''নাগরিক কারাগার থেকে নিরুদ্দেশের পরই মাথায় আসে রেনবো জেলি''

রণিতা গোস্বামী

Updated By: Jun 9, 2018, 01:29 PM IST
''নাগরিক কারাগার থেকে নিরুদ্দেশের পরই মাথায় আসে রেনবো জেলি''

রণিতা গোস্বামী: বক্স অফিসে নানা ছবির ভিড়ে মন জয় করেছে পরিচালক সৌকর্য ঘোষালের ছবি ‘রেনবো জেলি’। পরিচালকের নির্মাণকুশলতা ও দৃশ্যনির্মাণে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শকরা। তাঁদের মুখে শুধু একটাই কথা ‘সূর্যের সাত রং, সাত রং, সাত রং’। আর এই মন্ত্রেই মজেছেন বাংলা ছবির দর্শকরা। বড় বড় ব্যানারের ভিড়ে সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ ‘রেনবো জেলি’র পরিসর কিছুটা কমিয়ে দিলেও বাজিমাত করছে নতুন স্বাদের এই ছবি। ‘রেনবো জেলি’ আর এই রূপকথার রাজকুমার ঘোঁতনকে নিয়ে ZEE ২৪ ঘণ্টাকে নানা কথা জানালেন পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল।

১) বাংলার মানুষ যে 'রেনবো জেলি'-তে মজেছে সেটা তোমার কেমন লাগছে?

সৌকর্য- খুবই ভালো লাগছে। আমরা ছবিটা খুবই যত্ন নিয়ে বানিয়েছি। এটা আমাদের মানে ইন্ডিজেনাস প্রোডাকশনের প্রথম প্রযোজনাও বটে। তাই সাফল্য পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যে আমি পেরেছি। আরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আগামী দিনে আরও ভালো কিছু করতে পারব আশা রাখছি।

সব থেকে বেশি ভালো লাগছে ছোটদের প্রতিক্রিয়া। এটা আমায় একটা অদ্ভুত আনন্দ দিচ্ছে। আমি বরাবরই মনে করি আমি বাচ্চাদের লোক, মানে শিশুদের পক্ষের লোক, বড়দের পক্ষের নই। তাই তাঁদের অনুভূতি আমায় বেশি আনন্দ দিচ্ছে।  প্রথম যেদিন ছবিটা মুক্তি পেল, প্রেক্ষাগৃহে গেলাম সেদিন সকলে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। এটা একটা অন্য অনুভূতি, অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল।   

২) কলকাতার আকাশে বাতাসে এখন সৌকর্য ঘোষালের প্রশংসা উড়ছে। সৌকর্য ঘোষালের মত Down to Earth  মানুষের এই প্রশংসা মাথা ঘুরিয়ে দেবে না তো?

সৌকর্য- না, না, আমার প্রথম ছবির পরেও অনেক প্রশংসা পেয়েছিলাম। প্রথম ছবির পরেই এটা বুঝে গিয়েছিলাম প্রশংসা খুব বেশি ফারাক তৈরি করে না। যেটা করে তা হল, তুমি মানুষটা সেই প্রশংসার সঙ্গে মিলছ কিনা, প্রশংসার উপযুক্ত কিনা। তোমার কাজের ‘সেলফ লাইফ’ কতদিন। তুমি যখন জীবনের কয়েকটা সত্য বুঝে যাবে, তখন আপনা থেকেই ‘ডাউন টু আর্থ’ হয়ে যাবে। তুমি যখন বুঝবে তোমার এখন ছবি রিলিজ করেছে তাই সবাই তোমার প্রশংসা করছে। কিন্তু ২-৩ মাস পরে আবার অন্য ছবি আসবে তখন অন্যজনের প্রশংসা হবে। আসলে সমস্ত কিছুই আপেক্ষিক। এটা সবক্ষেত্রেই সত্য। কোনও বছর একজন নোবেল পেল, তখন তাঁকে নিয়ে প্রচুর নাচানাচি হল, পরের বছর যখন আরেক জন নোবেল পাবে তখন আগেরটা আর কেউ বিশেষ মনে রাখবে না। তাই কারও যদি একটা নোবেল পেয়েই মাথা ঘুরে যায়, তাহলে আর তার পরের নোবেলটা পাওয়া হবে না।

৩)ভালো সিনেমার একটা শক্তি আছে। আর সেটা তুমি নাকি আজকাল উপলব্ধি করতে পারছো?

সৌকর্য- দেখো, ভালো সিনেমা, খারাপ সিনেমা, বিষয়টা ঠিক তেমন নয়। একটা কথা বুঝতে হবে, আমরা একটা ছবি পকেটের পয়সা খরচ করে দেখতে যাই। ছবি এমন একটা মাধ্যম যেখানে তুমি টিকিট কেটে হলে ঢোকার পর সিনেমাটা দেখো। সেটা খারাপ লাগলে আর  টাকা ফেরত পাওয়ার জায়গা নেই। তুমি একটা চিপসের প্যাকেট কিনছো, যদি সেটা খুলে দেখো সেটা মেয়ানো, সেটা ফেরত দিতে পারো। একটা গাড়ি কিনলে সেটা যদি দেখো ভাঙা, তখনও ফেরত দিতে পারবে। কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে তো এমনটা হয় না। সিনেমাটা তুমি শেষ পর্যন্ত না-দেখলে বুঝতে পারবে না। তুমি একটা সিনেমার ট্রেলার দেখে ভাল কিছু আশা নিয়ে দেখতে গেলে, হলে গিয়ে দেখলে ইস্ ঠকে গেলাম, বেকার সিনেমাটা দেখতে এলাম, টাকা খরচ হল ইত্য়াদি, ইত্যাদি! তাই আমার মনে হয় বাংলা হোক কিংবা অন্য যেকোনও ভাষার ছবি, একজন ফিল্ম নির্মাতার দর্শকদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা উচিত, যে আমার ছবির যেটা নির্যাস সেটা দেখে দর্শকদের যেন কোনওভাবেই না মনে হয় যে ইস্ ঠকে গেলাম। ভালো ছবির শক্তি বলতে আমার এটাই মনে হয়। সারা পৃথিবীজুড়ে যত বড় বড় ফিল্ম নির্মাতা ব্যর্থ হয়েছে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখো ওই একটাই কারণ। দর্শক যতটা আশা করেছিল হলে গিয়ে ততটা পায়নি। ভালো লাগলে দর্শক এমনিই ছবির পাশে থাকবে। মানুষ ভালো ছবি পেলে তাতে বুঁদ হয়ে থাকে।

 ৪) সাধারণ থেকে অসাধারণ, বাংলা ফিল্ম ইন্ডস্ট্রির অনেকেই 'রেনবো জেলি' দেখার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষকে আর্জি জানাচ্ছেন। সেই সব মানুষগুলোকে কী বলতে চাইবেন?

সৌকর্য- তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই যে একটা সিনেমা মুক্তির পরে সবাই এভাবে বলছে এটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। এটা আমাকে আরও সাহস জোগাচ্ছে। ছবিটার পাশে থাকার জন্য আমি সকলের কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম। তাঁরা যে সত্যিই আমার পাশে, ছবিটার পাশে থেকেছেন এই ঋণ আমি কোনওদিনও ভুলব না।

৫) এবার একটু অন্য কথায় আসি, আঁকি-বুকি রং পেন্সিল থেকে অ্যাকশান কাটের দুনিয়ায় কীভাবে এলে?

সৌকর্য- আমি আগে ইলাস্ট্রেটর ছিলাম। আমি কমিকস করতাম, তো কমিকসে তো ফ্রেম ফ্রেম করে একটা গল্প বলার বিষয় থাকে। কমিকসে দেখলাম সাউন্ডের বড় অভাব। দুম, দরাম ফ্লাশ, এসব লেখা থাকে শব্দ বোঝানোর জন্য। কিন্তু তা বড় বেশি ভিসুয়্যাল। একটা তো অডিও থাকা উচিত মনে হয়েছিল। সেই অডিওর তাড়নায় অডিও ভিস্যুয়াল মাধ্যমে এলাম। সেখান থেকেই প্রথম ছবি বানানো। পরে এই ‘রেনবো জেলি’ বানাতে গিয়ে আমি অ্যানিমেশনটাও শিখেছি।

৬) 'পেন্ডুলাম' বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার পর তুমি নাকি কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলে?

সৌকর্য- হ্যাঁ 'পেন্ডুলাম'  সেভাবে সাফল্য না-পাওয়ায় আমার খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল আমি বোধহয় সিনেমা বানাতে পারি না। তারপর আমি কলকাতা ছেড়ে বাগডোগরা চলে যাই। সেখানে একটা বোর্ডিং স্কুলে পড়াতাম, আমি আর আমার স্ত্রী। তারপর সবাই আমায় বলল বিষয়টা এরকম নয়। প্রায় কমবেশি সব সিনেমা পরিচালকদের সঙ্গেই এটা হয়েছে। সব বড় পরিচালকদের ক্ষেত্রেও হয়েছে। আজ অনুরাগকে (অনুরাগ কাশ্যপ) সবাই চেনে, অথচ অনুরাগেরও তো প্রথম দুটি ছবি মুক্তিই পায়নি. তাই ওখানে থেমে গেলে তো হয়েই গেল। তাছাড়া বাগডোগরায় বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতে পড়াতে আমার ছেলেবেলাকে খুঁজে পেলাম। সত্যজিৎ রায়, লীলা মজুমদারকে খুঁজে পেলাম। তখন মনে হল ছোটদের ইনোসেন্স নিয়ে যদি ছবি করি সেটা খুব ইউনিভার্সাল হবে। সেই ইউনিভর্সাল ছবি বানানোর জন্য আবারও ফিরে আসি কলকাতায়।  

৭) আর্য়ুবেদ ও খাদ্য নিয়ে আপনার রিসার্চের অভিজ্ঞতা কেমন?

সৌকর্য- আমি যখন খাবারের স্বাদ নিয়ে গবেষণা করেছিলাম। তখনই আমি ফিরে গিয়েছিলাম আয়ুবের্দে। সেখানে খাদ্যের স্বাদের সঙ্গে মনের সম্পর্কটা খুব ভালোভাবে বলা আছে। যদিও সিনেমাতে অতটাও বলা সম্ভব হয়নি। তবে মূল কাঠামোটা তুলে ধরেছি। কীভাবে খাবারের স্বাদের সঙ্গে মন বদলে যায়। আয়ুর্বেদে একটা বিখ্যাত কথা আছে। ‘don't make your medicine as your food, Let your food be your medicine’। খাবারই তোমার শরীর এবং মনের পথ্য হয়ে উঠতে পারে। তো সেই সূত্রকেই কাজে লাগিয়েছি। গল্পে গন্ডারিয়াকে এমন একটা খাবার খাওয়ালো যে গন্ডারিয়া সেরে গেল। এই আর কি...

৮) মহাব্রত হাসি দেখেই তুমি নাকি ওকে ঘোঁতনের চরিত্রের জন্য ফাইনাল করে ফেলেছিলে? কীভাবে পেয়েছিলে ওকে?

সৌকর্য- মহাব্রতকে পেয়েছিলাম মৌসুমীদির (গায়িকা মৌসুমী ভৌমিক) মাধ্যমে। মৌসুমীদি আমার ছবিতে একটা গান গেয়েছিলেন। আর তখন ঘোঁতন চরিত্র নিয়ে খোঁজা খুঁজি চলছে। তখন মৌসুমীদিকে দিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে এমন কেউ আছে আপনার পরিচিত?  তখন মৌসুমী দি বললেন, আমি একটা স্কুলে ওয়ার্কশপ করাতে যাই, (পাঠভবনের আগে যে স্কুলে মহাব্রত পড়ত)। সেখানে একটা ছেলে আছে মহাব্রত বসু বলে, সে খুব ইন্টারেস্টিং। তারপর আমার বাড়িতে মহাব্রত আসে। প্রথমে আমি যখন ওকে দেখলাম তখন আমিও প্রযোজকের মত একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার চিত্রনাট্যে একটা জায়গায় ছিল যে ‘ঘোঁতন যখন হাসে, তখন সূর্যের সাত রং ঝলমলিয়ে ওঠে’। মহাব্রত যখন এসেছিল, তখন একটা ঘটনায় আমরা হেসে উঠি। তখন মহাব্রত এরকম ঝম করে হেসে ওঠে। ওর ওই ‘হাজার ওয়ার্ড’এর হাসি দেখে আমি বুঝে গেছিলাম, এটাই আমার ঘোঁতন।  

৯) শুনেছি, মহাব্রত তৈরি করতে তোমায় অনেক খাটতে হয়েছিল?

সৌকর্য- হ্যাঁ, তা তো হয়েছেই। অনেক কিছু করতে হয়েছে। অনেক খাটতে হয়েছে। আমি ওর জন্য স্মাইলিং মেথড, স্পুন মার্বেল এসব ফলো করি। সবথেকে বড়কথা ডাবিং। এই ছবিটা মহাব্রতর অভিনয় দেখে সবার ভালো লাগছে, কিন্তু ওকে অভিনয় করানোর পর ধরে ধরে ডাবিংও করাতে হয়েছে সেটা খুব একটা সহজ ছিল না। এই ছবিটার জন্য ওকে আমি নানান ধরনের smiley একেঁ দিয়েছিলাম। এই smileyগুলো বলে বলে ওকে আমি এক্সারসাইজ করাতাম, কীভাবে মুখের এক্সপ্রেশনগুলো ও আনবে শেখাতাম। তারপর ওর মাইন্ড আর বডি ব্যালেন্সের জন্য স্পুন মার্বেল মেথড ফলো করিয়েছি। তারপর আমার বাড়িতে ক্যামেরা এনে ওকে প্র্যাকটিস করিয়েছি। কারণ শ্যুটিংয়ে নানান ডিস্টারবেন্স থাকে, তখন ও ঘাবড়ে যেতে পারে। তাই ওকে আমি আগে থেকেই তৈরি করে নিয়েছিলাম।

১০) ওর বাড়ির লোকেরা কোনও আপত্তি করেনি?

সৌকর্য- ওর বাড়ির লোকের মতো সাপোর্টিভ মানুষ আমি খুব কম দেখিছি। সাধারণত, মধ্যবিত্ত বাঙালির একটা হ্যাংলামো থাকে শ্যুটিং নিয়ে। অনেকেই শ্যুটিংয়ের সময় এসে বসে থাকে। ওরা সেটা করেননি। মহাব্রতর বাবা আমার কাছে বেলা সাড়ে ১২টার সময় ওয়ার্কশপের জন্য ওকে দিয়ে যেত। রাত ৭ থেকে ৭.৩০টার সময় এসে নিয়ে যেত। তিন মাস ধরে সপ্তাহে ৫ দিন এটা আমরা করেছি। কোনওদিন ওর বাড়ির লোক জিজ্ঞেসও করেনি যে কী হচ্ছে, কবে হবে সিনেমা বা কিছু। অসম্ভব সহযোগিতা করেছে।

১১) এই মহাব্রতকে নেওয়ার জন্যই প্রযোজক নাকি আপনাকে, মানে রেনবো জেলিকে ছেড়ে পালিয়েছিল?

সৌকর্য- হ্যাঁ স্বাভাবিক (একটু গম্ভীর), আসলে মহাব্রতকে যখন নিয়েছিলাম আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি মহাব্রতকে দিয়ে অভিনয়টা করিয়ে নিতে পারি। কিন্তু মহাব্রত কেমন কাজ করবে সেটা তো প্রযোজক তখনও দেখেননি। গল্পটা শুনে প্রযোজক ওই চরিত্রটার সঙ্গে মহাব্রতকে মেলাতে পারেননি। মহাব্রত এই চরিত্রটা কীভাবে করতে পারবে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেননি। কিন্তু মহাব্রত যে কামালটা করতে পারে এটা আমার বিশ্বাস ছিল। আসলে আমিই হয়তো প্রযোজককে বোঝাতে পারিনি যে মহাব্রত এটা করতে পারে, কিংবা তাঁদের হয়ত সেই দূরদর্শিতা ছিল না, যে আমি আর মহাব্রত মিলে এই কাজটা করাতে পারি। তাঁরাও লগ্নির জায়গা থেকে ভেবেছে যে রিস্ক হয়ে যাবে। আরও একটা ব্যাপার হয়, যখন শিশু চরিত্র কেন্দ্রিক কোনও সিনেমা থাকে, তখন তো তাঁরা তো স্টার নয়, তাঁদের দিয়ে অভিনয়টা করিয়ে নিতে হয়। তাই তখন প্রযোজকের মনে হয়, যে আমার মেয়েটা, বা ছেলেটা, বা ভাইঝি, বা বোনপো কেন সেটা করতে পারবে না, কারণ টাকাটা তো তিনিই ঢালছেন। এটা তাঁর জায়গা থেকে ঠিক, আবার আমার মানে পরিচালকের জায়গা থেকে এটা ঠিক মনে হয়নি।   

১২) মানুষ বলছে এত মৌলিক ও ভনিতাহীন বাংলা সিনেমা অনেকদিন দেখেনি। তুমি কি মনে করো না যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে এই ভনিতাযুক্ত সিনেমাগুলো শেষ করে দিচ্ছে?

