নির্ণয় ভট্টাচার্য্য


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বড়দিনে বড় খবর। সমাধি খুঁজে পাওয়া গেছে সান্তা ক্লজের! এমনটাই দাবি করছেন তুরস্কের একদল প্রত্নতাত্ত্বিক।


এ বছরের মতো জিঙ্গল বেল বেজে  গিয়েছে...বড় দিনের বাজারে বড় দাড়িওয়ালা সাদা পেড়ে লাল জোব্বা-টুপির সান্তা দাদুর আবির্ভাবও ঘটেছে ফি বছরের মতোই। রাত-বিরেতে এসে ছোট শিশুদের মোজায় উপহার ভরে দেওয়ার দায়িত্বও সেরে ফেলেছেন তিনি। আজকাল অবশ্য শুধু ছোটরাই নয়, বয়সের বেড়া টপকে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই বড় দিনের উদযাপনকে আরও বড় করে তুলতে মাথায় চড়ান সান্তা টুপি। নববর্ষের প্রাক্কালের এই দিন সাতেক ধরিত্রী তাই সান্তাময়। আর এভাবেই দেশ-কালের কাঁটাতার মুছে দিয়ে তিনি বিশ্বময় চলমান এক মিষ্টি মিথ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সান্তার সমাধি! ব্যাপারটি কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?


আসলে মিথ ও মিথ্যা কথা দুটি ঠিক সমার্থক না হলেও কেমন যেন কাছাকাছি শুনতে। অনেকে আবার বলেন, মিথ নাকি বহু ক্ষেত্রেই মিথ্যা। তবে কি সান্তা ক্লজও মিথ অর্থাত্ মিথ্যা? আজ্ঞে, উত্তরটা এক কথায় দেওয়া যাবে না। যেটা খবর তা হল, তুরস্কের একদল প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করছেন যে, তাঁরা সন্ত নিকোলাস অর্থাত্ সান্তা ক্লজের সমাধি চিহ্নিত করে ফেলেছেন। এটুকু পড়েই চমকাবেন না, চমক এখনও অনেক বাকি...  


কী বলছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা?


তুরস্কের আন্তালিয়া প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন সেন্ট নিকোলাস ওরফে সান্তা ক্লজ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, এই প্রদেশেরই সেন্ট নিকোলাস চার্চের নীচে একটি সৌধ-সহ সমাধিক্ষেত্র খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। তুর্কি সংবাদপত্র হুরিয়েত-কে প্রত্নতাত্ত্বিক দলের প্রধান সিমিল কারাবেরাম জানিয়েছেন, "আমরা এখনও পর্যন্ত কাজ করে খুব ভাল ফলাফল পেয়েছি, কিন্তু আসল কাজ শুরু হবে এবার।" তাঁর আশা, "আমরা ওই সমাধিক্ষেত্রে পৌঁছে যাব এবং হয়ত সেন্ট নিকোলাসের অক্ষত দেহও দেখতে পাব"।


শিশু ও দুঃস্থদের উপহার দেওয়া ও সাহায্য করার জন্য চতুর্থ শতাব্দীর এই সন্ত বিশ্বময় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি আন্তালিয়ার ডেমরে জেলায় তাঁর জন্মস্থানটির সংস্কার সাধন হয়েছে এবং সেখানে বহু দর্শনার্থী আসছেন। বিশ্বাস অনুযায়ী মাইরা এলাকায় সেন্ট নিকোলাস দীর্ঘ সময় বসবাস করেছেন এবং সেখানে তাঁর অসংখ্য খ্রিষ্টান ভক্তরাও রয়েছেন। আর এই মাইরা ধ্বংস হওয়ার পরই ডেমরের সংস্কার সাধন করা হয়েছে।



সেন্ট নিকোলাস গির্জা।


মুখে মুখে ফেরা ইতিহাস-


মনে করা হয়, মৃত্যুর পর সেন্ট নিকোলাসের দেহাংশ ডেমরে থেকে ইতালির বারি শহরে চুরি করে নিয়ে যায় বেশ কিছু মাঝি। আর এই বারিতেই (এখনও) রয়েছে সেন্ট নিকোলাস ব্যাসিলিকা। নিকোলাস ব্যাসিলিকা, আসলে সেন্ট নিকোলাসের নামে তৈরি বিখ্যাত এক গির্জা। সমগ্র খ্রিষ্ট সমাজের কাছে তীর্থস্থান হিসাবে এই ব্যাসিলিকার গুরুত্ব অপরিসীম। মতভেদ সরিয়ে রেখে রোমান ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে ধর্মাচরণে আসেন।


তত্কালীন ঘটনাক্রম অনুসারে, ডেমরে থেকে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্গত বারিতে (যা বর্তমানে তুরস্ক) সেন্ট নিকোলাসের দেহাংশ চুরি করে নিয়ে আসা হয়েছিল। নিকোলাসের মৃত্যুর ৭০০ বছর পর প্রথম ক্রুসেডের (ধর্মযুদ্ধ) সময় মুসলিম আগ্রাসনের শিকার হয় দেহাবশেষ বিশিষ্ট গীর্জা। ঠিক সেই সময় ভেনিসে তাঁর দেহাংশ নিয়ে চলে আসা হয় এবং সেখানে তা আজও রক্ষিত আছে বলেও বিশ্বাস।


