হিন্দু জামাইয়ের ঔরসের সন্তান মেয়ের গর্ভে! ফোন করে ডেকে গর্ভপাত করাল বাপেরবাড়ি
‘অনার কিলিং’ –এর এক নগ্ন দৃষ্টান্তের ইতিমধ্যেই সাক্ষী থেকে আমাদের রাজ্য। আবারও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা জন্য পুলিস প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ওই দম্পতি।
নিজস্ব প্রতিবেদন: ভালোবাসা হার মানেনি ধর্মের কাছে। বাড়ির শত আপত্তিতেও কেবল মনের মানুষের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসার জোরে ঘর ছেড়েছিলেন মুর্শিদাবাদের চাঁদনি খাতুন। বিয়ে করে তারকেশ্বরের শ্বশুরবাড়িতে সংসারও করছিলেন চুটিয়ে। কিন্তু মেয়ের সুখ সহ্য হয়নি বাপের বাড়ির লোকের। কারণ সেই 'ধর্ম'। হিন্দু জামাইকে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি চাঁদনির পরিবার। এর ওপর হিন্দু ছেলের ঔরসজাত সন্তান যাতে পৃথিবীর আলো দেখতে না পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট ছিল মেয়ের বাড়ি! তাই মিথ্যা কথা বলে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের গর্ভের সন্তানকে জোর করে নষ্ট করার অভিযোগ উঠল চাঁদনির পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় নিজের বাবা-দাদার হাতেই খুন হওয়ার আশঙ্কা করছেন খোদ চাঁদনি। কয়েক দিন আগেই ‘অনার কিলিং’ –এর এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্তের সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। সেই নৃশংসতার ঘোর না কাটতেই রাজ্যে ফের ভিন্ন মাত্রার এই ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিস প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ওই দম্পতি।
আরও পড়ুন: পাত্রী দেখতে গিয়ে তাঁর বাড়িতে বারাকপুরের পাত্র যা ঘটালেন, তা এই রাজ্যে কেন দেশে কোথাও আগে ঘটেনি!
সম্প্রতি বর্ধমানের জামালপুর থেকে এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। নাম জাহানা। ভিন ধর্মের ছেলেকে ভালোবাসার দাম তাঁকে চুকোতে হয়েছে নিজের জীবন দিয়েই। সেও চেষ্টা করেছিল, মনের মানুষের সঙ্গে সংসার করার জন্য বারবার ছেড়েছিল বাড়ি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরিবারের লোক তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে এসেছিল বাড়িতে। আটকে রেখেছিল ঘরে। এরপর বাবা-দাদার হাতেই যে তার জীবনরেখায় দাঁড়ি পড়তে চলেছে, তা হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন জাহানা। মেহেন্দি দিয়ে পায়ে লিখে রেখেছিলেন প্রেমিকের ফোন নম্বর। সেই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই প্রকাশ্যে এসেছে ভিন ধর্মের ছেলেকে ভালোবাসার চরম পরিণতি। বাবা-দাদাই যে খুন করেছে জাহানাকে, তা ধরিয়ে দেয় সেই ফোন নম্বরটিই।
চাঁদনি ও জাহানার ঘটনা সম্পর্ণ এক না হলেও, সম্পর্কের বিপন্নতার কেন্দ্রে সেই 'ধর্মীয় পরিচয়'। কিছুদিন আগে পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের চাঁদনির কাছে জাহানা ছিল একেবারেই অপরিচিত এক নাম। কিন্তু এখন সেই জাহানার জীবনের সঙ্গেই নিজের জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছেন চাঁদনি। কারণ তিনিও ভালোবেসেছেন ভিন ধর্মের ছেলেকেই, বিয়ে করেছেন তাঁকে। এখনও অবধি চাঁদনির প্রাণ সংশয় হয়নি বটে, কিন্তু পরিবারের সদস্যদের হাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর গর্ভের সন্তানের। এবার হয়তো মরতে হতে পারে তাঁকেও, সংশয়ে দিন কাটছে চাঁদনির।
আরও পড়ুন: রাতে কাকার গলা শুনে দরজা খোলে ভাইঝি, ঘরে মধ্যে বাবা-মা তাদের যে অবস্থায় দেখলেন...
বছর দুয়েক আগে তারকেশ্বরের ভাটা গ্রামের আস্তিক মুনির ভালোবাসার টানে বাবার ঘর ছেড়েছিল মুর্শিদাবাদের চাঁদনি। অনেক অশান্তি, অনেক কষ্ট সহ্য করেও ভালোবাসাকেই জিইয়ে রেখেছেন তাঁরা। চাঁদনি সন্তানসম্ভবা, সে খবর কোনওভাবে জানতে পেরেছিল তাঁর পরিবার।
কিছুদিন আগে চাঁদনির নম্বরে ফোন আসে বাড়ি থেকে। চাঁদনির অভিযোগ, বাড়ি থেকে ফোন করে তাঁকে বলা হয় দাদার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। যতই হোক দাদা তো! খবরটা শুনে মোটেও নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি চাঁদনি। সেই অবস্থাতেই ছুটে গিয়েছিলেন বাবার কাছে। কিন্তু সেখানেই বিপদ অপেক্ষা করছিল। অভিযোগ, মিথ্যা খবর দিয়ে বাড়িতে ডেকে জোর করে তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে বাপের বাড়ির লোকজন, এমনটাই অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ভিন ধর্মে প্রেম, তরুণীকে খুন করল বাবা-দাদা, ধরিয়ে দিল একটি নম্বর!
এরপর বেশ কিছুদিন চাঁদনিকে আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। বাপেরবাড়ি থেকে কোনওক্রমে পালিয়ে ফের স্বামীর কাছে চলে আসেন চাঁদনি। কিম্তু আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে তাঁকে। হয়তো তাঁকে বা তাঁর স্বামীকে না মরতে হয়! এই আতঙ্কে পুলিস প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন চাঁদনি ও আস্তিক। পুলিস প্রশাসন এবার কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই দেখার।