সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রকে ফিরে দেখা

Rajat Mondal
Dec 16,2024

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে আইসিইউ চিকিৎসাধীন ছিলেন। জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ আগে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। রবিবার সংবাদমাধ্য়মে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও তাঁর পরিবার জানায় তিনি ১৬ই ডিসেম্বর দিকশূণ্যপুরের দিকে পাড়ি দিয়েছেন। দ্বন্বের কারণ দু-দেশের মধ্যে সময়ের পার্থক্য।

সর্বোচ্চ পুরস্কার

জাকির হুসেনকে ১৯৯০ সালে ভারত সরকার সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার ,সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ, ২০১৮ সালে রত্ন সদস্যে ভূষিত করেন। ১৯৯৯ সালে, তিনি ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর দ্য আর্টস ' ন্যাশনাল হেরিটেজ ফেলোশিপ'-এ ভূষিত হন , যা ঐতিহ্যবাহী সর্বোচ্চ পুরস্কার।

গ্র্যামি পুরস্কারের সংখ্যা

জাকির হুসেন সাতবার গ্র্যামি পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন, জিতেছেন চারটি। তিনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই তিনটি গ্র্যামি পেয়েছিলেন।

শিক্ষাজীবন

জাকির হুসেন আল্লারাকা কোরেশি ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ ভারতের মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। মাহিমের সেন্ট মাইকেল হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলে থেকে স্নাতক হন। ১৯৭০ সালে আমেরিকায় পাড়ি জমান। তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ।

শিক্ষাগুরু

জাকির হুসেন ছিলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক উস্তাদ আল্লা রাখার পুত্র। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর প্রাথমিক আগ্রহ এবং কঠোর প্রশিক্ষণ তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তবলা বাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অসীম ভালোবাসা, সৃজনশীলতা এবং সূক্ষ্মতা তাঁকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিতি দেয়। তিনি কেবল একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন না, বরং সাংস্কৃতিক দূত হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

ব্যাক্তিগত জীবন

হুসেনের জীবনসঙ্গী আন্তোনিয়া মিনেকোলা। যিনি একজন কত্থক নৃত্যশিল্পী এবং শিক্ষিকা। যিনি তাঁর ম্যানেজারও ছিলেন। তাদের দুটি কন্যা ছিল, আনিসা কুরেশি এবং ইসাবেলা কুরেশি। আনিসা ইউসিএলএ থেকে স্নাতক এবং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। ইসাবেলা ম্যানহাটনে নাচ নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

অ্যালবাম ও উত্থান

১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি। তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসন-সহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি।

অগনিত পারফর্ম্যন্স

১৯৭৯ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে একাধিক জাতীয়, আন্তর্জাতিক ফেস্টিভালে যেমন তিনি পারফর্ম করেছেন, তেমনই অগুনতি অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন ছয় দশকের কেরিয়ারে। তবে কেরিয়ারে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত ছিল ১৯৭৩ সালে গিটারিস্ট জন ম্যাকলাফলিন, ভায়োলিন বাদক এল শঙ্কর ও ঘটম বাদক টিএইচ ভিক্কুর সঙ্গে যুগলবন্দী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জ্যাজের মেলবন্ধন ছিল, যা ওই যুগে কেউ কল্পনাই করতে পারত না।

বিভিন্ন গুণীজনদের সঙ্গ

সঙ্গীতে তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সঙ্গীত। তবলায় তিনি সঙ্গত করেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলি আকবর খান, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে।

পুরস্কার

মোট সাতবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। চারবার এই আন্তর্জাতিক সম্মান পান।

মোমেন্ট রেকর্ড

১৯৯২ সালে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সঙ্গীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সঙ্গীতের খ্যাতিমান সেরা সঙ্গীতশিল্পী ও সমকালীন বিশ্বসঙ্গীত।

গ্র্যামি পুরস্কার

২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’–এর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবাম ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।

পদ্মশ্রী

১৯৮৮ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান।

পদ্মভূষণ

২০০২ সালে তিনি পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন।

পদ্মবিভূষণ

২০২৩ সালে তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়।

সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড

ভারতীয় সঙ্গীতে অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি।

শক্তি ব্যান্ডেরও সদস্য

তিনি ‘শক্তি’ ব্যান্ডেরও সদস্য ছিলেন। জন ম্যাকলাফলিন, শঙ্কর মহাদেবন, ভি সেলভাগণেশন, গণেশ রাজাগোপালানের এই ইন্দো-জ্যাজ ব্যান্ডের দিস মোমেন্ট অ্যালবাম এই বছরই গ্র্যামি পুরস্কার জেতে সেরা গ্লোবাল মিউজিক অ্যালবাম হিসাবে।

গ্লোবাল কনসার্ট

হোয়াইট হাউসে আন্তর্জাতিক জ্যাজ দিবস ২০১৬ অলস্টার গ্লোবাল কনসার্টে রাষ্ট্রপতি ওবামার আমন্ত্রিত অনেক সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে হোসেন ছিলেন।

তবলা বিট সায়েন্সের সদস্য

হুসেন ছিলেন বিল লাসওয়েলের ওয়ার্ল্ড মিউজিক সুপারগ্রুপ তবলা বিট সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

বহুমুখী প্রতিভা

গ্র্যামি ছাড়াও আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জাকির হোসেন। শুধু তবলাবাদক হিসাবেই নয়, তিনি অভিনেতা-মডেলও ছিলেন।

অভিনয়

১৯৮৩ সালে ‘হিট অ্যান্ড ডাস্ট’-এ প্রথম অভিনয়। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন ১৯৯৮ সালে, রাহুল দেব বর্মণের জীবনের উপরে তৈরি ‘সাজ’সিনেমায়, সেখানে রাহুল দেব বর্মণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এ বছর দেব পটেলের মাঙ্কি ম্যান সিনেমাতেও নিজের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

মডেল

১৯৯০-র দশকে ব্রুক বন্ড চায়ের বিজ্ঞাপন করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই লোকমুখে জনপ্রিয় হয়েছিল “বাহ তাজ”।

অমর শিল্পত্ব

শিল্পীর শিল্পত্ব চিরকালই অবিনশ্বর হয়ে থাকে। এর ব্যতিক্রমী নন্ তিনিও,চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনিও; থাকবেন মানুষের মনের অন্তরালে।

VIEW ALL

Read Next Story