সাক্ষাতেও `অমানবিকতা`র দেওয়াল তুলল পাকিস্তান
এদিন পাকিস্তানের তরফে কুলভূষণের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পরিবারকে দেখা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন কুলভূষণ যাদব।
নিজস্ব প্রতিবদেন: নির্ধারিত সময় ছিল মাত্র ৩০ মিনিট। ২২ মাস পর পরিবারকে কাছে পেয়ে অতটুকু সময়ে স্বাদ কি মেটে! তাই আরও ১০ মিনিট সময়ের আবেদন করেন কুলভূষণ যাদব। আর্জি মঞ্জুর হয়। পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রায় ৪০ মিনিট কথার্বাতা চলে কুলভূষণ ও তাঁর পরিবারের। যদিও পরিবারের কাছে আসতে দেওয়া হয়নি কুলভূষণকে। মাঝখানে খাঁড়া হয়ে থেকেছে কাচের দেওয়াল। এদিন ইন্টারকমের মাধ্যমে মা ও স্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতা সেরেছেন কুলভূষণ। কুলভূষণের মা অবন্তী এবং স্ত্রী চেতনাকুলের সঙ্গে ছিলেন ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার জেপি সিং। অন্যদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পাক বিদেশমন্ত্রকের ভারত বিষয়ক মহিলা কূটনীতিক ফারহা বুগতি।
আরও পড়ুন- ২২ মাসের বিচ্ছেদের পর ৩০ মিনিটের মিলন, মা-স্ত্রীর স্পর্শে কুলভূষণ
এদিন পাকিস্তানের তরফে কুলভূষণের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, পরিবারকে দেখা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন কুলভূষণ যাদব। তিনি বলেন, "পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মা এবং স্ত্রীকে দেখার জন্য আমিই অনুরোধ করেছিলাম।" তবে, সাংবাদিক বৈঠকে এদিনই কি শেষ সাক্ষাত্কার প্রশ্ন করলে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ফয়জল জানান, পরিবেশ পরিস্থিতে বিচার করে দেখা হবে।
তবে, সাক্ষাত্ পর্ব শেষে কুলভূষণ সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত বিষয়ও তুলে ধরেন পাক বিদেশমন্ত্রক মুখপাত্র মহম্মদ ফয়জল। তাঁর দাবি অনুযায়ী, এক, বালুচিস্তান থেকে কুলভূষণ যাদবকে হাতেনাতে পাকড়াও করে পাক সেনা। দুই, কুলভূষণ যাদব নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি 'র' (আরএডব্লিউ)- এজেন্ট। তিন, কুলভূষণ স্বীকার করেছেন, বেশ কয়েকজন পাকিস্তানিকে হত্যা করেছেন তিনি। পাকিস্তানি পুলিস অফিসার চৌধুরি আসলাম খানকেও হত্যা করেন কুলভূষণ। চার, পাকিস্তানের দাবি, ভারতের সন্ত্রাসবাদের মুখ হলেন কুলভূষণ। যদিও পাকিস্তানের এসব দাবিকে ভিত্তিহীন বলে গোড়াতেই খারিজ করে দিয়েছে ভারত।
আরও পড়ুন- পাকিস্তানে পৌঁছল কুলভূষণের পরিবার
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করার আগে তাঁর মা এবং স্ত্রীকে আপাদমস্তক পরীক্ষা করেন পাক নিরাপত্তা রক্ষীরা। জানা গিয়েছে, ওয়ান-টু-ওয়ান কথার বলার আর্জি জানানো হয় দু'তরফেই। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দেওয়া হয়। ফয়জল দাবি করেন, নিরাপত্তার জন্যই ওয়ান-টু-ওয়ান আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দুই পক্ষকে আলাদা রুমে বসানো হয়। মাঝে থেকেছে কাচের দেওয়াল। টেলিফোনের মাধ্যমে চলেছে কথপোকথন। দুপুর ২টো ১৮ মিনিট থেকে ২টো ৫৮ মিনিট পর্যন্ত চলেছে কুলভূষণদের আলাপচারিতা। তবে পরিবারের সঙ্গে কুলভূষণকে সরাসরি দেখা করার সুযোগ না দেওয়ায় পাকিস্তানকে তীব্র সমালোচনায় বিঁধেছে ভারতের রাজনৈতিক মহল। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, "এত বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা করছেন কুলভূষণ। অন্তত স্পর্শ করার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। দূর থেকে শুধুমাত্র কথা বলার অনুমতি দিয়ে পাকিস্তান নির্দয় মনোভাব দেখিয়েছে।"
আরও পড়ুন- বড়দিনে স্ত্রী, মায়ের সঙ্গে 'ক্ষণিকে'র দেখা হচ্ছে কুলভূষণের
মানবিকতার খাতিরে মহম্মদ আলি জিন্নার জন্মদিনে কুলভূষণকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়েছে বলে এদিন জানিয়েছে পাকিস্তান। এই সাক্ষাত্কারে ভারতীয় ডেপুটি হাই-কমিশনার উপস্থিত থাকার অর্থ কুলভূষণ যাদবের কাছে দূতাবাসের প্রবেশাধিকার। পাক বিদেশমন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফের এই মন্তব্য সম্প্রচার করে সে দেশের একটি টিভি চ্যানেল। দিল্লি পত্রপাঠ এই দাবি খারিজ করে দেয়। যদিও পরে পাক বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জানান, কুলভূষণের কাছে ভারতীয় দূতাবাসের প্রবেশাধিকারের কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে, এদিন পাকিস্তানের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে এই সাক্ষাত্কার পর্বকে তুলে ধরা হবে না। মামলার জেতার জন্য ব্যবহার করা হবে না। শুধুমাত্র মানবিক দিক বিচার করেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।