ফিরে দেখা : কেমন গেল টলিউডের বছরটা

Updated By: Dec 22, 2016, 04:24 PM IST
ফিরে দেখা : কেমন গেল টলিউডের বছরটা

অম্ল-মধুর, তিক্ত না কি নির্ভেজাল মিষ্টি? কেমন গেল টলিউডের বছরটা। পর্যালোচনায় ফিল্ম সমালোচক শর্মিলা মাইতি

সাফল্যের কোনও ফর্মুলা নেই, কোনও শর্টকাটও নেই। ইচ্ছে দিয়ে শুরু করে যাঁরা দেখেছিলেন রামধনুর রং, তাঁরাই আবার প্রমাণ করে দিলেন, বেলাশেষেও সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়! ১৪ বছর বাদে নিজেদের মনোমালিন্য ভুলে প্রসেনজিত্‍ আর ঋতুপর্ণাকে জুটি হিসেবে ক্যামেরার সামনে আনতে পারলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি। আর সত্যি বলতে কি, প্রাক্তন ছাড়া আর কীই বা নাম হতে পারত এ ছবির। ২৭ মে দেশে-বিদেশে এবং বাংলায় মুক্তির আলো দেখল প্রাক্তন, দেখল সাফল্যের আলোও।

বর্তমান নয়, প্রাক্তনই টলিউডের ভরসা। বাণিজ্য, আবেগ আর সেনসেশন, তিনটে বিভাগেই ভিকট্রি স্ট্যান্ডে উঠে দাঁড়ালেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি। ছবির নাম প্রাক্তন। ১৪ বছর পর আবার ক্যামেরার সামনে সেই প্রসেনজিত্-ঋতুপর্ণা জুটি। যাঁরা একসময়ে রুক্ষ, শুকনো জমিতে পরের পর হিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত মনোমালিন্যের খানিকটা হয়ত উঠে এল ছবির পর্দাতেও, তবে আখেরে লাভ হল প্রসেনজিত্‍ আর ঋতুপর্ণা, দুপক্ষেরই। টলিউডের সেরা তালিকায় আবার নিজেদের প্রমাণ করে দিলেন তো! গল্পটা লিখেছিলেন নন্দিতা রায়। বাণিজ্যের ক্যালকুলেশনটাও অতিরিক্ত যত্নসহকারে করেছিলেন শিবপ্রসাদ। একই দিনে সারা বিশ্বের বিভিন্ন বাঙালি অ্যাসেশিয়েশনও দেখেছিল এই ছবি। তিন দিনেই প্রাক্তন ছবির কালেকশন ছাড়িয়েছিল ১ কোটি। যা অধুনা বাংলা ছবির বাণিজ্যে বিরল দৃষ্টান্ত। প্রাক্তন ছবির মোট কালেকশন প্রায় ৫ কোটি।

প্রসেনজিত ও ঋতুপর্ণা আলাদা আলাদাভাবেও এ বছর সফল। এ বছর মুক্তি পেয়েছে শঙ্খচিল। সেরা ছবির জাতীয় পুরস্কারও এসেছে প্রসেনজিতের ঘরে। মুক্তি পেয়েছে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ক্ষত এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জুলফিকার। দ্বিতীয় ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে শুধু নয়,  নিজের অভিনয় ও লুকস-এর উপরও নানা এক্সপেরিমেন্ট করবার সুযোগও পেয়েছেন প্রসেনজিত। তবে এ বছর সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি মহানায়ক সিরিয়ালে উত্তমকুমারের ভূমিকায় অভিনয় করতে। কিছুটা সমালোচনার শিকারও হয়েছিলেন তিনি, তবু থামেনি তাঁর কাজের উদ্যম।

আর, এই বাজারেও অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করলেন ঋতুপর্ণা, যেখানে তিনিই মধ্যমণি। রাতের রজনীগন্ধা, মহানায়িকা থেকে মায়ামৃদঙ্গ হয়ে আগুনের পাখি, ছবির ভাগ্য যেমনই হোক, নিজের মতো করে কেরিয়ারটা এগিয়ে নিয়ে চলেছেন টলিউডের মহানায়িকা।

হিরোগিরি খতম, মননের শুরু

এ বছরের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংবাদ হতে পারে এটা। বাণিজ্যিক ছবির নায়কের মৃত্যু। বেশ কয়েক বছর ছরে একাধিপত্য ছিল দেবের। তার পর কয়েক বছর ধরে কিন্তু ময়দানে দেব আর জিতের যুযুধান। সাড়া জাগিয়েছিলেন অঙ্কুশও। কিন্তু হিরোরা আর ছবি টানতে পারছেন কই? একের পর এক ফ্লপ ছবি পাল্টে দিল, বদলে দিল কমার্শিয়াল ছবির ডেফিনিশন।

