নিজস্ব প্রতিবেদন : দো-চালা রান্নাঘরে তখনও পড়ে রয়েছে এক কড়াই মাংস। মাছি ভন ভন করছে। কিন্তু, সেদিকে আর কারোর মন নেই। কী করেই বা মন থাকবে? একটা ফোন... মুহূর্তের মধ্যে চুরি করে নিয়েছে দাস পরিবারের মুখের হাসিটুকু। আনন্দ মিলিয়ে গেছে কান্নার রোলে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মা-বাবা আর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী, এদের নিয়ে ছোট্ট সংসার ছিল রাজুর। অভাবের সংসার। সংসারে হাল ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা করত রাজু। কোনও কসুর রাখত না বাবুলাল দাসের আদরের ছোট ছেলে। সংসারে যাতে দুটো টাকা বেশি আসে, সেই কারণেই ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজু। গভীর সমুদ্রে জাল ফেললে এই বর্ষার মরশুমে বেশি মাছ উঠবে। ফলে বাজারে এসে সেই মাছ বিক্রি করলে মুনাফাও মিলবে বেশি।


রাইডার্স টু দ্যা সি-র হতভাগ্য মা মৌরিয়া কে মনে আছে? খুনে সমুদ্র যার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল তাঁর ৬ ছেলের একমাত্র জীবিত, ছোট ছেলে বার্টলেকেও। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে যাওয়ার আগে রাজুও বার্টলে-র মতো বার বার মাকে আশ্বস্ত করেছিল। কথা দিয়েছিল, খুব শিগগিরই ফিরে আসবে সে। কয়েকদিনের মধ্যে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেন বলে কোল পেতে আশায় বসেছিলেন মা-ও। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি। কথা রাখতে দিল না রাজুকে।


আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গ 'বাংলা' হলে, কী প্রভাব পড়বে আপনার জীবনে?


মাত্র ২ মাস আগে বিয়ে করেছে রাজু। ঘরে টুকটুকে নতুন বউ। স্বামী বাইরে যাওয়ার কথা শুনেই মুখ ভার হয়ে গিয়েছিল তাঁর। আশ্বস্ত করেছিল রাজু। বলেছিল, "সুস্থ থেকো। বাড়ির সবাইকে লক্ষ্য রেখ। ভালো রেখ।" তারপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় রাজু।


সমুদ্রও প্রথমে রাজুকে নিরাশ করেনি। জাল ফেলতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ে। অনেকটা মুনাফা লাভের আশায় মন খুশি হয়ে গিয়েছিল রাজুর। উপকূলে ফেরার আগেই বাড়িতে ফোন করে সে। বাড়ির সবার সঙ্গেই কথা হয় তাঁর। মাকে বলে, "আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরছি আমি। কষা মাংস করো কিন্তু...।" তারপরই ফোনটা কেটে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর ফোনে পাওয়া যায়নি রাজুকে।


মাংস খেতে বড্ড ভালোবাসত রাজু। মায়ের কাছে তাই বাড়ি ফিরে 'কষা মাংস' খাওয়ারই আবদার করে সে। ছোট ছেলের আবদার ফেলতে পারেনি মা-ও। রাজুর ফোন পাওয়া মাত্রই বাড়ি সরগরম হয়ে ওঠে। বাজারপর্ব শেষে উনুনে হাঁড়ি চড়ে। গরম গরম ভাত আর মাংস। এই ছিল মেনু। দো-চালা ছোট্ট রান্না ঘরের ভেতরেই বসত দুপুরের খাবারের আড্ডা। কিন্তু সেই আড্ডা বসার আগেই সব শেষ...


আরও পড়ুন, জালিয়াতি চক্রে নাম জড়াল আরও ২টি ব্যাঙ্কের


কড়াইতে মাংসটা যখন ফুটছে, সেইসময়ই ফোনটা আসে। ফোনটা ধরতেই মেলে দুঃসংবাদ। সমুদ্রে উল্টে গেছে রাজুর ট্রলার। মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ বদলে যায় বিষাদে। স্বামীর অপেক্ষায় বসেছিল সদ্য বিবাহিতা সোমা। সেই অপেক্ষা যে আর শেষ হবে না... রাজু যে আর ফিরবে না, তা মানতে নারাজ স্ত্রীর মন।


শেষপর্যন্ত রাজু ঘরে ফিরেছে। তবে জীবিত নয়। কালো প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় রাজুর নিথর দেহ দাস পরিবারে এসে পৌঁছেছে। আর কড়াইয়ের মাংস পড়ে রয়েছে কড়াইতেই।