মমতা প্রধানমন্ত্রী হলে রাম মন্দির হবে, বললেন কপিল মুনি আশ্রমের প্রধান পুরোহিত
দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের মঙ্গল হবে, মমতাকে পাশে নিয়ে এমনটা বললেন কপিল মুনি আশ্রমের প্রধান পুরোহিত।
সুতপা সেন
দিদিকেই প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চান কপিলমুনি আশ্রমের প্রধান পুরোহিত জ্ঞানদাস মোহন্ত। মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে নিয়েই জানিয়ে দিলেন, দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের কল্যাণ হবে। একইসঙ্গে রাম মন্দির নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগও করেছেন জ্ঞানদাস মোহন্ত।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা সফরে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সভা করার পর গঙ্গাসাগরের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই প্রধান পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে জ্ঞানদাস মোহন্ত বলেন, ''ভোট এলেই বিজেপির মনে পড়ে রাম মন্দির। রামকে ওরা পোলিং এজেন্ট বানিয়ে ছেড়েছে''।
শুধু এখানেই থামেননি, এলাহাবাদের অর্ধ কুম্ভ নিয়েও যোগী সরকারকে খোঁচা দিয়েছেন মোহন্ত। অর্ধকুম্ভ নিয়ে বিজেপি আত্মপ্রচার করছে বলে দাবি তাঁর। এককদম এগিয়ে জ্ঞানদাস মোহন্ত বলেন, ''দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের মঙ্গল হবে। ওনার মতো কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে রাম মন্দির নির্মাণও হবে। দেশের সাধুসন্তরা রাম মন্দির চান। বিজেপি ভোটের আগে রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। তারপর ভুলে যায়''।
পাঁশে দাঁড়িয়ে থাকা মমতা বলতে শুরু করেন, ''এখানে গেট তৈরির পর তার নাম সম্প্রীতি রাখার প্রস্তাব দেন মোহন্ত। এদেশে সবাই মিলেমিশে থাকেন। ধর্মের ভেদাভেদ নেই। ওনার ঘরেও কপিল মুনি, দুর্গা, রামসীতার ছবি রয়েছে। সবাইকে সমান শ্রদ্ধা করি আমরা। আমাদের একটাই পরিচয়, সেটা হল আমরা ভারতীয়''।
গত দুবছর রাম নবমী ও হনুমান জয়ন্তীতে অস্ত্র মিছিল করে এরাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস ও বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ভোটের আগে রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে ফের সরব হয়েছে তারা। ইতিমধ্যে দিল্লিতে প্রচুর লোক হয়েছিলেন ভিএইচপি-র সভায়। অযোধ্যাতে ধর্মসভা করেছিল হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। ভোটের আগে ফের রাম মন্দির নিয়ে হাওয়া গরম করতে শুরু করেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- কৃষি ঋণ মকুবের নামে রাহুলের চালাকি? কাগজ খতিয়ে দেখার হুঁশিয়ারি মমতার
তবে রাম মন্দিরের আঁচ তাদের গায়েও লাগছে। রাম মন্দির আন্দোলনেই বিজেপির উত্থান। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ মোদী সরকারের জমানাতেও রাম মন্দির নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আরএসএস-ভিএইচপি। সরসঙ্ঘ চালক মোহন ভাগবত স্পষ্ট ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় আইন এনে রাম মন্দির করতে হবে সরকারকে। কিন্তু রাম মন্দিরের জন্য কোনও অধ্যাদেশ জারি করা হবে না বলে স্পষ্ট করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপি স্পষ্ট জানিয়েছে, আদালতের উপরেই ভরসা রয়েছে তাদের। বলে রাখি, ৪ জানুয়ারি অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। রঞ্জন গগৈ প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এই প্রথম সুপ্রিম কোর্টে উঠতে চলেছে অযোধ্যা মামলা। গত ২৯ অক্টোবর অযোধ্যা মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, জানুয়ারিতে ফের আদালতে উঠবে এই মামলা। মামলাটি দ্রুত শুনানির আবেদন খারিজ করে বিচারপতিরা জানান, এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে আদালতে।
দিন কয়েক আগে লখনৌয়ে রাজনাথ সিংয়ের সভাতেই উঠে গিয়েছিল রাম মন্দিরের দাবিতে স্লোগান। রাম মন্দির হবে বলে কোনওক্রমে মুখ বাঁচান রাজনাথ সিং। এদিন মমতার সামনে রাম মন্দিরের দাবি তুললেন কপিল মুনি আশ্রমের প্রধান পুরোহিত। অনেকেই বলছেন, সুকৌশলে সম্প্রীতির পাঠ দিয়ে প্রসঙ্গ ঘোরালেন মমতা।