নিজস্ব প্রতিবেদন: দিনে এক বেলার খাবার পেতে গেলে দিতে হবে দৈনিক ৩০ টাকা! ছেলে জারি করেছে ফরমান! অগত্যা অশীতিপর বৃদ্ধ আইসক্রিমের প্যাকেট কিংবা চকোলেট নিয়ে দাঁড়াতেন স্কুলের গেটের বাইরে। এখন বন্ধ স্কুল,   শূন্য থলে, ফাঁকা হাত অতঃপর 'ঘরহীন' জীবনযাপন। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বৃদ্ধ গঙ্গাধর সামন্তের জীবন নিয়ে তৈরি হয়ে যেতে পারে আস্ত একটা চলচ্চিত্রের পট।

COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

মুখের চামড়া কুচকে ঝুলছে, চোখের পাতায় ভাঁজ পড়েছে, হাত-পা নড়বড়ে, শীর্ণ দেহ, ঝাপসা চাউনি- 'ও কাকা তুমি  রাজবাড়ির দালানে শুয়ে কী করছো?' প্রশ্ন করতেই ভাঙা গলায় উত্তর এল, 'কী করব বাপু, ঘরে যে ঠাঁই নাই। রোজ যে তিরিশটা টাকা দিতে পারতেছি না ছেলেকে। খরচা বেড়েছে, খাবু কী! আমারও রোজগের নেই আর!'
গলায় ভেঙে আসছে, চোখের কোণটা চিকচিক করছে, তবুও ছেলের বিপক্ষে কথা বেরলো না একটিও। তিনি যে বাবা। একটা সময়ে যে ঘর বেঁধেছিলেন স্বপ্ন নিয়ে, হকারি করে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় ছেলেমেয়েকে 'মানুষ' করলেন, সেই ঘরেই এখন ঠাঁই নেই তাঁর। অথচ মুখের হাসিটা কিন্তু এখনও অমলিন।


গঙ্গাধরবাবুর মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন, তাঁর আয় রয়েছে। কিন্তু বাবাকে যদি বাড়িতে থাকতে হয়, তাহলে রোজ দিতে হবে ৩০ টাকা। তবেই একবেলার খাবার মিলবে।
তাই চকোলেট, আইসক্রিম নিয়ে গঙ্গাধরবাবু স্কুলের বাইরে দাঁড়াতেন, যা আয় হত তা তুলে দিতেন ছেলের হাতে, রাতের খাবার বাড়িতেই হয়ে যেত। দুপুরটা কোনওদিন কপালে জুটত মিড ডে মিলের অর্ধেক, আবার কোনওদিন অনুষ্ঠানবাড়ির উচ্ছিষ্ট।

এইভাবে ভালোই চলছিল। কিন্তু বাধ সাধল লকডাউন। স্কুল বন্ধ হওয়ায় তাঁর আর রোজগার নেই। তাই বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছে ছেলে। এখন মহিষাদল রাজবাড়ির দালানেই পড়ে থাকেন তিনি। 'এখন কী খাচ্ছেন তবে?'
উত্তর এল, "ওই তো পাড়ার কত লোক রয়েছে, কেউ না কেউ ঠিক দিয়ে যাইতেছে। দিন কাইট্যা যাইতেছে।" এখনও ছেলের বিপক্ষে একটিও কথা নেই মুখে। তিনি তো বাবা!
আরও পড়ুন: মৃত মায়ের কোলেই জাপটে কাতরাচ্ছে ক্ষতবিক্ষত ৩ বছরের শিশু, পাশেই রক্তাক্ত বাবার লাশ
কৌশিক পণ্ডা নামে এক প্রতিবেশী বললেন, "খারাপ লাগে, গঙ্গাধরবাবু খেটে গিয়েছেন সারাজীবন, এখনও খেটে যাচ্ছেন তবে ছেলেটাকে মানুষ করতে পারেননি। অমানুষই থেকে গেছে ছেলেটা!"