হোয়াটস আপ সৃজিত

Updated By: Sep 27, 2016, 07:52 PM IST
হোয়াটস আপ সৃজিত

পার্থ প্রতিম চন্দ্র

এবারের পুজোয় মুক্তি পেতে চলা তার নতুন সিনেমা জুলফিকারের প্রচারে দারুণ ব্যস্ত। ব্যস্ততায় প্রথমে ইন্টারভিউ দিতে রাজি হননি। কিন্তু পরে কী মনে হল নিজেই বললেন মিনিট দশেকর মধ্যে যা প্রশ্ন করার করে ফেলো। ব্যস, সেই ফাঁকেই কিছু প্রশ্ন...

পার্থ- অটোগ্রাফ দিয়ে শুরু। তারপর বাইশে শ্রাবণ, হেমলক সোসাইটি, মিশর রহস্য, জাতিস্মর,নির্বাক...রাজকাহিনি... ফিল্মোগ্রাফির দিকে ফিরে তাকালে কী মনে হয়! যে স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন, আপনি ঠিক দিকে এগোচ্ছেন

সৃজিত- (প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ তারপর) হ্যাঁ, ঠিক দিকেই আছি। প্রতিটা সিনেমাতেই নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি। আর মনে হয় করতে পেরেছি। ঠিকই আছে।

পার্থ- এখন তো শিবপ্রসাদ, কৌশিক গাঙ্গুলির সিনেমা খুব চলছে। ওদের সিনেমাগুলো দেখেন? কম্পিটিটাররা ভাল সিনেমা বানালে দেখতে কেমন লাগে?
 

সৃজিত-সত্যি বলতে দারুণ লাগে। শিবু তো আমার মায়ের খুব পছন্দের এক পরিচালক। আমাকে মা মাঝেমাঝেই প্রশ্ন করে, হ্যাঁ রে শিবু এবার কী বানাল। শিবুর সিনেমায় কিছু জিনিসের সঙ্গে একমত না হতে পারি, তবে ওর কাজ আমার দারুণ লাগে। আমরা দুজনে খুব ভাল বন্ধু। আর কৌশিক দা-র ছবি বক্স অফিসে কতটা চলে জানি না। তবে ওর ছবি এত বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মান পায় বেশ ভাল লাগে। অরিন্দম শিলের সিনেমা আমার খুব ভাল লাগে। তা ছাড়া অনিরুদ্ধ, কমলেশ, সুমন ঘোষদের সিনেমাও বেশ লাগে।

পার্থ: আপনি তো শুধু আপনার কম্পিটিটারদের নিয়ে ভাল ভাল কথা বলছেন। ওরা ভাল ছবি বানালে হিংসে হয় না?
সৃজিত-না, না একদম নয়। হিংসা আর হিংসের মধ্যে একটা ফারাক আছে। ওরা যখন ভাল সিনেমা বানায় তখন ওদের থেকে শিখি। তবে মিথ্যা বলব না, আফশোস হয়। ইস, এই সিনেমাটা ও বানিয়ে দিল। ওই সিনেমাটায় আমার নাম থাকল না! এসব আফশোস হয়। তবে আমার মনে হয় এটা ভাল কাজে সাহায্য করে।

পার্থ- আপনি তো অর্থনীতির ছাত্র। তাই কী সিনেমার অর্থনীতিটা বুঝে একটু মেপে পা ফেলেন! মানে আপনার সিনেমায় শিল্পটা কি অর্থনীতি, বক্স অফিস, বাজারের ছায়া ফলো করে চলে?
সৃজিত-একদম না। অর্থনীতির ছাত্র হতে পারি, কিন্তু সিনেমা যখন বানাই তখন শুধু ভাবি শুধু কাজ আর কাজ। অর্থনীতি মাথায় রাখলে সিনেমা বানানো যা নাকি!

পার্থ-কী বলেন, মিশর রহস্যে তাহলে সন্তুর প্রেম দেখাতে গেলেন কেন?কাকাবাবুকে নিয়ে তৈরি ছবিতে গান কিংবা কাকাবাবুর সিঙ্গল ক্রাচ, এগুলো তো দর্শক সোজাভাবে মেনে নেন নি!ওটা তো বক্স অফিসের কথা মাথায় রেখে। সুনীল গাঙ্গুলির কাকাবাবুতে তো সন্তু তো প্রেম-টেম করেনি

