ওয়েব ডেস্ক: দিনটা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবার। ভোর হওয়ারও আগে নর্থ ক্যারোলিনা হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন জেরেমি কলে। সন্তানের জন্ম দিতে দিয়ে কোমায় চলে গিয়েছেন স্ত্রী শেলি।
তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল গোটা পরিবার।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

শেলিকে পরীক্ষা করে চিকিত্সকরা দেখেন রক্তচাপ ৬০/৪০, হৃদস্পন্দন মিনিটে ১৮০। চিকিত্সকরা বলেছিলেন "লাস্ট-চান্স ভেন্টিলেটর।" সদ্যজাত শিশুর বয়স তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তবে তখনও মিরাকলের আশা ছাড়েননি চিকিত্সকরা। জেরেমি বলেন, "হাসপাতালের নার্সরা আমাকে বলেন শিশুটিকে কোনও পোশাক ছাড়া শেলির বুকের ওপর রাখতে। যাতে নিজের সন্তানের শরীর অনুভব করতে পারে শেলি। শুনতে পায় তার হৃদস্পন্দন, শিশুর গায়ের গন্ধে অনুভব করে মাতৃত্বের স্বাদ। এই অনুভূতিই তাকে লড়াই করার শক্তি জোগাবে।"


সেই অনুযায়ী শিশু রায়লানকে শুইয়ে দেওয়া হয় মায়ের বুকের ওপর। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ে রায়লান। তাকে কাঁদাতে চিমটি কাটেন চিকিত্সকরা। রায়লান কেঁদে উঠতেই মায়ের মর্মস্থলে পৌঁছয় সেই কান্না। এর ১ সপ্তাহ পর জেগে ওঠেন শেলি। ফিরে এসে শেলি বলেন, "খুব অদ্ভুত অনুভূতি...স্বপ্ন ও বাস্তবের মাঝামাঝি একটা অবস্থায় ছিলাম আমি। রায়লানের মুখ যেন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন জানতাম না এক সপ্তাহ ঘুমিয়ে ছিলাম আমি। ফিরে আসার পর রায়লানকে প্রথম দেখি আমি।"


দেখুন মর্মস্পর্শী সেই ভিডিও,



৩৫ বছরের জেরেমি কলে এখন কনকর্ডের ওয়াইএমসিএ ডিরেক্টর, ২৪ বছরের এন সি শেলি কলে নার্সিয়ের ছাত্রী। জানান, সন্তান ধারণের চেষ্টা তারা করছিলেন না, আবার সন্তান না আসুক এমনটাও চেষ্টা ছিল না তাদের। শেলি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় খুব খুশি ছিলেন তারা। স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন শেলি। সেইমতো স্বামী স্বাভাবিক জন্মের বিশেষ ক্লাসেও নিয়ে যেতেন। বলেন, "যাকে ভালবাসেন তার সন্তান যখন আপনার গর্ভে থাকে তখন অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। আমি জেরেমিকে সব অনুভূতির অংশীদার করতে চেয়েছিলাম। সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু হঠাত্ই কেমন যেন সব গোলমাল হয়ে গেল।"


ডেলিভারির এক মাস আগে চিকিত্সকরা জানান শেলির পায়ে রক্তজমাট বেঁধে রয়েছে। ব্লাড থিনারের সাহায্যে চিকিত্সা শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ আসে সেই দিন। ক্যারোলিন মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিত্সকরা অপেক্ষা করতে থাকেন গর্ভযন্ত্রনার। কিন্তু গর্ভযন্ত্রনা শুরু হয় না। চিকিত্সকরা জানান প্রি-একলাম্পশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন শেলি। এক বিরল সমস্যা HELLP সিনড্রোম দেখা দিয়েছে যার থেকে বেঁচে ফেরা শুধুই ভাগ্যের লিখনেই সম্ভব।


রাত সাড়ে ১১টা অপারেশন করেন চিকিত্সকরা। শেলি বলেন, "আমি ভয় পেয়েছিলাম আমার জ্ঞান ফিরবে না। জানি না কেন এমনটা হয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।" রায়লানের জন্মের কিছু সময় পরই চিকিত্সকরা জেরেমিকে জানান শেলির ফুসফুসে ফ্লুইড ভরে গিয়েছে। পালমোনারি এমবলিজমের ফলে কোমায় চলে গিয়েছেন শেলি। ২১ ইউনিট ব্লাড পাম্প করা হয় শেলির শরীরে। ভেন্টিলেটরে জীবিত রাখা হয় তাকে। অবশেষে শেষ চেষ্টা করতে রায়লাকে শেলির বুকের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেন চিকিত্সকরা।


ঠিক ৭ দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ফিরে আসেন শেলি।