ওয়েব ডেস্ক: সিরিয়ায় মার্কিন হামলার পর কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবধারিত? এই প্রশ্নেরই এখন জবাব খুঁজছেন বিশ্বের তামাম দেশের নেতা ও কূটনীতিকরা। শুক্রবার রাতে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে বাশার আল আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন দাবি অস্বীকার করে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, কোনও হামলা হয়নি। পুরোটাই চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা। 
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। সিরিয়ার পাশে রয়েছে ইরান। বিশ্বশক্তির এই মেরুকরণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছে দু'পক্ষ। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে বাশার আল আসাদ সরকার। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএসও। বরাবর সিরিয়ার আসাদ সরকারের পাশে থেকেছে রাশিয়া। আইএসকে ধ্বংস করতে আসাদ সরকারকে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ওদিকে সিরিয়ায় মার্কিন অবস্থান বেশ ঘোলাটে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হামলা চালালেও আসাদ সরকারের পক্ষে কথা বলতে নারাজ তারা। এব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে রয়েছে ফ্রান্স, ব্রিটেনের মতো ন্যাটোভুক্ত অন্য শক্তিগুলি। সিরিয়া-সহ ভূমধ্যসাগর লাগোয়া মধ্যপ্রাচ্যে কার আধিপত্য থাকবে এই নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই বিবাদ লেগে রয়েছে দুপক্ষের। 



বিবাদ চরমে পৌঁছয় মাসখানেক আগে। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস লাগোয়া পূর্ব গৌতায় বিদ্রোহীদের শেষ ঘাঁটিতে হামলা চালায় আসাদের বাহিনী। অভিযোগ, রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় কয়েকশ নীরিহ নাগরিককে। তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে। যদিও প্রতিবারই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিরিয়া। 


উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়েছে, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত হামলা চলবে। ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কোনও পরিস্থিতিতেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অপমান মেনে নেবে না তারা। সঙ্গে তাদের দাবি, মধ্যপ্রাচ্যের দখল রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সন্ত্রাসবাদকে মদত দেবে। 


ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই মৃত্যু লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গলের


বলে রাখি, সিরিয়ায় শুক্রবার রাতে মার্কিন হামলা কোনও অনুমোদন মেলেনি রাষ্ট্রসঙ্ঘ থেকে। হামলার অনুমতির জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনেরও পরোয়া করেননি ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে জবাব দেওয়ার জন্য ফুঁসছে রাশিয়া। সিরিয়া - লেবানন সীমান্ত রাশিয়ার ২টি বিমানঘাঁটি রয়েছে। সেখানে মজুত রয়েছে প্রায় ৩০০০ রুশ সেনা। ওদিকে সিরিয়া ও লাগোয়া তুরস্কে মজুত রয়েছে প্রায় ২০০০ মার্কিন সেনা। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্মুখ সমরে নামলে রাশিয়ার পাশে এসে দাঁড়াতে পারে পরমাণু শক্তিধর দেশ চিন ও উত্তর কোরিয়া। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। 


রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকচা-আকচিতে তৃতীয় একটি তত্ত্ব খাড়া করছে জোটনিরপেক্ষ শক্তির সদস্যরা। তাদের মতে, পুরোটাই মার্কিন ও রুশ অস্ত্রব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে। তাঁদের মতে, মার্কিন প্রশাসনে সেদেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের প্রভাব সর্বজনবিদিত। যার ফলে সেদেশে চেষ্টা করেও মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধ করতে পারে না সরকার। গত কয়েক দশক ধরে এই অস্ত্রব্যবসায়ীদের স্বার্থেই সব সময় গোটা বিশ্বে কোথাও না কোথাও যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৬ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস করার নামে সাদ্দাম হুসেনের ইরাকের ওপর হামলা চালালেও আজ পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার করে দেখাতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তার আগে কখনো আফগানিস্থানে তালিবান দমনের নামে কখনো ভিয়েতনামে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে মার্কিনিরা।


ওদিকে সিরিয়ায় মার্কিনি হামলার খবর ছড়াতেই আন্তর্জাতিক বাজারে চড়েছে অপরিশোধিত তেলের দর। শনিবার ব্যারেল প্রতি ০.৩৯ সেন্ট বেড়েছে অপরিশোধিত তেলের দাম। যুদ্ধ সত্যিই বাঁধলে তেলের দাম আকাশ ছোঁবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।