সৌমিত্র সেন


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

করোনার জেরে গত দু'বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে পর্যটন ব্যবসা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে মানুষ নিজে থেকেই বেরোতে চাননি বাড়ি থেকে। তবে এখন করোনার প্রেক্ষিতে বিশ্ব-পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল। সংক্রমণের ভয় কমেছে, সংক্রমণেজনিত রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জুড়ে টিকাকরণ চলছে। সবে মিলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্কও কমেছে। মানুষ এখন যেন একটু একটু ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটু হাওয়া বদল করে আসতে চাইছেন। 


আর এই আবহেই এল এ বছরের বিশ্ব পর্যটন দিবস। আজ, ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস। আধুনিক সময়ে এই পর্যটন দিবসের কথাটা ভাবা হয়েছে অবশ্য বিশ্ব জুড়ে ভ্রমণের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধের সংমিশ্রণের দিকে তাকিয়ে।


আরও পড়ুন: World Rivers Day 2021: ও নদী! তুমি বইছ কেন?


পর্যটন নিছক 'টাইমপাস' নয়। হুড়মুড় করে কোনও গন্তব্যে পৌঁছে, নাকে-মুখে গুঁজে খেয়ে-দেয়ে, ঠেসে সাইট সিয়িং করে ঘড়ির কাঁটা ধরে ফেরার গাড়ি ধরে ঘরমুখো হওয়াটাও পর্যটন নয়। 'পর্যটন' বা 'ভ্রমণ' একটা 'অ্যাটিটিউড', একটা 'প্যাশন', একটা লাইফস্টাইল, একটা জীবনদর্শনও। 


ইদানীং আধুনিক মানুষকে একটু বেশি পর্যটনমুখী দেখতে পেলেও, এটা সম্ভবত সকলেই জানে ও মানে যে, 'পর্যটন' বা 'ভ্রমণ' একেবারেই নতুন কিছু নয়। মানব সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই (আদিম) মানুষ পর্যটনমুখী। সভ্যতার অগ্রগতিই ঘটেছে পর্যটনকে কেন্দ্র করে। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পরিযানের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সে। হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে সে দল বেঁধে অরণ্যাঞ্চল থেকে পৌঁছেছে নদীতীরে, মরুভূমি থেকে পৌঁছেছে পর্বতের পাদদেশে।


তবে আধুনিক বিশ্বে, আধুনিক সভ্যতায় পর্যটনের নানা অভিমুখ ধরা পড়েছে। ভ্রমণকে তৈরি হয়ে গিয়েছে নানা নতুন-নতুন তত্ত্ব। যেমন, উপমহাদেশে 'ভ্রমণ' অর্থে ঠিক একালের 'ট্যুরিজম' কোনও দিনই ছিল না। বিশ্বের এই অংশে বহুদিন পর্যন্ত ভ্রমণ বহুলাংশে তীর্থযাত্রাই। একঘেয়েমি কাটানোর জন্য ভ্রমণ বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটন-- সেভাবে কোনও দিনই মান্যতা পায়নি উপমহাদেশীয় সমাজ-সংস্কৃতিত (তবে এখানে একটা কথা উল্লেখ জরুরি, উপমহাদেশে যেসব তীর্থক্ষেত্র রয়েছে, সচরাচর সেই সব স্থান অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুরই; সংশ্লিষ্ট তীর্থযাত্রী ভ্রমণে গিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের দিকে নজর না দিলেও সেটা স্বাভাবিক ভাবেই ঘটে যায়।)


আবার পাশ্চাত্যে বহুকাল ধরে নিছক 'ভ্রমণের জন্যই ভ্রমণ' তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত থেকেছে। পাশ্চাত্য-মানসে তীর্থযাত্রার 'এসেন্স'টা কোনও দিনই ঠিক প্রাচ্যগন্ধী হয়ে ওঠেনি। ভ্রমণ সেখানে নিজেকে ভিড় থেকে আলাদা করে নেওয়া, নিজেকে নিজের মধ্যে খুঁজে পাওয়ার একটা অনুশীলন যেন। যে কারণে প্রাচ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেখানে দলবেঁধে ভ্রমণই প্রথাসিদ্ধ, পাশ্চাত্যে বিষয়টি অনেকাংশেই 'একক' থেকে গিয়েছে।


ভ্রমণ-তত্ত্বের আরও নানা বিবর্তন আছে। একেবারে হালেই 'পোস্ট-ট্যুরিজম' বলে একটা দর্শন খাড়া করা হয়েছে, যেখানে প্রথাসিদ্ধ ভাবে প্রথাসিদ্ধ স্পটে ভ্রমণে সটান 'না'। এই তত্ত্বে বিশ্বীসারা, মানে যাঁরা 'পোস্ট-ট্যুরিস্ট', তাঁদের লক্ষ্যই হল 'মাস' যেখানে যায়, সেই তথাকথিত 'হটস্পট' এড়িয়ে গিয়ে অন্য কোথা অন্য কোনও খানে পৌঁছে একেবারেই অন্য কিসিমের একটা যাপন। এ যেন ওই 'মেনস্ট্রিম' ভ্রমণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা ভিন্নধর্মী এক ধরনের ভ্রমণ-যাপন।


কিন্তু তত্ত্বের যত কচকচিই থাক। স্তিমিত-প্রায় এই করোনা-পর্বে ভ্রমণের পরিসরটা খুঁজে পাওয়াই এখন সব চেয়ে বড় কথা। এবং নতুন করে যে ভ্রমণ-অভ্যাসটি তৈরি হয়ে উঠছে, সেখানে নিশ্চিন্ত মনে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়াটাই সব চেয়ে বড় কথা। আর সেটা শুরু করার সব চেয়ে ভাল উপলক্ষ্য সম্ভবত এই বিশ্ব পর্যটন দিবস। বিশেষত, বাঙালির সামনে তার সব চেয়ে বড় উৎসবের হাতছানি। অতএব এখন শুধু 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে'ই যেন থিমসং।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Early Humans: উত্তর আমেরিকায় মানুষ পৌঁছেছিল ২৩ হাজার বছর আগে!