নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রয়াত হলেন বঙ্গসংস্কৃতির অন্যতম পরিচিত মুখ সুধীর চক্রবর্তী। আজ, মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার (kolkata) এক বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান হল গবেষক-শিক্ষক-লেখক এই মানুষটির। কৃষ্ণনাগরিক সুধীর চক্রবর্তী হৃদরোগে (Heart-Attack) আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ভুগছিলেন।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিচিত্রকর্মা সুধীর চক্রবর্তী একাধারে শিক্ষক, সাহিত্যিক, গায়ক, সংগীতবিশেষজ্ঞ, লেখক। তবে তাঁর সব চেয়ে বড় পরিচয় সম্ভবত লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ (cultural anthropologist)। 
১৯৩৪-এর ১৯ সেপ্টেম্বর হাওড়ার শিবপুরে তাঁর জন্ম। বাবা-মায়ের নবম ও কনিষ্ঠতম সন্তান তিনি। জাপানিবোমার আশঙ্কায় তাঁর বাবা পরিবার নিয়ে হাওড়া থেকে নদিয়ার দিগনগরে তাঁদের গ্রামের বাড়ি চলে যান। সেখানে নানা রকম অসুবিধা দেখা যেতে পরে তাঁরা কৃষ্ণনগরে চলে যান। 


also read: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 


সুধীর চক্রবর্তীর মানুষ দেখার চোখ ও মন তাঁর তৈরি হয়ে যায় একেবারে ছোট থেকেই। নিজের চারপাশে নানা রঙের মানুষ দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন তিনি। কৃষ্ণনগরে যেখানে থাকতেন সেখানে তাঁদের এলাকার চারপাশে কলুপাড়া, ছুতোরপাড়া, ধোপাপাড়া, চাষাপাড়ার মতো বিচিত্রপেশার মানুষের পাড়া। শুধু বিচিত্র পাড়াই তো নয়, বিচিত্রকর্মা মানুষও তো চারপাশে কম দেখেননি তিনি। উকিল, মোক্তার, চাকুরিজীবী, দোকানদার, কীর্তনীয়া, ঠিকে ঝি, রান্নার বামুনদি, আলতাপিসি, বাটনাবাটুনিমাসি! এই আশ্চর্য সব পড়শিই যেন তাঁর মনের আগল খুলে তাঁকে ঘর থেকে, নিজের ভেতর থেকে বের করে এনে বিশ্বের হাটের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিল! নেশা ধরিয়ে দিল তাঁর মনে।


ছোট থেকে পড়াশোনাতেও ভাল ছিলেন সুধীর। ১৯৬৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পাঠ সমাপ্ত হয়। এর পরে ডুবে যান নিজের প্যাশনে। গান, লোকসংস্কৃতি , লালন ফকির তাঁর প্রিয় বিষয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে গ্রামবাংলায় ঘুরে ঘুরে লোকসংস্কৃতি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই সব সংগ্রহ নিয়ে রচনাও করেন অসংখ্য গ্রন্থ। সারা জীবন ধরে ছাত্র পড়িয়ে গিয়েছেন। পেশাসূত্রে কৃষ্ণনগর গভর্মেন্ট কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতার 'ইনস্টিটিউট অফ ডেভলেপমেন্ট স্টাডিজে'র সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। 


also read: ডুডলের মাধ্যমে নোবেলজয়ী কৃষ্ণাঙ্গ অর্থনীতিবিদকে সম্মান জানাল গুগল


এই বহু ব্যস্ততার মধ্যেও একটি অসাধারণ লিটল ম্যাগাজিন (little Mag)সম্পাদনা করেছেন তিনি। বাঙালির কাছে যথেষ্ট পরিচিত সেই পত্রিকা-- 'ধ্রুবপদ' (Dhrubapada)। তবে একটা সময়ের পরে ঘোষণা করে নিজেই বন্ধ করে দেন সেটির প্রকাশনা।



সারা জীবন ধরে অসংখ্য বই লিখেছেন সুধীর। আশিটিরও বেশি। বিপুল সেই সৃষ্টির মধ্যে মাত্র কয়েকটি হল-- গভীর নির্জন পথে, সাহেবধনী সম্প্রদায় ও তাদের গান, পঞ্চগ্রামের কড়চা, ব্রাত্য লোকায়ত লালন, বর্ণে বর্ণে পুষ্পে পর্ণে, গানের লীলার সেই কিনারে, গান হতে গানে, দেখা না-দেখায় মেশা, বাংলা দেহতত্ত্বের গান, বাউল ফকির কথা, নির্জন এককের গান রবীন্দ্রসঙ্গীত, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-- স্মরণ-বিস্মরণ।


'বাউল ফকির কথা'র জন্য ২০০২ সালে পান 'আনন্দ পুরস্কার' (Ananda Puraskar)। একই বইয়ের জন্য ২০০৪ সালে পান সাহিত্য আকাদেমি (Sahitya Akademi Award)। 


কৃষ্ণনাগরিক এই মানুষটি এ কালে বাঙালি-সংস্কৃতির অন্যতম ধারক-বাহক ছিলেন। ইদানীং কালের মধ্যে বাঙালির গান ও বঙ্গ লোকসংস্কৃতির এত বড় মাপের গবেষকও খুব বেশি দেখা যায়নি। তাঁর মৃত্যুতে বাঙালির সারস্বত জগতে বড় রকমের ক্ষতি হয়ে গেল। শোকার্ত বাঙালি বুদ্ধিজীবী থেকে ও সংস্কৃতিপ্রেমী সাধারণ বাঙালিও।