প্রতি বছরেই ঈদের দিনে ধন্ধুমার লড়াই বাধে হিরোদের মধ্যে। এ বছর ঈদ রিলিজ রাজা চন্দের কেলোর কীর্তি কিন্তু মান্টিস্টারার। বলিউডের হিট ছবি নো এন্ট্রি-র আদলে বানানো কেলোর কীর্তি-তে দেব, যিশু, অঙ্কুশ অভিনয় করলেন দুর্দান্ত। অন্যদিকে জিতের ছবি বাদশা দ্য ডন। নাঃ, যতটা গর্জাল, ততটা বর্ষাতে পারল না।

এমনকি দেবের ম্যাজিকও কোথাও যেন উধাও। রাজীব বিশ্বাসের ছবি দেব-নুসরত জুটির লভ এক্সপ্রেস। হালকা মেজাজের মজাদার গল্প, পপকর্ন খেতে খেতে দেখা যায়, কিন্তু দেখার লোক কোথায়?

অঙ্কুশ বেরিয়ে আসার পর ওম-এর উপর ভরসা করেছিল এসকে মুভিজ। অঙ্গার ছবিতে ওম বেশ নজর কেড়েছেন, কিন্তু শুভশ্রীর বিপরীতে প্রেম কি বুঝিনি, ছবিতে ওম-এর পারফরম্যান্স নেহাতই মাঝারি মানের। এমনকি বাংলাদেশের হিট নায়ক সাকিবকে নিয়ে শিকারী ছবিটির বাণিজ্যিক রিপোর্টও তথৈবচ। টিকিট কেটে এঁদের পারফরম্যান্স দেখতে আসছেন না কেউই।

একইভাবে অঙ্কুশের জন্যেও প্রচুর টাকা ঢেলেছিল ভেঙ্কটেশ ফিল্মস। কিন্তু এককভাবে তাঁর পারফরম্যান্স ভক্তদের টানতে অপারগ বলেই মনে করছেন প্রোডিউসার। অঙ্কুশ-মিমি জুটির কী করে তোকে বলব কিন্তু দর্শকমহলে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। দেখা যাক, অঙ্কুশ-নুসরত জুটির আগামী ছবি হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা এই মিথ ভাঙতে পারে কি না!

হিরোগিরির মৃত্যু ঘটল ঠিকই, কিন্তু তার জায়গা দখল করে নিল গোয়েন্দাদের দাদাগিরি। পর্দায় হিরো এখন ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সী, শবর দাশগুপ্ত, কিরীটী। এ বছর দর্শককে প্রবলভাবে টানছেন সাহিত্যের গোয়েন্দারা। এমনকি থ্রিলার ছবিও চলল রমরম করে। একেই বলে উলটপুরাণ

মিথ্যে আর হেঁয়ালির কচুরিপানা সরিয়ে স্বচ্ছ সত্যের অনুসন্ধান। যে সত্য দেখা যাচ্ছে না, তাকে ছোঁয়ার প্রবল চেষ্টা। মানুষের এই স্বাভাবিক মনস্তত্ত্বের উপর ভরসা করেই টলিউডের পর্দায় গোয়েন্দার আগমন। ২০১৬ সালে অক্সিজেন জোগাল সত্যজিতের সৃষ্টি ফেলুদা, সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ, লালবাজারের ডিটেকটিভ শবর দাশগুপ্ত। আর এই মঞ্চেই নয়া আমদানী নীহাররঞ্জন গুপ্তের কিরীটী, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত।  

অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ যিশু। গত বছর পুজো রিলিজ থেকেই দর্শকের চোখের মণি যিশু। আবীরের প্রতিস্থাপন হিসেবে যিশুর মঞ্চে আগমন হলেও কিন্তু নিজের গুণেই যিশু জায়গাটা দখল করে নিলেন। এ বছর ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা পুজোর মরশুমে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে। অরিন্দম শীলও পিছিয়ে নেই। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ঈগলের চোখ উপন্যাস অবলম্বনে তঁার দ্বিতীয় ছবি সন্তোষজনক ব্যবসা দিয়েছে। ব্যোমকেশ পর্ব সবে মুক্তি পেয়েছে, যেখানে আবীরকে তিনি জমজমাট অ্যাকশন-প্যাকড ব্যোমকেশের চেহারা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দুই ব্যোমকেশের এই লড়াই কিন্তু জমে উঠেছে স্ক্রিনে।

এক টিকিটে দুটি ফেলুদা দেখার কনসেপ্ট নিয়ে প্রথমেই চমক দিলেন সন্দীপ রায়। ডবল ফেলুদা-য় আবার সব্যসাচী ফিরলেন। আর এক কথায়, এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। বয়সের ভার কিন্তু সব্যসাচীকে ফেলুদার চিত্রণ থেকে সরিয়ে আনেনি। প্রথম দিনে তাঁর জনপ্রিয়তাই আসলে ব্যোমকেশকে ব্যাকসিটে রেখে দিল।

