নিজস্ব প্রতিবেদন: ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের নাগরিকদের তথা সমগ্র বাঙালি জাতীর কাছে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। বাংলাদেশে এই দিনটি ‘শহীদ দিবস’ হিসাবেও পরিচিত। তবে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে যত বাঙালি আছেন, তাঁদের সকলের কাছে দিনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসাবে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বাঙালিদের নিজের মাতৃভাষাকে জাতীয় তথা রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ১৯৫২ সালের এই দিনে পরাধীন বাংলাদেশে হাজার হাজার ছাত্র পুলিশের গুলি উপেক্ষা করে আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন। আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পাকিস্তানী পুলিশের নিষ্ঠুর গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন ছাত্র শহীদ হন। তাই এই দিনটি বাঙালিদের কাছে ‘শহীদ দিবস’।


ঐতিহাসিক ওই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো ছাত্র ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তানী পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার নিন্দায় হাজার হাজার বাঙালি সরব হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে প্রতিবাদে সামিল হন। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পর ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করার পর ৯ মে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ তখনও পরাধীন। তাই দেশের বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ক্ষোভের আগুন তখনও ধিকিধিকি করে জ্বলছিল বাঙালিদের বুকে। তাই পাকিস্তানের কাছ থেকে নিজেদের লুন্ঠিত স্বাধিনতা ছিনিয়ে নিতে মরিয়া বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের পথ বেছে নেন। এর পর ভারতের সহযোগিতায়, বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভিক সশস্ত্র সংগ্রামের হাত ধরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের কাছ থেকে নিজেদের স্বাধিনতা ছিনিয়ে নেয় বালাদেশ।


স্বাধীনতা লাভের পর দেশের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে যায়। এর পর ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ পাশ হয়। বিলটি কার্যকর হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ থেকে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর তার পর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে, শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে এই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’, যা যে কোনও বাঙালির কাছেই অত্যন্ত গর্বের।