নিজস্ব প্রতিবেদন: বিষ্যুদবার চার জেলার ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচন। তবে ভূ-ভারতের আগ্রহের ভরকেন্দ্র ওই একটাই আসন। স্বাধীনতা বাংলায় নন্দীগ্রামই সম্ভবত দেখতে দুই প্রবল প্রতিপক্ষের মহাটক্কর। খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই কেন্দ্রের প্রার্থী। তাঁর বিপক্ষে অধিকারী পরিবারের মেজো ছেলে। দুই দুঁদে রাজনীতিকদের মাঝে তারুণ্যের স্পর্ধা দেখাচ্ছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

নন্দীগ্রাম হয়ে সিঙ্গুরের পথে ২০১১ সালে মহাকরণে পৌঁছেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার ঠিক ১০ বছর পর আরও একটা লড়াইয়ে তৃণমূল নেত্রী। নন্দীগ্রামে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সেদিনের সতীর্থ শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। সাম্প্রতিককালে রাজ্য় রাজনীতি এমন মহাযুদ্ধ দেখেনি! মমতাকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলার জনপ্রিয় রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম। মেদিনীপুর আবার অধিকারীদের গড়। সেই পরিবারের মেজো কত্তা শিবির বদলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আধ লাখ ভোটে হারাবেন তাঁর প্রাক্তন নেত্রীকে। শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার সঙ্গে পরিসংখ্যানও আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে বিজেপিকে (BJP)। শুভেন্দু ছাড়াই বিধানসভা ভোটের তুলনায় গত লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে ৬ গুণ ভোটবৃদ্ধি হয়েছে বিজেপির। তখন শুভেন্দু ছিলেন তৃণমূলেই। 


২০১৬ সালে নন্দীগ্রামে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬২৩টি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইয়ের ঝুলিয়ে গিয়েছিল ৫৩ হাজার ৭১৩টি ভোট। জয়ের ব্যবধান ৮১, ২৮০। সেবার মাত্র ১০,৭১৩টি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল, বাম ও  বিজেপির ভোটের হার যথাক্রমে ৬৬.৭৯%, ২৬.৪৯%  ও ৫.৭৩%। 


তার ঠিক ৩ বছর পর লোকসভা ভোটে ধস নামে বাম ভোটে। ফুলেফেঁপে ওঠে বিজেপি। লোকসভার নিরিখে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোটপ্রাপ্তির হার কমে হয় ৬৩.১৪%। বামেদের ভোটের হার ৫.৩৮ শতাংশ। লোকসভার চেয়ে ৬ গুণ ভোট বাড়িয়ে বিজেপি পৌঁছে গিয়েছিল ৩০.৯ শতাংশে। পাটিগণিতের সাধারণজ্ঞান বলছে, বাম ভোট পড়েছিল রামের ইভিএমে। একই ধারা কি বজায় থাকবে বিধানসভা ভোটেও? এতটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের মতো তরুণ মুখকে দেখে বাম ভোট ফিরে আসতেও পারে। তার উপরে নন্দীগ্রামকাণ্ডে পুলিস ঢোকানোর দায় 'বাপ-ব্যাটা'র উপরে চাপিয়ে বামেদের খানিকটা অক্সিজেনও দিয়েছেন মমতা (Mamata Banerjee)।         


আরও পড়ুন- WB Assembly Election 2021: দ্বিতীয় দফায় নজরে নন্দীগ্রাম, অশান্তি রুখতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি কমিশনের


এ তো গেল বিরোধী শিবিরের কথা। শাসক দলকে বরাভয় দিচ্ছে ৩৬.৭% শতাংশ মুসলিম ভোট। ২০১১ সালের পর থেকে বাংলার সংখ্যালঘুদের ভোট যাচ্ছে তৃণমূলের ঘরেই। এবারও তার অন্যথা হওয়ার কথা নয়। বিজেপিকে রুখতে মমতার দিকেই সংখ্যালঘু ভোট সংহত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শুভেন্দুর বাজি,৬২.৯ শতাংশ হিন্দু ভোট। অনেকেই বলছেন, মেরুকরণের লক্ষ্যেই প্রচারের শেষলগ্নে 'জিহাদি', 'পাকিস্তানি' ও 'বেগমে'র মতো শব্দের ব্যবহার করেছেন শিশিরপুত্র। তাতে কতটা সফল হবেন, তার উপরে ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে।     
  
সব খেলাতেই হার-জিত থাকে। কিন্তু, নন্দীগ্রামে জয়-পরাজয় যুযুধান প্রার্থীদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে। কী রকম? এই যেমন তৃণমূল জিতল অথচ মুখ্যমন্ত্রী হারলেন, তখন এক ধরনের প্রেক্ষাপট। আবার রাজ্যে বিজেপি জিতলেও শুভেন্দু অধিকারী হারলেন! কাজেই নন্দীগ্রামকে ঘিরে নানা অঙ্ক, নানা সম্ভাবনার সমাহার। 'শেষতক' কে মেলাবেন অঙ্ক? তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাস।


আরও পড়ুন- West Bengal Election 2021: ভোটগ্রহণ থেকে EVM স্থানান্তর- সূচি বদলে যুদ্ধক্ষেত্রে দিনভর Mamata