সঞ্জয় ভদ্র: মাঠের মাঝখানে শাড়ি দিয়ে ঘেরা শোওয়ার জায়গা। একফালি বিছানাতেই ছড়িয়ে রয়েছে সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র। মাথার ওপর ছাদ নেই। খোলা আকাশের নিচেই রান্নাবান্না, দিন গুজরান। ঠান্ডায় শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে কার্যত ধুঁকছেন গৃহকর্ত্রী । সব মিলিয়ে বেআব্রু গৃহস্থ। ছবিটা ক্যানিংয়ের বুধাখালির। দিনযাপনের সেই চিত্রটা দেখলে শিউড়ে উঠবেন যে কেউ! ২০২০-র মে মাসে ভয়াবহ বিপর্যয় আমফান (Amphan) ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে ওদের সর্বস্ব। ত্রাণ শিবিরে থেকে ফিরে দেখেছিলেন তছনছ হয়ে গিয়েছে মাথার ছাদ। সুন্দরবনের অধিকাংশ জায়গাতে একই অবস্থা।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


এমনটা কথা ছিল না একেবারেই। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারের ত্রাণ পৌঁছে যাওয়ার কথা এতদিনে। তবে ছবি অন্য কথা বলছে। রাজনৈতিক কড়চা, সরকার-বিরোধীদের তরজার জাঁতাকলে আটকে ত্রাণ-সাহায্য। অসহায় পরিবারগুলোও হাল ছেড়েছে। ক্ষীণ স্বরেই বলছেন, 'কত আবেদন করেছিলাম কিন্তু লাভ হয়নি', এমনকি তাঁদের অভিযোগ আবেদন পত্র ভরতেও কখনও ২০০ কখনও ৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছে অসহায় মানুষগুলোর থেকে। তবে সবই সার। সাহায্য পৌঁছয়নি। আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সেই তিমিরেই। 



আমফানে দুর্নীতির অভিযোগের জল গড়িয়েছে আদালতে। জনস্বার্থ মামলায় ক্যাগকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এদিকে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ রাজ্য সরকারও। চলছে চাপানউতোর। কিন্তু কেমন আছেন আমপানে ক্ষতিগ্রস্তরা? সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গ্রাউন্ড জিরোতে পৌঁছে গিয়েছিল Zee 24 Ghanta।  গৃহকর্ত্রীর কথায়, 'ঠান্ডায় শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। মাথার ওপর ছাদ নেই, সরকারও কোনও সাহায্য করেনি।' 



এখন প্রশ্ন, কোথায় গেল সেই বরাদ্দ সাহায্য? যাঁরা ফর্ম দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে গিয়েছেন তাঁরাই বা কারা? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। সরকার পক্ষের দাবি আমফান ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে সময় মতোই ত্রাণ পৌঁছে গিয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীরা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। 


ডিসেম্বরের শুরুতেই আমফান ত্রাণে দুর্নীতি নিয়ে এবার CAG-এর রিপোর্ট তলব করে কলকাতা হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কোথায় কার মাধ্যমে ত্রাণের টাকা বিলি করা হয়েছে, বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে রিপোর্টে। যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে,তাহলে জানাতে হবে অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের নামও। 


২০২০-র মে মাসে রাজ্যে আছড়ে পড়ে ঘুর্ণিঝড় আমফান। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল দুই ২৪ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। ঘুর্ণিঝড়ের ভয়াল রূপে কেঁপে ওঠেছিলেন কলকাতার বাসিন্দারা। শহরেও ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ কোনও অংশে কম ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে আকাশ পথে ঝড়ে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্গতদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই টাকা গেল কোথায়? ত্রাণ বন্টনে রাজ্যের সর্বত্রই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির ভূরি ভুরি অভিযোগ ওঠে। জেলায় জেলায় শুরু হয় বিক্ষোভ। পরিস্থিতির চাপে পড়ে পদক্ষেপ করতে কার্যত বাধ্য হয় সরকার। শোকজ  কিংবা বহিষ্কার করা হয় শ'খানেক তৃণমূল নেতা-পঞ্চায়েত-প্রধানকে।



এ দিকে আবার আমফানের ত্রাণ বন্টনে দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে। মামলাকারীদের অভিযোগ, ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে চাষের জমি, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও ত্রাণ মেলেনি। এমনকী, অনেক জায়গায় ত্রাণ চাইতে গিয়ে পুলিসি হেনস্থার শিকারও হয়েছেন দুর্গতরা। সেই মামলাগুলির প্রেক্ষিতে এবার আমফানের ত্রাণ বন্টনে CAG-র রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট।