আবু হামজার জবানবন্দি ঘিরে ভারত-পাক বিবৃতি যুদ্ধ

আবু হামজা ওরফে আবু জিন্দালের জবানবন্দিকে কেন্দ্র করে মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করল পাকিস্তান। বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসলামাবাদে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে তা খারিজ করলেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক।

Updated By: Jun 27, 2012, 08:26 PM IST

আবু হামজা ওরফে আবু জিন্দালের জবানবন্দিকে কেন্দ্র করে মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে ভারতের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করল পাকিস্তান। বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ধৃত লস্কর জঙ্গি আবু হামজার জবানবন্দির ভিত্তিতে ২৬/১১‍ সন্ত্রাস নিয়ে যে অভিযোগ এনেছিলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসলামাবাদে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে তা উড়িয়ে দিলেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক।
২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আজমল কাসভদের নির্মম নরসংহারের দায় এড়াতে `নন স্টেট অ্যাক্টর`-এর যুক্তি তুলে ধরেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু আরব মুলুক থেকে আবু হামজার গ্রেফতারির পরই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে জারদারি সরকারের এই যুক্তি। বুধবার কেরালার তিরুঅনন্তপুরমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পন চিদাম্বরম পাকিস্তানের নাম না করেই জোর গলায় জানান, রাষ্ট্রবিহীন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী নয়, ২৬/১১ কাণ্ডের নেপথ্যশক্তি হিসেবে কাজ করেছে পুরোদস্তুর রাষ্ট্রযন্ত্র।

চিদাম্বরমের দাবি, এই জঙ্গি হামলার পিছনে, সরকার অথবা সরকারি সমর্থন পুষ্ট কোনও ব্যক্তিদের মদত সম্পর্কে সংশয়াতীত প্রমাণ মিলেছে। আবু জিন্দাল ওরফে আবু হামজাকে জেরা করে ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে ভারতীয় গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে বলেও জানান তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুম্বই সন্ত্রাসের পিছনে রাষ্ট্রশক্তির একাংশের মদত সম্পর্কে আগাগোড়াই নিঃসংশয় ছিল নয়াদিল্লি। গত এক বছর ধরেই ভারতীয় গোয়েন্দারা আবু হামজা ওরফে আবু জিন্দালের উপর নজরদারি চালাচ্ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
পাশাপাশি, মুম্বই সন্ত্রাসে দোষীদের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে যেভাবে পাকিস্তান দায় এড়ানোর কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছে তারও সমালোচনা করেন চিদাম্বরম। তুলে ধরেন, ইন্টারপোলের `মোস্ট ওয়ান্টেড` তালিকায় থাকা দাউদ ইব্রাহিমের পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে থাকা এবং তাজ প্যালেস-ওবেরয় ট্রাইডেন্ট-নরিম্যান হাউসে লস্কর জঙ্গিদের হামলার সময় করাচির কন্ট্রোল রুমে জামাত-উদ-দাওয়া নেতা হাফিজ মহম্মদ সইদের উপস্থিতির প্রসঙ্গ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জেরে জুলাইয়ে ভারত -পাক বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক পিছিয়ে গেছে। তবে  জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই দিল্লিতে দু`দেশের বিদেশ সচিবরা বৈঠকে বসছেন। সেই বৈঠকের আগেই ২৬/১১-র সন্ত্রাস ইস্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর স্পষ্ট হয়ে যায়, স্পষ্ট, আজমল কাসভের পর আবু জিন্দালকে হাতে পাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে সন্ত্রাসের সূতিকাগার হিসেবে পাকিস্তানকে চিহ্নিত করার সুযোগ হাতছাড়া করবে না মনমোহন সরকার।

কারণ, অতীতে মুম্বই সন্ত্রাসের চক্রীদের নিয়ে ভারতের দাবি বরাবর খারিজ করেছে পাক রাষ্ট্র। দোষীদের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে পাক প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে বারবার। এমনকী পাক প্রেসিডেন্ট জারদারি বলেছিলেন মুম্বই সন্ত্রাস রাষ্ট্রবিহীন কুশীলবদের কাজ। কিন্তু সেই আবু জিন্দালের গ্রেফতারির পর এদিন সেই তত্ত্ব সরাসরি খারিজ করে দিয়ে পাকিস্তানকেই বেঁধেন চিদাম্বরম।
এই পরিস্থিতিতে এদিন `আত্মরক্ষার` জন্যই পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করতে হয় পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীকে। তিনি বলেন, ধৃত আবু হামজা ভারতীয়। তার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সংশ্রব নেই। সেই সঙ্গেই মালিকের দাবি, "পাক গুপ্তচরসংস্থা আইএসআই বিদেশি শত্রুর চক্রান্ত থেকে দেশকে রক্ষা করে, সন্ত্রাসে মদত দেয় না"।

.