#উৎসব: কাটোয়ার কার্তিকপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে `থাকা পুজো`
কাটোয়ার তাঁতীপাড়ার `সাতভাই পুজো` এ অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন থাকা কার্তিক পুজো।
সন্দীপ ঘোষচৌধুরী
কাটোয়ার কার্তিক পুজো এমনিতেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর উপর এই বিশিষ্ট পুজোর দীর্ঘদিন ধরেই অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে 'থাকা পুজো'।
কী এই 'থাকা পুজো'?
এতে ছোট ছোট পুতুল থাক থাক করে সাজানো থাকে। কী বিষয় থাকে এই পুতুলসজ্জার? বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অথবা বর্তমান সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন দিক ছোট ছোট পুতুল দিয়ে থাক থাক করে সাজিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়। কাটোয়ার তাঁতীপাড়ার 'সাতভাই পুজো' এ অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন থাকা কার্তিক পুজো। কথিত আছে, এখন যেটা ঠাকুরথান সেখানে খেলতে গিয়ে ছেলেরা একবার সাতটি ভেঁটা (মার্বেল) কুড়িয়ে পেয়েছিল। সেই থেকেই এখানে সাতভাই কার্তিক পুজোর সূচনা। এ পুজোয় সবার উপরে থাকে বড়ো ভাইয়ের মূর্তি, তার দুদিকে তিনজন করে ভাই দাঁড়িয়ে থাকে। সব মিলিয়ে সাতভাই।
মাথায় বাবরি চুল, দশাসই চেহারা, জমিদারি গোঁফ, পাশে ময়ূর। তবে হাতে তীরধনুক নেই। এর পরিবর্তে গোলাপফুল। পায়ের উপর পা তুলে দিব্যি আয়েস করে বসে থাকেন রাজা কার্তিক। একমুঠো নুন আর গঙ্গাজল দিয়ে তাঁর কাছে মনের ইচ্ছে জানালে তা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস। রাজা কার্তিক ভালোবাসেন মোয়া। দধিকর্মার দিন তাই মুড়ি-মোয়া বিতরণ করা হয়। এছাড়াও এখানে যোদ্ধাকার্তিক, রামকার্তিক, জামাইকার্তিক ইত্যাদি কার্তিকও আছেন।
বর্তমানে সাবেকি পুজো, থাকা পুজোর পাশাপাশি থিমের পুজোও জায়গা করে নিয়েছে। ঘরের পুজোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্লাবের পুজোর আধিক্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মতো এখানে বাবুদের কার্তিক-লড়াই না থাকলেও জাঁকজমকপূর্ণ প্যান্ডেল, শোভাযাত্রা, আলো, বাজনার লড়াই এখনও বিদ্যমান। কার্তিকপুজোর এই সময়ে গোটা শহর সেজে ওঠে রকমারি আলোয়। শহর জুড়ে ছোট বড়ে মিলিয়ে দুশোটির বেশি পুজো হয়। এবছর থাকা ও থিমের পুজো মিলিয়ে ৬৮টি পুজো অনুমতি পেয়েছে। করোনা আবহের জন্য পুজো, আলো, প্যান্ডেল, বাজনা থাকলেও গত বছরের মতো এবছরও শোভাযাত্রা বন্ধই থাকছে।
আরও পড়ুন: #উৎসব: বণিকবাবুদের হাত ধরে কার্তিকপুজো কাটোয়ায় হয়ে দাঁড়াল রংদার 'কার্তিক লড়াই'