Jeetu Kamal: 'সমালোচনা নিয়ে ভয় পাই না কারণ আমি কোনও শর্টকাট নিইনি', অপরাজিত নিয়ে আত্মবিশ্বাসী জীতু কমল

'আমাকে কোনও কিছুই বিচলিত করে না আবার সামান্য জিনিসও বিচলিত করে। ছোটবেলা থেকেই এরকম অদ্ভুত আমি। আমি এটাই বলতে পারি, যে যেমনভাবে দেখবেন সেরকম বলবেন, সকলের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে, বাক্ স্বাধীনতা রয়েছে।', জীতু কমল

Reported By: সৌমিতা মুখার্জি | Updated By: May 12, 2022, 03:16 PM IST
Jeetu Kamal: 'সমালোচনা নিয়ে ভয় পাই না কারণ আমি কোনও শর্টকাট নিইনি', অপরাজিত নিয়ে আত্মবিশ্বাসী জীতু কমল

সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: ফার্স্টলুক থেকে ট্রেলার, ইতিমধ্যেই দর্শকের মন জয় করেছেন পর্দার অপরাজিত রায় অর্থাৎ জীতু কমল(Jeetu Kamal)। শুক্রবার মুক্তি পেতে চলেছে অনীক দত্তের(Anik Dutta) ছবি 'অপরাজিত'(Aparajito)। সেই ছবির মুখ্য চরিত্র অপরাজিত রায় তৈরি হয়েছে কিংবদন্তি পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের(Satyajit Ray) আদলে। সেই চরিত্রেই রয়েছেন জীতু। ছবি মুক্তির আগে স্বপ্নের চরিত্র নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় অভিনেতা। 

প্রশ্ন: কীভাবে এই রোলটা পেলে?

জীতু কমল: গতবছর মে বা জুন মাসে অনীকদা ফোন করে কিছু ছবি চায়। আমার মোবাইলে থাকা ছবি চলবে না, তখনই তুলে দিতে হবে ছবি। একদম ঐ সময়ে পাঞ্জাবী পরে কোনও মেকআপ, ফিল্টার ছাড়া ছবি চাই। পাঠানোর পরে আমাকে একটু স্ক্রিপ্ট দিলেন পাঠ করে পাঠাতে বললেন। পাঠানোর পর ১৫ দিন কোনও কথা হয়নি। তারপর জানালেন এই ছবিতে অল্প বয়স্ক সত্যজিৎ রায়ের জন্য আমায় পছন্দ করা হয়েছে। খুব কম সংখ্যক সিন থাকবে কিন্তু আমাকে লোকে চিনবে এমনই আমায় বলা হয়। আমি রাজি কিনা জিগেস করেন। আমি বাড়িতে ও আমার অভিনয়ের শিক্ষকদের জিগেস করলাম সবাই বললেন সত্যজিৎ রায় যেকোনও বয়সেই হন, তিনি কিংবদন্তি, তাই 'না' করো না। আমার একটা কন্ডিশন ছিল। 

প্রশ্ন: কী শর্ত? 

জীতু কমল: আমি বলেছিলাম যে, মূল শুটের আগে কয়েকটা ছোট সিন শুট করব। সেগুলোর জন্য আমি পারিশ্রমিক নেব না। তারপর আমার লুক সেটের জন্য ডাকা হয়। সেদিন খুব কম সময়েই আমার লুক সেট করা হয়। আমি একটা ছবিও দেখিনি। রাতে আমাকে অনীকদা ছবি পাঠায় আর বলে যে বড়স্ক্রিনে দেখতে। আমি বাড়ির টিভিতে দেখি, দেখে আমি বলি যে এগুলো তো আসল ছবি আমাকে আমার ছবি পাঠাও। অনীকদা আমাকে বলল ইডিয়ট (হেসে)এটা তোমারই ছবি। আমি হাঁ হয়ে গেছি সত্যিই কি এগুলো আমার ছবি! আমার স্ত্রী নবনীতাকে দেখাই, স্ত্রীও ভাবে অরিজিনাল সত্যজিৎ রায়ের ছবি। 

প্রশ্ন: তুমি নিজেও কখনও ভাবতে পারোনি যে তোমাকে ওঁর মতো দেখতে!

জীতু কমল: না না আমি কখনই ভাবিনি। ওভাবে চুল আঁচড়ে ওরকম লুকে দেখিনি। আমার প্রস্থেটিক খুব কম হয়েছে, গালে খানিকটা হয়েছে কারণ ওটা সত্যজিৎবাবুর সিম্বল। কিন্তু ওভাবে কখনও হবে ভাবিনি। সেখান থেকে পুরো চরিত্রটার জন্য উনি আমাকে নিয়ে যেভাবে লড়লেন সেটার জন্য আমি ধন্য। ফাইনালাইজ হতে অনেকটা সময় লেগেছিল। কোন বয়সকালটা যে আমি করছি সেটা জানতে জানতেই সেপ্টেম্বর চলে এলো। আমারও কিছু কাজ ছিল। পুজোর আগে আগে জানলাম পুরোটাই আমি করছি। 

প্রশ্ন: বহুমানুষ তোমায় চিনতেই পারেননি প্রথম ছবি দেখে, তোমার ব্যক্তিগত জীবনে এরকম কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে? 

জীতু কমল: হ্যাঁ হয়েছে। মফস্বলে এক নাট্যমেলায় সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে আমার এক পোস্টার লাগানো হয়েছিল, সেই পোস্টার দেখে আমায় একজন মেসেজ করে যে,'একদম তোমার মতো লাগছে, একটা অ্যাঙ্গেল থেকে সত্যজিৎ রায়কে তোমার মতো লাগছে'। আমি নিজেই তো চিনতে পারিনি প্রথমে, সেখানে আমি কী করে তাঁকে বলি! বলতে পারিনি, ওটা আমিই। আজও বলিনি, তিনি এখন নিশ্চয় জানেন। 

প্রশ্ন: লুক তো হল, ম্যানারিজমের জন্য তোমার প্রিপারেশন কী ছিল?

