সাপে কামড়ানোর পর ওঝার ঝাড়ফুঁক! দেগঙ্গায় কুসংস্কারের বলি যুবক
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা `মাথায় আসেনি` কারও!
নিজস্ব প্রতিবেদন: একুশেও অন্ধবিশ্বাস! হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা 'মাথায় আসেনি'। সাপ কামড়ানোর পর দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল ওঝার ঝাড়ফুঁক! শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হল, ততক্ষণে সবশেষ! কলকাতার উপকণ্ঠে কুসংস্কারের বলি যুবক। ঘটনাকে কেন্দ্র তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়।
জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা এলাকার বাসিন্দা বছর চল্লিশের সমীর পাড়ুই। গতকাল অর্থাত্ শুক্রবার রাতে স্থানীয় একটি পুকুরে মাছ ধরছিলেন তিনি। তখন বিষধর একটি সাপ ছোবলে মারে ওই যুবককে। তারপর? হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, সমীরকে নিয়ে সটান ওঝার বাড়িতে হাজির হন পরিবারের লোকেরা। সেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঝাঁড়ফুক চলে বলে অভিযোগ। ফলে যা হওয়ার, তাই হয়।
আরও পড়ুন: পচন ধরছে সারা শরীরে, পুকুর থেকে উদ্ধার সদ্যোজাত-র দেহ
ঝাড়ফুক চলাকালীন শারীরিক অবস্থায় অবনতি শুরু করে। এতটাই অবনতি হয় যে, শেষপর্যন্ত সাপে কামড়ানো যুবককে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা, কিন্তু বাঁচানো যায়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর সমীর পাড়ুইকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্সকরা। তাঁদের দাবি, ওঝার কাছে না গিয়ে প্রথমেই যদি হাসপাতালে আনা হত, তাহলে তাঁকে বাঁচানো যেত। ঘটনাটি জানাজানি হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
হাসপাতালে নিয়ে গেলেন না কেন? মৃতের পরিবারের এক সদস্যের অকপট স্বীকারোক্তি, 'তখন তো মাথায় কাজ করে না। সাপের কামড়েছে, সকলেই ওঝার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য় মেতে উঠল! হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা মাথায় আসেনি'। তাঁর দাবি, 'ওঝা বলেছিল সুস্থ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি আনার ঘণ্টা দেড়েক পর ফের শরীর খারাপ করতে শুরু করে। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই যেতেই মারা গেল'।
আরও পড়ুন: কলকাতায় করোনায় মৃত্যু; বেঙ্গালুরুতে আত্মীয়রা, জলপাইগুড়ি থেকে ভার্চুয়ালি হল শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান
জানা দিয়েছে, ঘটনার পর থেকে ওঝা বেপাত্তা। তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ। সাপে কামড়ালে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন দেগঙ্গার বিধায়ক রহিমা মণ্ডল।