নিজস্ব প্রতিবেদন:  পঞ্চায়েত নির্বাচন মামলায় শীর্ষ আদালতের তীব্র ভর্তসনার মুখে পড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসন প্রসঙ্গে সওয়াল চলাকালীন প্রথম থেকে দেশের শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের তিরস্কারের মুখে পড়েন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী অমরিন্দর সরণ। এদিনের শুনানির প্রতি পরতে পরতে ছিল চরম নাটকীয়তা। সংশ্লিষ্ট মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্থাত্ কত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে প্রার্থীরা সেই হিসাব এদিন ঠিক মতো আদালতে জানাতে পারেননি কমিশনের আইনজীবী। শুধু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী অমরিন্দর সরণ-ই নন, কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্যও আদালতের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না। এই তথ্য তুলে ধরে এদিনের শুনানির প্রথম থেকেই চলে জোর সওয়াল জবাব। শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি অমরিন্দর সরণকে প্রশ্ন করেন, ‘রাজ্যের কতগুলি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়েছে?’ জবাব দিতে গিয়ে রীতিমতো থতমতো খেয়ে যান অমরিন্দর সরণ। এরপর একই প্রশ্ন করা হয় নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্যকে। তিনিও এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেন না। তখন বিচারক তাঁকে বলেন, “কোনও প্রস্তুতি না নিয়ে, শুধু অর্থ খরচ করতে আদালতে এলেন কেন”? এরপরই বিজেপির আইনজীবী ৩৪ শতাংশ আসনের কথা বলেন এবং প্রধান বিচারপতি এই তথ্যের সত্যতা রয়েছে কি না তা জানতে চান নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্যের কাছে। তবে এ ক্ষেত্রেও নীলাঞ্জনবাবু কোনও উত্তর দিতে পারেননি।


আরও পড়ুন: ই-মনোনয়নে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ, অনিশ্চিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীদের ভাগ্যও


রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এই ভূমিকা দেখে রীতিমত বিস্মিত হন বিচারপতি এএম খানউইলকর। এরপর স্বয়ং বিচারপতিই বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমানের মোট কত আসনে নির্বাচন হয়নি, তা পড়ে শোনান। সব শুনে বিস্মিত প্রধান বিচারপতি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন নির্বাচন ব্যবস্থার একেবারে প্রাথমিক স্তর। কীভাবে এত মানুষ মনোনয়নই জমা দিতে পারলেন না। এটা শকিং।’


এরই মধ্যে বিজেপির আইনজীবী পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারি ও তা হঠাত্ প্রত্যাহারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। তিনি জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় ১ দিন বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১২ ঘণ্টা পরই তা খারিজ করে দেয় কমিশন। এই বিষয়টি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনই হল আইনের অভিভাবক। এত আসনে যখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়, তখনই বিষয়টি কমিশনের অবগত হওয়া উচিত ছিল। এরপরই বুধবারের মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।


আরও পড়ুন: ই-মেলের মাধ্যমে জমা পড়া মনোনয়ন বৈধ, সিপিএমের দাবিকে স্বীকৃতি দিল আদালত


প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ই-মেল বা হোয়াটস অ্যাপে মনোনয়ন জমায় বৈধতার আবেদন জানিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিআই(এম)। আদালত তা বৈধ বলে রায় দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ৯ মে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি ছিল। সেসময় ক্যাভিয়েট গঠন করে এই মামলাতে যুক্ত হয় বিজেপি-ও। কিন্তু, ই মনোয়নে হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেসময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৪ শতাংশ আসনের ফল ঘোষণার উপরও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এইসব আসনে‘জয়-এর উপর স্থগিতাদেশ জারি করে বাকি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট।  এদিন সেই মামলারই শুনানি ছিল।