জীতু কমল: সত্যি বলতে আমি সেরকম প্রিপারেশন বলতে প্রচুর ভিডিও দেখেছি। অনীকদা দিনরাত আমায় লিঙ্ক পাঠাচ্ছে আমি দেখে যাচ্ছি আর নিজের যাপনে অন্তর্ভুক্ত করছি। আমার কাছে সত্যজিৎ রায় মানে ছিলেন পথের পাঁচালি, অস্কার, খুব ভালো বাংলা ইংরাজী অনেক ভাষা বলেন, কিংবদন্তি পরিচালক, সংগীত পরিচালক এই অবধি। কিন্তু যখন আমি এই ছবির মধ্যে ঢুকি তখন বুঝতে পারি এই মানুষটা একটা সমুদ্র, সারা বিশ্বে যাঁরা ছবি নিয়ে বাঁচেন তাঁদের কাছে সমুদ্র। সেই সমুদ্রে আমি নেমেছি। অনীকদা সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে এতোটা প্যাশনেট, এতো তাঁর পড়াশোনা যে বলাই যায় যে, ঐ সমুদ্রে কিছুটা অনীকদার বাড়িতেই আছে। 

প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায়ের বাচনভঙ্গী...

জীতু কমল: হ্যাঁ, ওটাই আমি প্রথম অবসার্ভ করি যে, আমরা যাঁরা সাধারণ বাঙালিরা ইংরাজি বলি তাঁরা লিকার্ডো টোনে কথা বলি। উনি স্ট্যাকাটো টোনে কথা বলতেন। মানে প্রতিটা শব্দ গোটা গোটা করে কেটে কেটে বলতেন কিন্তু একটা গতি আছে। এটা আনতে আমার সময় লেগেছে। তবে ওঁর বসা, তাকানো, চলন কীভাবে আত্মস্থ করলাম, এটা আমি কোনওভাবেই বোঝাতে পারব না। আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। আমি লিস্ট করতে শুরু করি যে আমায় কী কী করতে হবে? অনেক অদেখা ভিডিও পাই। বাড়িতেও ওভাবে চলছি, বলছি। মা-কে ওভাবেই ডাকছি, করতে করতে খানিকটা হয়তো রপ্ত করতে পারলাম। 

প্রশ্ন: প্রথম শটে অনীকদা কী বলেছিলেন?

জীতু কমল: খুব স্পষ্ট মনে আছে এটা আমার। বীরভূমে প্রথম শট ছিল। মাকে নিয়ে তখন আমি দার্জিলিঙে, মায়ের শরীর ভালো ছিল না এদিকে অনীকদা শেষ মুহূর্তে জানান যে সাত-আট দিন ওখানে থাকতে হবে। মা-কে না করতে পারিনি, অনীকদাকে বললাম, উনি মেনে নিলেন আমার আবদার। আমি এয়ারপোর্ট থেকে নেমে সোজা শুটিং স্পটে গেলাম। পরেরদিনই শট ছিল। প্রথম শটেই অনীকদা হাততালি দিলেন, খুব প্রশংসা করলেন। প্রোমোতে ঐ শটটা আছে। শুটিংয়ের মাঝে মাথা হাত দিয়ে বসে আছি, ওটা প্রথম শট। আমি আসলে যেখানেই থেকেছি আমি ওটার মধ্যেই বেঁচেছি। ডাক্তার থেকে শুরু করে হোটেল বয়, সবার সঙ্গে ওভাবে কথা বলছি। 

প্রশ্ন: মানে তুমি সত্যজিৎ রায়কে আত্মস্থ করে নিয়েছো?

জীতু কমল: না, আমি পুরোটা পারিনি। অনীক দত্ত করেছেন। উনি ওঁর মধ্যেই বাঁচেন। আমার মনে হয় সত্যজিৎ রায় ওঁর বাড়িতে আসেন, থাকেন। ওঁর সঙ্গে কথাও বলেন হয়তো। আমি আশীর্বাদধন্য যে এর একটু অংশ হতে পেরেছি। 

প্রশ্ন: তোমার চরিত্রটি সত্যজিৎ রায়ের আদলে যেখানে বিতর্ক, সমালোচনা আসবেই, সেটা নিয়ে তুমি কতোটা বিচলিত? 

জীতু কমল: আমাকে কোনও কিছুই বিচলিত করে না আবার সামান্য জিনিসও বিচলিত করে। ছোটবেলা থেকেই এরকম অদ্ভুত আমি। আমি এটাই বলতে পারি, যে যেমনভাবে দেখবেন সেরকম বলবেন, সকলের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে, বাক্ স্বাধীনতা রয়েছে। কাজটা করে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার মনে হয় আমি অতোটা নিরাশ করবো না যতটা সমালোচনা করার জন্য সমালোচকরা বসে আছেন। তাঁরা দেখে একবার হয়তো ভাববেন, এটায় অনেকটা কষ্ট, অনেকটা পরিশ্রম আছে। আমার ভয় বলে কিছু নেই কারণ আমরা কোনও শটকার্ট নিইনি। এরপরও যদি কেউ সমালোচনা করতে চান তো করবেন। 

আরও পড়ুন: Exclusive Aparna Sen on The Rapist: 'একের পর এক ধর্ষণের খবরে দুঃখ, বিষাদ,হতাশায় মন ভারাক্রান্ত', অকপট অপর্ণা সেন

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)

.