সৃজিত- দেখুন সুনীল দা-র সঙ্গে সিনেমাটা বানানোর আগে আমার কথা হয়েছিল। সুনীল দা আমায় বলেছিল, মাথায় রেখো আমি যখন গল্পটা লিখেছিলাম তখন ১৯৮০, তুমি বানাচ্ছো ২০১৩-তে। সুনীল দা খুব আধুনিক মানুষ। আমি ওনার কথাগুলো মাথায় রেখেছিলাম। আমি যে চেঞ্জগুলো করেছিলাম, সেগুলো দরকার ছিল। অনেকে স্বাগত জানিয়েছিল। খেয়াল করেছো কাকা-ভাইপোর সম্পর্কটা কিন্তু এই সময়টার মধ্যে অনেক বদলে গিয়েছে। কাকারা এখন ভাইপোদের বড় বন্ধু। তা ছাড়া কিশোররা প্রেম করবে না, সন্তুকে প্রেম করতে নেই, এমন দিব্যি কে দিয়েছে। আমি নিজেও তো কিশোর বয়েসে প্রেম করেছি।

পার্থ- কী বলছেন, আপনি কিশোর বয়সে প্রেম করেছেন?নামটা বলবেন!
সৃজিত- (হেসে প্রশ্নটা এড়িয়ে নিজের ফোনটা চার্জ দিতে উঠে গেলেন।)

পার্থ: প্রসেনজিত্‍ থেকে দেব। চিরঞ্জিত্‍ থেকে পরমব্রত। অনেক অভিনেতাকে নিয়ে কাজ করেছেন, অভিনয়ের বিষয়ে কাকে সবচেয়ে বেশি নম্বর দেবেন।

সৃজিত- এই প্রশ্নটার উত্তর একটু লেন্দি হবে। হার্ডওয়ার্কিং বা পরিশ্রমী অভিনেতাদের কথা বললে প্রসেনজিত্‍-কে এগিয়ে রাখব। কোয়েলও খুব পরিশ্রমী। তবে এই বিষয়ে ঋতুপর্ণাকে এগিয়ে রাখতেই হবে। ঋতুপর্না প্রথমেই বলে দেয় আমাকে কাজ করিয়ে নাও। যতটা সম্ভব আমি করব। টানা শ্যুটিংয়েও ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে না। কাজটা এতটা ভাল বোঝে। ইনটিউশনের দিক থেকে যীশু, পাওলি এগিয়ে থাকবে। তবে ঋত্বিকের অভিনয়ে কথা আলাদা করে বলব। আর আবীরকে আমার সব সময়ই ভাললাগে। আর হ্যাঁ, আমার সবচেয়ে ভালোলাগে কৌশিক সেনের অভিনয়।

পার্থ: কথায় বলে ঘাম না ঝরালে খেলোয়াড় হওয়া যায় না। মাটি না মাখলে কুমোর হওয়া যায় না। আপনার মতে কোন জিনিসটা না থাকলে পরিচালক হওয়া যাওয়া না?
সৃজিত- ঘাম তো শুধু খেলোয়াড় নয়, সবাইকেই ঝরাতে হয় ভাই। আর হ্যাঁ, পরিচালক মানে হল ম্যান ম্যানেজমেন্টে সেরা লোক। সেটে অন্তত একশো লোককে ম্যানেজ করতে হয়। তা ছাড়া একজন স্টোরি টেলার তো হতে হবেই।

পার্থ- আচ্ছা আপনার সিনেমায় মন খারাপ জিনিসটা মাঝেমাঝে আসে। আপনার নিজের মন খারাপ হলে কী করেন?

সৃজিত-(একটু ভেবে)এই রে...মনখারাপ!!! গান শুনি, গান।

পার্থ- আগামী দিনে কী ধরনের সিনেমা করার ইচ্ছা আছে?
সৃজিত-ইচ্ছা তো অনেকই আছে। কাজ করার অনেক জায়গা আছে।

পার্থ- তবু একটা বিশেষ ইচ্ছার কথা বলুন
সৃজিত-বলতেই হবে?
পার্থ-হুঁ

সৃজিত-তাহলে ক্রিকেট নিয়ে সিনেমা করার ইচ্ছা আছে

পার্থ-কিন্তু ধোনি, আজহারের বায়োপিক তো বলিউডে হয়ে গেল। এখনও সচিন, সৌরভ হয়নি অবশ্য। আপনি কী তাহলে সৌরভ? সৌরভের ভূমিকায় কাকে মানাবে মনে হয়?
সৃজিত-সেরকম একটা ইচ্ছা আছে। সৌরভের ওপর সিনেমা বানাচ্ছি কোথা থেকে যেন শুনে একবার যীশু আমায় রাতে ফোন করে বলেছিল, সৃজিত তা আমি কিন্তু ক্রিকেটটা খেলেছি, আর তা ছাড়া আমায় দাদা হিসেবে খারাপ মানাবে না। আমি শুধু বলেছিলাম,সব ঠিক আছে তবে তুমি ডান হাতে ব্যাট করো, দাদা কিন্তু বাঁ হাতে ব্যাট করত। সেইভাবে দেখলে আবীর হল সৌরভ গাঙ্গুলির বায়োপিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সব দিক থেকে উপযুক্ত। তবে সৌরভের ওপর বায়োপিক হলে সেটা হিন্দিতেই হওয়া উচিত।

