`অপবিত্র নয় ঋতুমতী মহিলা`, আইন পাশ করে `ছৌপদী` নিষিদ্ধের পথে নেপাল
সুদেষ্ণা পাল
ভারতে যা এখনও হয়নি, সেটাই করে দেখাল নেপাল। সেদেশের সংসদ আইন পাশ করে 'ছৌপদী'কে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটল। 'ছৌপদী', ঋতুমতী কিশোরী থেকে যুবতী এবং মহিলাকে আলাদা করে রাখার 'সনাতনী' প্রাচীন প্রথা।
ঋতুস্রাবের সময় কোনও মহিলাকে 'অপবিত্র' ও 'দূষিত' বলে মনে করত নেপালের মানুষ। তাই সেইসময় কোনও পুরুষের সংস্পর্শে আসা, ধর্মীয় উপকরণ ও গবাদি পশুকে ছোঁয়া ছিল 'পাপ'। তাদের রাখা হত 'অচ্ছুত্' করে। ঘরের বাইরে একটা ছোট্ট কুঁড়েঘর বা গোশালায় থাকতে বাধ্য করা হত তাদের। 'ছৌপদী' নামে মহিলাদের উপর চলত নারকীয় নির্যাতন। অনুশাসন না মানলে চলত অকথ্য অত্যাচারও। এমনও হয়েছে, বহু যুবতী-মহিলা প্রাণ হারিয়েছেন এই 'ছৌপদী'র সময়।
নয়া আইনে বলা হয়েছে, 'ছৌপদী' দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনও মহিলাকেই এখন থেকে আর ঋতুস্রাবের সময় এভাবে আলাদা করে রাখা যাবে না। তাঁদের সঙ্গে কোনও অমানবিক বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। আইন ভাঙলে হবে তিন মাসের জেল। সঙ্গে ৩০০০ টাকা জরিমানাও। সংসদে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে প্রস্তাবিত এই আইন। পাশ হওয়ার একবছরের মধ্যেই কার্যকর হবে নয়া আইন, এমনই সূত্রের খবর।
তবে, একদিকে পড়শি দেশ যখন 'ঐতিহাসিক' আইন পাশ করে শতাব্দী প্রাচীন এই কুসংস্কারকে দূরে ছুঁড়ে ফেলছে, তখন ভারতের ছবিটা কিন্তু একটু আলাদা। ভারতে এখনও ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের ধর্মীয়স্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ! কারণ, সেসময় তারা নাকি 'অপবিত্র'! শুধু ধর্মীয়স্থান কেন? এখনও দেশের অধিকাংশ বাড়িতেই পিরিয়ডের সময় পুজোর ঘরে যাওয়া, পুজোর কাজ করা নিষিদ্ধ। কোনও শুভ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াও মানা।
বহু গ্রামের মহিলাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ঋতুস্রাব নিয়ে ন্যূনতম সচেতনাটুকুও নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে 'কাপড়' পরিষ্কার করতে গিয়ে, অনেকসময়ই মানা হয় না স্বাস্থ্যবিধি। এখানেই শেষ নয়। ঋতুস্রাব চলাকালীন অনেক দরিদ্র মহিলা ছাই, বালি, এসব ব্যবহার করছেন, সেরকম উদাহরণও সামনে এসেছে।
'ঋতুস্রাব কখনই অপবিত্র নয়'। আইন করে যেখানে 'ছৌপদী'র মত অপরাধ বন্ধ করতে চলেছে নেপাল, সেখানে আর কবে প্রগতিশীলতার পথে হাঁটবে ভারত? প্রশ্ন সব মহলেই!
আরও পড়ুন, বিশ্বের এই দেশগুলোতে নারীর সঙ্গে চলে 'নারকীয় অত্যাচার'!