নয়া শর্তে বিভ্রান্তিতে জিও`র গ্রাহক মহল
নিজস্ব প্রতিবেদন: বিনামূল্যের জিও 'স্মার্ট' ফোন কি আদৌ 'ফ্রি'? ডেলিভারি শুরুর আগে জিও ফ্রি ফোন ব্যবহারের শর্তাবলী প্রকাশ্যে আসার পর এই প্রশ্নটাই এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বার বার। ১৫০০ টাকা দিয়ে ফোন বুকিং করাতে হবে, আর তিন বছর পর সেই টাকা ফেরত দেবে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও, এটা তো জানা ছিল সবারই। কিন্তু কীভাবে টাকা ফেরত পাবেন গ্রাহকরা সেটা নিয়েই ছিল ধন্দ। এবার জিও ফোন ব্যবহারের শর্তাবলী প্রকাশ্যে আসতেই সেই ধন্দ যেন আরও জোরালো হল। প্রথমত, জিও ফোন বুকিংয়ের জন্য ১৫০০ টাকা পেতে হলে এই ফোন ব্যবহার করতে ন্যুনতম ৩৬ মাস, অর্থাৎ তিন বছর। আর এই তিন বছরে একজন জিও গ্রাহককে প্রতি ১২ মাস অন্তর ১৫০০ টাকা রিচার্জ করাতেই হবে। ফোন ব্যবহারকারী যদি সেটা না করেন তাহলে জিও থেকে গ্রাহককে বারে বারে মনে করিয়ে দেওয়া হবে, "ফোনটির মালিক আপনি নন। কেবল মাত্র পরিষেবাটাই জিও আপনাকে দিচ্ছে।" উল্লেখ্য, জিও ফোনের ওয়ারেন্টিই কেবল এক বছর। অর্থাৎ একবছরের মধ্যে ফোন খারাপ হলে তার দায়িত্ব নেবে কোম্পানি, কিন্তু সেটা ১২ মাস পেরিয়ে গেলে কোম্পানি কী আদৌ ফোন পরিবর্তন করে দেবে কিনা, সে নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এক নজরে দেখে নিন জিও ফোন ব্যবহারের শর্তাবলীগুলি:
- জিও ফোন ব্যবহারকারীদের প্রতিবছর কমপক্ষে ১৫০০ টাকা রিচার্জ করতেই হবে। অর্থাত্ পুরো মেয়াদ (৩৬ মাস) পূর্ণ করে জমা ১৫০০ হাজার টাকা পেতে গেলে আপনাকে ৪৫০০ টাকা খরচ করতে হবে।
- প্রথমবার ফোন চালু হওয়ার পর এই ফোনে জিও সিম লক হয়ে যাওয়ার পর আর অন্য কোনও সিম ব্যবহার করা যাবে না।
- জিও ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই ফোন কেনার পর গ্রাহক তা আর বিক্রি করতে পারবেন না।
- ১২ মাস ব্যবহার করার পর যদি কোনও গ্রাহক জিও ফোন ফেরত দিতে চান, তাহলে গ্রাহকে জিএসটি সহ ১৫০০ টাকা হবে কোম্পানিকে।
- ১২ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে ফেরত দিলে গ্রাহকে দিতে হবে ১০০০ টাকা। এখানেও জিএসটি প্রযোজ্য।
- আর গ্রাহক যদি ২৪ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে ফোন ফেরত দেন তাহলে ৫০০ টাকা আর জিএসটি দিলেই মিটে যাবে।
- এই উল্লেখিত তিন ক্ষেত্রে ফেরতযোগ্য টাকা থেকে কেটে নিয়ে বাকি টাকা ফেরত্ দেওয়া হবে।
- কোনও গ্রাহক যদি এই সমস্ত শর্ত না মানেন, তাহলে ফোন বাজেয়াপ্ত করার অধিকার থাকবে জিও'র।
এখন প্রশ্ন, যেখানে কোনও পরিষেবা বাজারে আনার আগে সব কোম্পানি আগে থেকেই নিজেদের যাবতীয় শর্তাবলী জানিয়ে দেয়, সেখানে প্রথমে ফ্রি ফ্রি বলে বাজার দখল করে এখন কেন লম্বা চওড়া খরচের তালিকা জানাচ্ছে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স জিও? রিলায়েন্সের এই বিপণনী স্ট্র্যাটেজিকে অনেক মার্কেটিং প্রজ্ঞারাই 'অনৈতিক' বলে ব্যক্ত করছেন।