাকা জোগাড়ে ছোটখাটো চুরিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। প্রতিবেশী থেকে বিভিন্ন লোকজন চোর অপবাদ দিয়ে সনাতনের পরিবারে অভিযোগ জানাতে থাকে। ছেলের চোর অপবাদ নিয়ে পরিবার নাস্তানাবুদ হয়ে চেষ্টা করেছিল শোধরানোর। শেষমেশ না পেরে শেকল ও তালা দিয়ে ছেলেকে হাতে পায়ে বেঁধে ফেলে রাখে পরিবার। গত ৬ দিন ধরে এভাবেই বাঁধা রয়েছে বলে সনাতনের বাবা বাবুরাম সরেন জানান।
ছেলেকে বেঁধে রাখার কারন জানাতে গিয়ে বাবুরাম কেঁদে ফেলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। তিনি বলেন-"অনেক চেষ্টা করেছি। আমি নিরুপায়, নেশা শোধরানোর জন্য চিকিৎসা করাতে গেলে ব্রেন খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই বাড়িতে রেখে শোধরানোর চেষ্টা করেছি।" সনাতনের মা ডগর সরেন বলেন-" আমরা নিরুপায়, নিজেরা অনেক চেষ্টা করেও পারিনি। তাই এই কাজ করতে হয়েছে আমাদের। প্রশাসন যদি আমাদের সহযোগিতা করে তো খুব উপকার হবে।"
আরও পড়ুন-আবার বিদ্রোহ BJP-তে, এবার গ্রুপ ছাড়লেন শঙ্কুদেব পণ্ডা
প্রতিবেশী মিনতি কিস্কু জানান, সনাতন এমনিতেই ভদ্র ছেলে ছিল। কিন্তু নেশায় পড়ে খারাপ দিকে চলে গিয়েছে। বারবার বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পালানোর চেষ্টা করতে। খারাপ কাজে চলে যাচ্ছে সে। তাই বাধ্য হয়ে পরিবার এই কাজ করেছে।
সনাতন কে বেঁধে রাখা হয়েছে জানতে পেরে স্বেচ্ছাসেবী ও মেদিনীপুর শহরের যুবক ফারুক মল্লিক সেখানে হাজির হন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিসের সহযোগিতা নেন। পুলিস এসে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে উদ্যোগ নেয়। ফারুক মল্লিক জানান, "বিষয়টি জানতে পেরে আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পুলিস বিষয়টা এবার দেখছে। শুধরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লকডাউনে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণেই হোক বা অন্য কারণে এই ছেলেটি খারাপ পথে চলে গিয়েছিল।"
রবিবার দুপুরে কতোয়ালী থানার পুলিস এসে শিকল খুলে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পুলিসের পক্ষ থেকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুরে তাকে সেই পুনর্বাসনে পাঠানো হয়।