একচোখোমির দুটি ধরন

পুলিশের হাতে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর ভাবনার জগতে দু ধরনের একদেশদর্শিতা চোখে পড়ছে। তার কারণ কতটা নিছক চিন্তার দৈন্য আর কতটা ইচ্ছাকৃত দ্বিচারিতা, বলা শক্ত।

Updated By: Nov 28, 2011, 05:58 PM IST

পুলিশের হাতে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর ভাবনার জগতে দু ধরনের একদেশদর্শিতা চোখে পড়ছে। তার কারণ কতটা নিছক চিন্তার দৈন্য আর কতটা ইচ্ছাকৃত দ্বিচারিতা, বলা শক্ত।

প্রথম ধরনের একদেশদর্শিতা।

"হত্যাকারীর মানবাধিকার আছে, খুন হওয়া সাধারণ নাগরিকের নেই"।

অবশ্যই আমার অধিকার আছে বাঁই বাঁই করে হাত ঘোরানোর। তবে সেই অধিকারের সীমানা সেখানেই শেষ যেখানে আপনার নাকটা শুরু হচ্ছে। আপনার নাকে আঘাত করার অধিকার আমার নেই।

কিষেণজি এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে দিনের পর দিন যখন বিনা বিচার নরহত্যা চালিয়ে যান, তখন মানবাধিকারের প্রবক্তাদের গলার স্বর শোনা যায় না। কিষেণজির বেলায় তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে কেন গুলি করে হত্যা করা হল, কেন গ্রেফতার করে আইনের পথে বিচার করা হল না? মাওবাদীরা যখন নিজেরাই অভিযোগকারী, নিজেরাই পুলিশ, নিজেরাই আদালত এবং নিজেরাই জহ্লাদ হয়ে নরহত্যা করেন, তখন এই 'মানবাধিকার কর্মীদের' নীরবতা বিস্ময়কর। স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের সমস্ত শর্ত লঙ্ঘন হতে দেখেও এঁরা চুপ করে থাকেন। স্কুল শিক্ষক মাওবাদীদের গুলিতে খুন হলে চুপ করে থাকব, আর পুলিশের গুলিতে মাওবাদী খুন হলে মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলব- এটা কি নিছক চিন্তার দৈন্য নাকি ইচ্ছাকৃত দ্বিচারিতা?

দ্বিতীয় ধরনের একদেশদর্শিতা।

"মাওবাদীরা খুন করে, তাই পুলিশ তাঁদের নির্বিচার খুন করলে ঠিকই আছে"।

আমাদের বক্তব্য, একেবারেই ঠিক নেই। মাওবাদীরা নিজেরাই নিজেদের হাতে অস্ত্র এবং খুন করার অধিকার তুলে নিয়েছে, আমি আপনি তাঁদের হাতে এই অধিকার তুলে দেইনি। অন্য দিকে রাষ্ট্রের হাতে অস্ত্র এবং বিচার করে প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার আমি আপনি, আমরা নাগরিকরা স্বেচ্ছায় তুলে দিযেছি। রাষ্ট্রের যে বৈধতা রয়েছে, তা মাওবাদীদের নেই। ওই বৈধতার দাবিটি বজায রাখার জন্যই রাষ্ট্রকে বিচার করে আজমল কাসভের মৃত্যুদণ্ড দিতে হয়, যতই নানা মহল থেকে তাঁকে এখনই ফাঁসিকাঠে ঝুলিযে দেওয়ার পক্ষে সওযাল করা হোক না কেন। রাষ্ট্র ইচ্ছামতো বিনা বিচারে মানুষ মারতে শুরু করলে তার গ্রহণযোগ্যতা এবং মান্যতা আর থাকে না, তৈরি হয় নৈরাজ্য।

মাওবাদীরা নির্বিচার খুন করলে রাষ্ট্রও পাল্টা তাই করতে পারে- এ কথা বলার অর্থ মাওবাদীদের সঙ্গে রাষ্ট্রকে একাসনে বসানো। মাওবাদীরা ঠিক এটাই চান, এভাবেই দেখেন। তাঁই তাঁদের দিক থেকে তাঁরা রাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সঙ্গত যুদ্ধে লিপ্ত। যাঁরা তা মনে করেন না, তাঁরা নির্বিচার অস্ত্রশক্তি দিয়ে মাওবাদ দমনের কথা বলে মাওবাদীদের সাহায্যই করেন। এটাও নিছক চিন্তার দৈন্য নাকি ইচ্ছাকৃত দ্বিচারিতা বলা কঠিন।

সুদীপ্ত সেনগুপ্ত

Tags:
.