জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাষ্ট্রের মর্যাদা নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে চিন এবং তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ানের ভূখণ্ডের উপর সবসময় নিজেদের কর্তৃত্ব দাবি করে এসেছে চিন। একই সঙ্গে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একে যুক্ত করার কথাও জানিয়েছে তারা। তাইওয়ানের সঙ্গে যেকোনও সামরিক সংঘর্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। তাইপেইয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সেই কারনেই এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু চিনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক খারাপ কেন?


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কি করে শুরু হল সমস্যা?


১৯৪৯ সালে চিন এবং তাইওয়ান আলাদা হয়ে যায়। সেই বছর মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা জয় পায় এবং চিনের গৃহযুদ্ধ শেষ হয়। পরাজিত জাতীয়তাবাদীরা তাইওয়ানে সরে যায়। মাওয়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং কুও মিন তাং (কেএমটি) পার্টির প্রধান চিয়াং কাই-শেক এদের নেতৃত্ব দেন।


সেই সময় থেকে তাইওয়ান, স্বাধীনভাবে শাসিত হয়েছে। তাইওয়ান সেই সময় থেকে চিন প্রজাতন্ত্র হিসাবে পরিচিত। অন্যদিকে মূল ভূখণ্ডকে গণপ্রজাতন্ত্রী চিন বলা হয়। এই দ্বীপটি তাইওয়ান প্রণালী দ্বারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। তাইওয়ানে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। এই দ্বীপে প্রায় ২৩ মিলিয়ন মানুষের বসবাস করেন।


সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে, বেজিং তাইওয়ানকে একটি চিনা প্রদেশ হিসাবে মনে করে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা বার বার করেছে চিন।


তাইওয়ানের আন্তর্জাতিক অবস্থান কী?


বেজিং প্রথম থেকেই তাদের ‘এক চিন’ অবস্থানে অনড়। তাঁরা এও মনে করে যে তাইওয়ান এই ‘এক চিনের’ অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রিথিবির বিভিন্ন দেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করেছে বেজিং। তাদের মূল দাবি দেশগুলির আনুগত্য পরিবর্তন করে সেটা থাকতে হবে চিনের প্রতি। একই সঙ্গে তাইওয়ানের সঙ্গে সবরকম কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্যেও চাপ দেওয়া হয় তাদেরকে।


বর্তমানে মাত্র ১৪টি দেশ তাইওয়ানের সঙ্গে নিজেদের সরকারি কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।


অন্যদিকে তাইপেই জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাগুলির সদস্য নয়। যদিও তাদের কাছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো সংস্থাগুলির সদস্যপদ রয়েছে।


তাইওয়ানকে চিনের অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য চিন বিশ্বব্যাপী কোম্পানিগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করেছে বহুদিন ধরে। যে সমস্ত দেশের সরকার এবং সংস্থাগুলি এই ইস্যুতে বেজিংয়ের লাইনের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করেছে তাদের চিন সরকারের কাছ থেকে এর প্রতিক্রিয়া পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।


২০২১ সালে, লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় চিন। কারন হিসেবে জানানো হয় ইইউ-এর সদস্য দেশ লিথুয়ানিয়ার রাজধানীতে তাইওয়ানের প্রতিনিধি অফিস খোলার জন্য অনুমতি দেয় তারা।


আমেরিকার সঙ্গে কেমন সম্পর্ক তাইওয়ানের?


চিনের মূল ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রায় তিন দশক ধরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইপেইকে সম্পূর্ণ চিনের সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৯৭৯ সালে, ওয়াশিংটন তাইওয়ানের সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রত্যাহার করে। এরপরেই চিনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে আমেরিকা।


কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থানান্তর হওয়া সত্ত্বেও, তাইপেইয়ের সঙ্গে বেসরকারিভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে ওয়াশিংটন।


তাইওয়ানের আত্মরক্ষার জন্য তাদের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি অব্যাহত রেখেছে আমেরিকা। যদিও বেজিং বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই কাজ থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছে। মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজও তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে নিয়মিতভাবে জাতাওাত করে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে আমেরিকা নিজেদের সামরিক শক্তিকে প্রজেক্ট করে।


আরও পড়ুন: Taiwan Crisis: তাইওয়ানের আকাশে প্রবেশ চিনা যুদ্ধবিমানের! আমেরিকাকে বিশেষ বার্তা?


যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তাদের লক্ষ্য তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এই লক্ষ্যে তাঁরা এখনও অবিচল বলেই জানিয়েছে আমেরিকা।


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের সামরিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়। দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এই সময়ে। দ্বীপরাষ্ট্রে ১৮ বিলিয়ন ডলার দামের অস্ত্র বিক্রি করেছে আমেরিকা।


প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, চিন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করবে।


চিন কি যুদ্ধ করবে তাইওয়ানের সঙ্গে?


জোর করে চিনের সঙ্গে তাইওয়ানকে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি কখনও অস্বীকার করেনি বেজিং। ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে একটি বক্তৃতায়, চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দুই দেশের মিশে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে এই স্থিতাবস্থা চিরতরে চলতে পারে না।


সেই সময় তিনি বলেন, ‘আমরা শক্তির ব্যবহার পরিত্যাগ করার কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত উপায় গ্রহণের করার বিষয় নিজেরা ভাববো।‘


শি আরও জোর দিয়ে বলেন যে ২০৪৯ সালের মধ্যে যদি চিনকে বিশ্বে তাদের দেশের মহান-শক্তির মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হয় তাহলে চিনের সঙ্গে তাইওয়ানের মিশে যাওয়া অপরিহার্য।


বর্তমানে যখন আমেরিকার হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে রয়েছেন, ঠিক সেই সময়ে তাইওয়ানের সীমান্ত এলাকায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে চিন। তাইওয়ানের সীমান্তের কাছে নিজেদের যুদ্ধ বিমান, বোমারু বিমান এবং নজরদারি বিমান পাঠানো শুরু করেছে তারা। পাশাপাশি তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে যুদ্ধজাহাজও পাঠানো শুরু করেছে চিন।


চিনের দ্রুত বাড়তে থাকা সামরিক সক্ষমতা এবং শক্তি ব্যবহারের ইচ্ছা সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারন দুই দেশের মধ্যে ক্রমাগত সম্পর্কের অবনতি হওয়া শুরু হয়েছে।


চিন এবং তাইওয়ানের সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা কী?


২০১৬ সালে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাই ​​ইং-ওয়েন। এর পর থেকে ক্রস-স্ট্রেট উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। Tsai এর অধীনে, আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার আন্দোলন গতি পেয়েছে তাইওয়ানে।


প্রেসিডেন্টের ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি দ্বীপের স্বাধীনতার পক্ষে লড়াই করেছে শুরু থেকেই।


Tsai ১৯৯২ সালের ঐকমত্যের অস্তিত্বকে বিতর্কিত বলে ঘোষণা করেন। ১৯৯২ ঐক্যমত একটি রাজনৈতিক চুক্তি যা তাইপেই এবং বেজিংয়ের প্রতিনিধিদের মুধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের প্রকৃতি কিরকম হবে সেই সিদ্ধান্তে পৌছায় দুই দেশ। এই ঐক্যমতে উভয় পক্ষই সম্মত হয় যে শুধুমাত্র একটিই চিন রয়েছে। যদিও এর প্রকৃত অর্থ কী সেই বিষয় এই দুই দেশের মধ্যে ভিন্ন মতামত ছিল।


আরও পড়ুন: Chile Mysterious Sinkhole: কোথা থেকে এল এই বিশালাকৃতি গর্ত! কী রহস্য লুকিয়ে...


Tsai এবং ডিপিপি ২০২২ সালের জন্য প্রতিরক্ষা ক্ষাতে প্রায় রেকর্ড ১৭ বিলিয়ন ডলার (€16.7 বিলিয়ন) বাজেট বরাদ্দ করেছে। একি সঙ্গে প্রতিরক্ষা ক্ষাতে ব্যয়ও বাড়িয়েছে তারা।


Tsai-এর ছয় বছরের কার্যকালে এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনও নৌ যুদ্ধজাহাজে চড়েন। যেখানে তিনি দেশের বৃহত্তম বার্ষিক নৌ ও বিমান অনুশীলনের তত্ত্বাবধান পর্জবেক্ষন করেন। দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর সংকল্পের প্রশংসা করেন তিনি।


চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপের মুখে যুদ্ধ প্রস্তুতি বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ এই মহড়া। এই মহড়ায় একটি আক্রমণকারী শক্তিকে কীভাবে প্রতিহত করা হবে সেই বিষয় অনুশিলন হয়েছে।


এই মহড়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে, চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান তাইওয়ানের যেকোনও সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে চিনের যে সতর্কবার্তার তারই পুনরাবৃত্তি করেন।


তিনি বলেন, "চিনকে সামরিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য তাইওয়ানের প্রচেষ্টা একটি রথকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করার মতো একটি ঘটনা। শেষ পর্যন্ত, একে ব্যর্থ হতেই হবে।"


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)