নিজস্ব প্রতিবেদন: উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেলেও সমুদ্রের গভীরে বরফের ভারসাম্য মোটামুটি অটুট ৷ এমনই জানাচ্ছেন, অভিযাত্রী-কাম-গবেষকের দল। এক অভিযাত্রী তাঁদের অভিযানের মাঝেই বিপুল তথ্য নিয়ে মূল ভূখণ্ডে ফিরেছেন ৷ সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি৷ 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

উত্তর মেরু অঞ্চলে বরফের পরিবর্তনের রহস্য নিয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী এবং সমুদ্রবরফ বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, উত্তরমেরু পৌঁছনোর পর বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, অক্টোবর মাসে বরফ মাত্র ৩০-৫০ সেন্টিমিটার পুরু ছিল ৷ শীতকালে, অর্থাৎ, এর পরের পাঁচ-ছ'মাসের মধ্যে সেই স্তর বেড়ে প্রায় ২ মিটার ছুঁয়েছে ৷ মোটকথা বরফের চাদর প্রায় চার গুণ বড় হয়েছে ৷ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যবেক্ষণ।


নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে কী বলা হচ্ছে? গ্রীষ্মকালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা গিয়েছে, গত ৪০ বছরে বরফের প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছে ৷ গ্রীষ্মের শেষে মরসুমের শুরুতে বরফ বেশ পাতলা ছিল ৷ কতটা পাতলা? ৩০ বছর আগে নব্বইয়ের দশকে সাইবেরিয়ার মেরু অঞ্চলে পরিমাপ করে পাওয়া পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা ৷ কিন্তু শীতের শেষে বরফের চাদরে তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি বলা চলে। গ্রীষ্মে শুধু যে বরফের উপরিভাগেই পরিবর্তন চোখে পড়ে তা নয়, বরফের গভীরতার ক্ষেত্রেও সেই বদলটা দেখা যায় ৷ শীতকালে বরফস্তর কিন্তু সেই ধাক্কা ভালো ভাবেই সামলে নেয়।


গ্রীষ্মের শেষে বরফ পাতলা হয়ে যাওয়ার পরে শীতে আবার তা পুরু হওয়ার বিষয়টা বেশ অদ্ভুত ৷ মনে করা হচ্ছে,অপেক্ষাকৃত পাতলা বরফ মহাসাগরকে আরও দ্রুত ও আরও সহজে উত্তাপ হারাতে বাধ্য করে ৷ এর ফলে আরও বরফ সৃষ্টি হয় ৷ শীতের শেষে বরফের পুরুত্ব তাই তিরিশ বছর আগের মতোই হয়ে যায় ৷ এমন প্রবণতা সত্ত্বেও অবশ্য বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, ২০৫০ সালে উত্তর মেরু অঞ্চলে সম্ভবত কোনও বরফই দেখা যাবে না ৷


কিন্তু সেই নমুনা নিয়ে কী করা হল?


জার্মানির আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউটের আইসল্যাবে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার স্থিতিশীল শীতল পরিবেশ বজায় রাখা হয় ৷ সেখানেই উত্তর মেরু অভিযানে সংগৃহীত বরফের নমুনা আনা হয় ৷ ক্রিস্টিয়ান বলেন, একমাত্র এমন পাতলা স্তর প্রস্তুত করলেই বরফের বিবর্তনের প্রক্রিয়া চোখে দেখা যায় ৷ শান্ত পরিবেশে ধীরে ধীরে উপর থেকে নীচে বরফ সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা-ও জানা যায় ৷ সে ক্ষেত্রে লম্বা থামের মতো ক্রিস্টাল সৃষ্টি হয় ৷ তা ছাড়া শক্তিশালী ঢেউ ও জলের আলোড়নের কারণেও বরফ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে ৷


ভবিষ্যতে উত্তর মেরু সাগর আরও উত্তাল হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ক্রিস্টিয়ান ৷ তখন আর লম্বা থামের মতো বরফের স্ফটিক তৈরির উপায় থাকবে না ৷ কারণ পরিবর্তনশীল বরফের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মেরু সাগরের অবস্থাও বদলে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেশি দেখা যাবে দানাদার বরফ ৷ এ সব কারণে উত্তর মেরু অঞ্চলকে আরও ভালো করে জানা দরকার। দরকার আরও তন্নিষ্ঠ গবেষণা। 


আরও পড়ুন: পুলিশের সদর দফতরের সামনেই নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা রুশ সাংবাদিকের