সৌকর্য- দেখো, এভাবে ‘বাংলা সিনেমা’ বলে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। তুমি যদি দেখো এটা হলিউডেরও সমস্য, বলিউডেরও সমস্য, আবার দক্ষিণী ছবিরও সমস্যা। কেন সমস্যা?  আসলে মানুষের কাছে পৌঁছনোর যে ফর্মুলা বা সংজ্ঞা থাকে, সেই জায়গাটায় যদিও কোনও ছবি ক্লিক করে। তখন দেখবে সবাই সেটা ফলো করতে শুরু করে। আসলে এটা তো ঠিক, ছবিটা একটা বাণিজ্য। যদি কোনও ভালো ছবি করে পরিচালক প্রশংসাও পায় তাহলে তার ভালো লাগে ঠিকই, কিন্তু বাণিজ্যটা তো দরকার, নাহলে তো আর সেই পরিচালকই দ্বিতীয় ছবিটা বানাতে পারবে না। আর সেকারণে আমাদের এখানে যদি একটা 'তন্নু ওয়েডস মন্নু' হয়, তাহলে পরপর ওয়েডিং এর উপর ছবি হতে থাকে। এখানে অনুরাগের (অনুরাগ কাশ্যপ) একটা 'গ্যাংস অফ ওয়সিপুর' যখন বক্স অফিসে হিট দেয়, তখন অর্গানিক গ্যাংসস্টার, র গ্যাংসস্টার হতে থাকে। যখন এখানে একটা ওপেনটি বায়োস্কোপ-এর মত ছবি হয়, তখন ওই ফুটবল বলো, কি নয়ের দশকের উপর ছবি হতে থাকে। গোয়েন্দা গল্প একটা হলে হতেই থাকে। আসলে তখন এটা মনে হয় এধরনের একটা ছবি সাফল্য পেয়েছে মানে এধরনের সব ছবিই সাফল্য পাবে। সেটা মনে করার প্রযোজকের অধিকার আছে, কারণ তাঁরা টাকা লাগাচ্ছে। কিন্তু এটা হতে হতেই একঘেয়েমি চলে আসে। মৌলিকতা হারায়। তখনই ওই ধরনের সিনেমাই আবার ফ্লপ করে। আমার মনে হয় এই বিষয়টাই পরিচালক ও প্রযোজকের মাথায় রাখতে হবে। এই যে ঘোঁতনের মতো স্পেশাল চাইল্ডকে নিয়ে, রূপকথা নিয়ে সিনেমা হল। এই বিষয়ের উপরই যদি পর পর সিনেমা হতে থাকে তখন দেখবে এটাই তেতো হয়ে গেছে। আর মৌলিকতা তখনই হারায়। ছবি বানাতে গেলে ভাবতে হবে সেখানে যেন বৈচিত্র থাকে। তুমি একটা গল্প অ্যাডপটও করতে পারো, রিমেকও করতে পারো, কিন্তু সেটাতেও যেন নিজস্বতা থাকে। আসলে দর্শকরা কাহাঁতক আর ওই একই বিষয়ের উপর ছবি দেখবে।   

১৩) আচ্ছা 'রেনবো জেলি' মূলত ছোটদের সিনেমা, সেখানে সিঁড়ির প্রেমের দৃশ্যটা কি খুব প্রয়োজন ছিল?

সৌকর্য- না দেখানোর আমি কোনও যুক্তি পাইনি। আমায় সেন্সের ওই জন্যই ইউ.এ সার্টিফিকেট দিয়েছে। কেটে দিলে হয়তো ইউ পেয়ে যেতাম। আসলে আমার মনে হয় আমরা বড়রা যখন বাচ্চাদের গল্প লিখি বা স্ক্রিপ্ট লিখি তখন বড়দের চোখ দিয়ে দেখি। ব্যাপারটা উল্টো হওয়া উচিত, যে আমি শিশুমনটার কাছে পৌঁছে গিয়ে তারা কীভাবে পৃথিবীটা দেখছে সেটা বলা উচিত। এটার মধ্যে আমি ভায়োলেন্স দেখাতে চেয়েছি। একজন শিশু যখন প্রথম এরকম কিছু দেখে সেটা তার কাছে ভায়োলেন্স। আমরা অনেকেই বলি না-বলি এমন দৃশ্য কখনও না কখনও দেখেছি বা শুনেছি। আর এটা শিশুমনের কাছে একটা ভায়োলেন্স। এটাই শিশুমনে ভীষণ প্রভাব ফেলে, তিলে তিলে তাল হয়। এটাকে যারা সামলাতে পারে না তখনই গন্ডগোলটা হয়। আর এই ভায়োলেন্সটা আমি দেখাতে চেয়েছি যে একজন শিশুর মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।

১৪) তোমার সিনেমায় বারবার শৈশব ও কৈশোরের নিষ্পাপ মিষ্টি প্রেমগুলো মন ভরিয়ে তোলে? এগুলো কি কোনওভাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বানানো?

সৌকর্য- সেটা আমিও ঠিক জানি না (হাসি)। আমি হয়তো ভালবাসা- প্রেমকে অনেক সহজভাবে দেখি। আসলে মানুষ তো শিশু হয়ে জন্মায়, তারপর বড় হয়। সেই বড় হওয়াতে আপত্তি নেই, বড়টা হতেই হয়। বড় হওয়ার সঙ্গে যদি আমরা অহঙ্কারের চাদর জড়াতে থাকি তখন সেই মানুষটা খুব নখ-দাঁত বের করা বাজে মানুষ হয়। সেই মানুষটা খুব একটা ভালো হয় না। সেই মানুষটা যদি কোনও ক্ষমতাবান মানুষও হয়, তাহলেও সেই মানুষটার সামনে হয়তো কেউ কিছু বলে না, কিন্তু পিছনে গিয়ে তাকে কেউ ভালোবাসে না। আলটিমেটলি স্টিভ জোবস-এর কথা মতো তো মোস্ট এক্সপেনসিভ প্লেস অন আর্থ হল ডেথপ্লেস। আমরা সবাই সেখানে যাব, তো সেখানে গিয়ে যেন কোনওদিন যেন না মনে হয় ইস্ জীবনটা মিস করে গেলাম। আরেকটু যদি মানুষকে ভালোবেসে বাঁচতে পারতাম তাহলে মরে যাওয়ার পরে আমাকে নিয়ে কেউ খারাপ কথাগুলো বলতো না। আমি বিশাল একজন মানুষ হলাম, কিন্তু মরে যাওয়ার পর সবাই গালাগাল করল তখন আর কী দাম!

১৫) আচ্ছা এবার একটা ব্যক্তিগত বিষয় জিজ্ঞেস করি, তুমি কোন বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলে?

সৌকর্য- ক্লাস এইটে। সেটা তারপর যা হয়। যেভাবে জীবন যেভাবে চলল তারপর আর সেটা ছিল না।

১৬) আচ্ছা তোমার কাছে কোন সিনেমাটা বেশি কাছের? পেন্ডুলাম, লোডশেডিং নাকি রেনবো জেলি?

সৌকর্য- অবশ্য রেনবো জেলি। ভীষণ কাছের। চোখ বুজে আমি বলতে পারি আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় এই রেনবো জেলি। আমি এখন আফসোস করি রেনবো জেলি কেন আমার প্রথম ছবি হল না।

১৭) এরপরের মিশন কি ঠিক করে ফেলেছ?

সৌকর্য- হ্যাঁ, পরেরটা ঠিক করা আছে। এটা একটু সামলে নি, তারপর পরের টা নিয়ে বসব। সেটা নিয়ে এখনই কিছু বলব না সময় হলে বলব।

১৮) সবশেষে Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিট্যালের পাঠকদের জন্য যদি কিছু বলো?

সৌকর্য- পাঠকদের এটাই বলব, আমাদের ছবিটার পাশে থাকুন। ছবিটা অনেকেই দেখছেন, আরও বেশি করে যেন সকলে দেখেন। আরও অনেক বেশি করে সকলকে ‘রেনবো জেলি’র কথা বলুন। অনেকেই ভালো ছবি কবে নেটে পাওয়া যাবে, টিভিতে দেখা যাবে তার জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু তার আগে হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখতে হবে। বানিজ্য না হলে আমি কীভাবে পরের একটা ভালো ছবি বানাবো?  ভালো ছবি না হলে সেটা নেটেও আসবে না, টিভিতেও আসবে না। তাই এটাই বলব পাশে থাকুন...

 

.