পকেটে কানাকড়িও নেই, কাজে ফেরার পথে চলন্ত ট্রেনেই সদ্যোজাতর জন্ম দিল পরিযায়ী
পকেটে কানাকড়িও নেই, কাজে ফেরার পথে চলন্ত ট্রেনেই সদ্যজাতর জন্ম দিল পরিযায়ী
নিজস্ব প্রতিবেদন: চলন্ত ট্রেনে পরিয়ায়ী দিনমজুরের স্ত্রী জন্ম দিল সদ্যজাতর। রাজস্থানের পথে পথে ভাঙরি কুড়িয়ে বছর দুই-এর মেয়েকে নিয়ে কোনও মতে দিন যেত পরিযায়ী শ্রমিক মসিদুল ইসলাম ও মসিদা খাতুনের। লকডাউনে কাজ হারান তাঁরা। এরপর কোনওভাবে রাজস্থান থেকে আসামের ধূবড়ি জেলার গুটি পাড়ায় নিজেদের গ্রামে এসেছিলেন।
আনলক শুরু হবার পর বৃহস্পতিবার সকালে ন-মাসের গর্ভবতী স্ত্রী মসিদা খাতুনকে নিয়ে নিউ বোঙায়গাও স্টেশন থেকে কামাক্ষা-আনন্দ বিহার স্পেশাল ট্রেনে চেপে রাজস্থানে ফিরে যাচ্ছিলেন এই পরিযায়ী দিনমজুর দম্পতি।ট্রেন ময়নাগুড়ি পার হতেই প্রসব বেদনা ওঠে মসিদা দেবীর। চলন্ত ট্রেনেই ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর রেলযাত্রী, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের সুপার এবং আরপিএফের তৎপরতায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মাদার চাইল্ড হাবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে একদম সুস্থ রয়েছে মা ও ছেলে। জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের সুপার পার্থপ্রতিম পাল জানিয়েছেন, বিকেল ৪.১০ নাগাদ আলিপুরদুয়ার কন্ট্রোলরুম থেকে আমার কাছে খবর আসে ট্রেনে সন্তান প্রসব করেছে এক মহিলা। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি।
সদ্যজাতর বাবা মসিদুল ইসলাম বলছেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। স্বামী-স্ত্রী মিলে সারাদিন ধরে রাজস্থানের রাস্তায় রাস্তায় ভাঙরি কুড়িয়ে দিনে শ-চারেক টাকা আয় হতো। তা দিয়ে কোনওভাবে দিন চলত। কিন্তু লকডাউনে কাজ হারিয়ে আমাদের অবস্থা খারপ হয়। ফলে অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু এভাবে আর দিন চলছে না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে ন-মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে রাজস্থান ফিরে যাচ্ছিলাম।
ময়নাগুড়ি পার হতেই ওর প্রসব বেদনা ওঠে। ট্রেনেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় আমার স্ত্রী। বর্তমানে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আমরা সবাই মিলে রয়েছি। তিনি আরও বলেন হাসপাতাল থেকে ছুটি দিলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আমি রাজস্থানে ফিরে যেতে চাই। আমি ৭০০ টাকা সম্বল নিয়ে রাজস্থান যাচ্ছিলাম। গত ২৪ ঘন্টায় আমার সেই টাকা শেষ। কেউ যদি আমাকে সাহায্য করে তবে আমার খুব উপকার হবে।