আরও পড়ুন- 'মেরি ক্রিসমাস'! দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর


আধুনিক উপলব্ধি-


মুখে মুখে ফেরা এই ইতিহাসকে একেবারেই আমল দিচ্ছেন না আজকের প্রত্নতাত্ত্বিকরা। সেই সময়ের নথিপত্র পরীক্ষা করে তুরস্কের বর্তমান প্রত্নতাত্বিকরা মনে করছেন, যে দেহাংশ নিয়ে এত কাড়াকাড়ি তা আসলে স্থানীয় কোনও পাদ্রির, সেন্ট নিকোলাসের দেহাংশ কখনই না। কারণ, যেসময় মাঝি-মল্লারা চুরি করেন বলে জানা যায়, ঠিক সেই সময়তেই গীর্জায় আগুন লাগে। বিরাট অগ্নিকাণ্ডে ভষ্মীভূত হয়ে যায় ডেমরার তত্কালীন গীর্জা। পোড়া গীর্জাতে তখন দগ্ধ হন এক পাদ্রী। চোরেরা মনে করে, গত হয়েছেন জনপ্রিয় সন্ত নিকোলাস। আর তাই পবিত্র দেহাংশ চুরি করে পালায় তারা। কিন্তু সেই দেহাংশ নিকোলাসের বদলে স্থানীয় এক পাদ্রীর। প্রত্নতাত্ত্বিকদের তাই স্থির বিশ্বাস, সন্ত নিকোলাসের শরীর এখনও শায়িত রয়েছে সৌধের অন্দরে।


আরও পড়ুন- ক্রিসমাসের ছুটি উপলক্ষে দিঘায় বিচ কার্নিভাল, উপচে পড়ছে ভিড়


পরবর্তী সময়ে পুড়ে যাওয়া গীর্জার জায়গাতেই নতুন করে গড়ে ওঠে গীর্জা এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা ভূমিভেদী রেডার ব্যবহার করে পরীক্ষা করে দেখেন, আধুনিক গীর্জাটির নীচে এখনও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে সৌধটি। ফলে প্রত্যাশা অনুযায়ী সেখানেই যদি শায়িত থাকেন সন্ত নিকোলাস তাহলে তাঁর দেহের নাগাল আজ অবধি পায়নি কেউই, পাওয়া সম্ভবও নয় বলে দাবি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকরা পড়েছেন অন্য সমস্যায়। সৌধটি অবিকৃত থাকলেও সেখানে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না বড় বড় পাথর এবং মোজাইক থাকায়। ওই পাথর ও মোজাইককে সরিয়ে তা সংরক্ষণ করে ভিতরে ঢুকতে চান তাঁরা। এতদিন সমস্যা হলেও, এবার সরকারি মহল থেকে প্রত্নতাত্বিকদের খনন কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে, দ্রুতই পরখ করে দেখা যাবে সান্তা ক্লজের রূপকথা। তবে ঠিক কোন সময়ে মারা গিয়েছিলেন সেন্ট নিকোলাস, এবিষয়ে ধোঁয়াশা প্রত্নতাত্ত্বিক মহলে।


সেন্ট নিকোলাস, সান্তা ক্লজ হলেন কী করে?


সেন্ট নিকোলাসের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে দেশ দেশান্তরে। তাঁর উপহার দেওয়ার ব্যাপারটি মিথ হয়ে যায় সাবেক নেদারল্যান্ডসে। সেদেশে আজও সমারহে পালিত হয় সিন্টারক্লাস অনুষ্ঠান। ৬ ডিসেম্বর দিনটিকে সেন্ট নিকোলাসের 'নাম দিবস' হিসাবে উদযাপন করে ডাচ জনতা। নেদারল্যান্ডের উত্তরাংশে ৫ই ডিসেম্বর 'নিকোলাস ইভ'-এ উপহার দেওয়া হয় সমাজের সব অংশকে। দেশের দক্ষিণাংশ-সহ বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্স ও উত্তর ফ্রান্সে ৬ ডিসেম্বর সকালে উপহার দানের মাধ্যমে উদযাপিত হয় দিনটি। ডাচ-রা তাঁদের উচ্চারণ শৈলি অনুযায়ী তাঁদের মধ্য তুমুল জনপ্রিয় সেন্ট নিকোলাসকে ডাকতেন 'সিন্টারক্লাস' নামে। আর পরবর্তীকালে এই ডাচদের একাংশ আমেরিকায় চলে যান ভাগ্যান্বেষণে। সে দেশ তখন বাণিজ্য ও বিপণনে বিশ্বের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে। ফলে আমেরিকা তার ডাচ অভিবাসীরা ভাষা অনুকরণ করল নিজেদের মতো করে। আর সেখান থেকেই সিন্টারক্লাস মার্কিন উচ্চারণে ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন সান্তা ক্লজ।