পার্থ- আচ্ছা, প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগের জীবনের স্ট্রাগলের কথা মনে আছে?
সৃজিত- হ্যাঁ। খুব স্ট্রাগল করতে হয়েছে। মনে আছে অনেকে আমায় শুরুর দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন। খারাপ ব্যবহারও সহ্য করেছি। তখন খুব খারাপ লাগত। তবে এখন মনে ওসব আমাকে আরও পরিণত করেছে। কখনও শোধ নেওয়ার কথা ভাবিনি। আমি বিশ্বাস করি ভাল কাজ করেই এসবের জবাব দেওয়া যায়। আমি সততায় বিশ্বাস করি। জানি, এ জিনিসটা থাকলে, কোনও কাজই শক্ত নয়।

পার্থ- আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপনি মুখ খোলেন না কেন?
সৃজিত- সব কিছুতে মুখ খুলতে হবে নাকি! তা ছাড়া ব্যক্তিগত প্রশ্নই তো বেশি করা হয়।

পার্থ- আর প্রেম?
সৃজিত-আবার!!!

পার্থ- আচ্ছা বলবেন না যখন অন্য প্রশ্ন করি
সৃজিত-(হেসে বোঝালেন, সেটাই ভাল)

পার্থ- পুজোয় এবার টলিউডের আরও পাঁচটা সিনেমার সঙ্গে আপনার জুলফিকরের লড়াই। প্রসেনজিত্, দেব ছাড়া আর কী কারণে দর্শকরা বাকিগুলো ছেড়ে আপনার এই সিনেমা দেখতে যাবে।
সৃজিত- কলকাতা। হ্যাঁ, কলকাতা। আসলে কলকাতা মানেই সিনেমায় দেখানো হয় হাওড়া ব্রিজ, মিষ্টি, ভিক্টোরিয়া, ইডেন গার্ডেন। কিন্তু কলকাতার একটা অন্য চেহারাও রয়েছে সেটা এই সিনেমায় রয়েছে। সঙ্গে ভাল গল্প থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু তো রয়েইছে।

পার্থ-আচ্ছা জুলফিকর সিনেমাটা কী সৃজিত ব্র্যান্ডের নাকি ভেঙ্কটেশ ব্র্যান্ডের?
সৃজিত- কম্বিনেশন অফ বোথ। তবে আপনিই তো বলছিলেন, আমার ফিল্মোগ্রাফিতে সব সময় নতুন নতুন ধরনের সিনেমা দেখতে পাওয়া যায়। সেই হিসেবে দেখলে জুলফিকর-একেবারে নতুন একটা...তাই এটা সৃজিত ব্র্যান্ডের সিনেমাই বলতে পারেন।  

পার্থ- আচ্ছা আপনি একটি জনপ্রিয় টেলি শো-তে আপনার অতিথিদের নানা প্রশ্ন করতেন। কখনও এমনও প্রশ্ন করেছেন যেটা করে মনে হয়েছে, আরে এই প্রশ্নটা আমি নিজেকে করলেও উত্তর দিতে পারতাম না।
সৃজিত- হাহাহা (হাসতে হাসতে)। না, না আমার সব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে। কিংবা হয়তো কোনও প্রশ্নেরই উত্তর নেই। তবে এই প্রশ্নটার পর থেকে একটু ভেবে দেখবো কোন কোন প্রশ্নের নিজেকে নিজে করলে বলতে পারব না। তখন না হয় প্রশ্নটা আবার করবেন।

পার্থ- জীবনে সবচেয়ে কোন পরামর্শটা সবচেয়ে বেশি মেনে চলেন?
সৃজিত- পরামর্শ জিনিসটা আমি এড়িয়ে চলি। খুব একটা নিও না, দিও না। তবে এটা মনে করি জীবন আমাদের যে পরামর্শ, যে শিক্ষাটা দেয় সেটা মেনে চলা খুব দরকার। জীবন থেকে নেওয়া পরামর্শটাই আসল।

 

 

  

.