করোনা আক্রান্তদের সেবা করতে হাসপাতালে ফিরছেন মিস ইংল্যান্ড ভাষা মুখার্জী
মিস ইংল্যান্ড হওয়ার পর তাঁর হাতে যে বড় বড় এজেন্সির মডেলিং কন্ট্র্যাক্টের অভাব ছিল না তা বলাই যায়। কিন্তু সে পথে এগোননি ভাষা। মানুষকে সেবা করার লক্ষ্যে অবিচল ভাষা নিজের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগান।
নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথম সারিতে লড়াই করেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যেই একজন ভাষা মুখার্জী। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাষা একজন ব্রিটিশ চিকিত্সক ও সমাজসেবক। তবে, ভাষার আরও একটা পরিচয় রয়েছে। তিনি মিস ইংল্যান্ড ২০১৯।
যে কোনও ব্রিটিশ মডেলের কাছে মিস ইংল্যান্ডের মতো একটা বিউটি পেজেন্ট-এ অংশগ্রহণ করতে পারাটাই এক রুপালি জগতে প্রবেশের চাবিকাঠি। এক গ্ল্যামারাস জীবনযাত্রা, খ্যাতি ও অঢেল অর্থের পথ। মিস ইংল্যান্ডের টাইটেল জয়ের পর ভাষার হাতেও স্বাভাবিকভাবেই তাই এসেছিল সেই চাবিকাঠি। কিন্তু তিনি তো আর পাঁচজনের মতো নন। মডেলিংয়ের পাশাপাশি তাঁর যে চিকিত্সকের ডিগ্রি রয়েছে। নিজের মেধা ও মানবসমাজকে সাহায্য করার লক্ষ্যটা তাই ভুলে যাননি ভাষা। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সেবা করতে তাই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বছর ২৪-এর ভাষা।
কলকাতায় জন্ম। ব্রিটেনে বেড়ে ওঠা। শৈশব থেকেই বুদ্ধিমত্তায় আর পাঁচজনের থেকে অনেকটাই বেশি। ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী ভাষার আগ্রহ সমাজসেবায়। তাই মেধা ও সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতেই চিকিত্সাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন ভাষা। অন্যদিকে হবি হিসাবে চালাতে থাকেন মডেলিং। সৌন্দর্য্য, স্মার্টনেস, ফিটনেস ও মেধা দিয়ে মডেলিংয়ের জগতে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে বেশি সময় লাগেনি ভাষার। ডাক্তারি পড়তে পড়তেই সুযোগ পান মিস ইংল্যান্ডের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার। আর সেখানেও বাজিমাত করেন ভাষা।
মিস ইংল্যান্ড হওয়ার পর তাঁর হাতে যে বড় বড় এজেন্সির মডেলিং কন্ট্র্যাক্টের অভাব ছিল না তা বলাই যায়। কিন্তু সে পথে এগোননি ভাষা। মানুষকে সেবা করার লক্ষ্যে অবিচল ভাষা নিজের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগান। আফ্রিকা, তুরস্ক ও ভারতে দুঃস্থদের সেবায় পৌঁছে যান ডঃ মুখার্জী। তবে ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি গুরুতর পর্যায়ের দিকে এগোতেই চিকিত্সক হিসাবে কাজ করতে পৌঁছে যান তিনি।
চিকিত্সকের ভূমিকায় আবার ফেরার সিদ্ধান্ত কেন? ফক্স নিউজের প্রশ্নে অল্প হাসলেন ভাষা। বললেন, "খুব একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল না। ভারতের পরেও এশিয়ার আরও কিছু দেশে যাওয়ার কথা ছিল আমার। করোনাভাইরাসের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন একজন চিকিত্সক হিসাবে নিজের কর্মস্থলে ফিরে লড়াইয়ে অংশ নেওয়াই আমার পক্ষে সঠিক বলে মনে হয়।"
সংবাদসংস্থা সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে মিস ইংল্যান্ড জানান, মার্চ মাসে ভারতে সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত থাকাকালীনই তাঁকে ব্রিটেনের অবস্থার বিষয়ে জানান তাঁর হসপিটালের সহকর্মীরা। চিকিত্সক, নার্সদের উপর প্রচন্ড কাজের চাপের কথাও জানতে পারেন তিনি। তারপরেই নিজের কর্মস্থলে ফিরে সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
"তবে এখনই চাইলেও যোগ দেওয়াটা নিরাপদ নয়। অন্য দেশ থেকে এসেছি, তাই সতর্কতা হিসাবে ২ সপ্তাহ সেল্ফ আইসোলেশনে থেকে তারপর হাসপাতালে কাজে যোগ দেব", সংবাদমাধ্যমকে জানালেন ভাষা।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্রিটেনে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৫০,০০০-এরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬,০০০-এরও বেশি মানুষের।