আর এ বছরেই মঞ্চে আগমন ঘটল কিরীটীর। কালো ভ্রমর অবলম্বনে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত সমালোচিত হলেন, কিন্তু বক্স অফিসে ব্যবসা দিল ভালই। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের বছরশেষের রিলিজ কিরীটী রায় ছবিতে আবার আবির্ভাব চিরঞ্জিতের। দর্শক তাঁকে কিরীটী হিসেবে ভালই নিয়েছেন।

এ বছর নজরকাড়া পারফরম্যান্স গোয়েন্দা চন্দ্রকান্তরও। অয়ন চক্রবর্তীর ছবি ষড়রিপু-তে গোয়েন্দা চন্দ্রকান্তর ভূমিকায় অভিনয় করলেন চিরঞ্জিত্‍। পেলেন দর্শকের প্রশংসাও। চমকে দিল সাহেব বিবি গোলাম-ও। প্রতিম ডি গুপ্তর এই থ্রিলার বহুদিন আটকে ছিল সেন্সর বোর্ডের গেরোয়। সম্ভাবনা জোগাল দেবারতি গুপ্তর ছবি কুহেলি-ও। থ্রিলার ছবির বাসনা আর রসনা দুটোই তৃপ্ত হল দর্শকের।

কিরীটী রায় যে কেন এতদিন ব্রাত্য ছিলেন, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকবে। কিন্তু তার পেছনে কারণটা কোনও আতসকাঁচের অনুসন্ধানে বের করতেই হবে না। নীহাররঞ্জন গুপ্তের তিন কন্যার মধ্যে কপিরাইট ভাগাভাগিই ছিল এর নেপথ্যকাহিনি। কিন্তু কিরীটী নিয়ে কাড়াকাড়ির কাহিনিও বেশ জম্পেশ রোমহর্ষক। সেটাই এবার দেখুন বছরশেষের বক্স অফিসে।

ছ ফুট দুই ইঞ্চি লম্বা চেহারা। মাথা ভরতি কোকড়ানো চুল ব্যাকব্রাশ করা। দৃষ্টিতে অসম্ভব তীক্ষ্ণতা। এমন এক সুপুরুষ, সুদর্শন গোয়েন্দা নাকি এতদিন বড়পর্দায় ব্রাত্য ছিলেন? ভাবা যায়!

কিন্তু যখন রুপোলি মঞ্চে আবির্ভূত হলেন তিনি, তখন কিন্তু কিরীটী ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছেন। অনিন্দ্যবিকাশ দত্তের ছবিতে কিরীটীর ভূমিকায় ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস কালো ভ্রমরের রাইটস পেয়েও পরিচালক ঔপন্যাসিকের প্রতি যথেষ্ট ন্যায়বিচার করেছেন বলে মনে হল না।

আসলে নীহাররঞ্জন গুপ্তের তিন কন্যার মধ্যে স্বত্ত্ব ভাগাভাগি হয়েছিল। এতদিন ধরে তাঁরা বিভিন্ন পরিচালককে ফিরিয়েছেন, কারণ তাঁরা চেষ্টায় ছিলেন হিন্দিতে স্বত্ত্ব বিক্রি করবার। বিফলমনোরথ হয়ে এবার বাংলার প্রযোজকের কাছেই স্বত্ত্ব বিক্রয় করেছেন তাঁরা। তার ফলে, কিরীটী প্রথম আবির্ভাবেই তিন তিন জন অভিনেতার মুখ নিয়েছে। দ্বিতীয়জন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কিরীটী রায় ছবির নায়ক চিরঞ্জিত্‍। এঁর চেহারা ও গাম্ভীর্য অনেকটাই মেলে নীহার গুপ্তের কিরীটীর সঙ্গে।

নীহার গুপ্তের মেজো কন্যা করবী সেন স্বত্ত্ব বিক্রি করেছিলেন পরিচালক অনির্বাণ পারিয়াকে। এ বছরই তিনি এবং কিরীটী ছবির শুটিং শুরু করে দিয়েছেন। কিরীটীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন প্রিয়াংশু চ্যাটার্জি। তাঁর চেহারা যদিও বইয়ের পাতার বর্ণনার সঙ্গে মেলে, কিন্তু অভিনয়দক্ষতায় তিনি কতটা নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন, সেটাও সময়ের অপেক্ষা।

২০১৬ সালে সেরা ছবির শিরোপা পাবেন কারা? বেশ কঠিন কাজটার মুখোমুখি হয়ে আমরা ভাগ করে নিলাম দুটো ক্যাটেগরিতে। এক নম্বর অবশ্যই বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবি। অন্যটা অন্য ধারার ছবি। তবুও দুটো ধারার ছবির সীমারেখা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। বাকিটা নির্ণয় করবার ভার দেওয়া থাক দর্শকের উপর।

ক্যাটেগরি- কমার্শিয়াল

১.সেরার সেরা তকমাটা না হয় তোলা রইল শিবপ্রসাদ নন্দিতা জুটির প্রাক্তন ছবির জন্য। কিন্তু এবারের পুজোর বাজারে দারুণ ব্যবসা দিল অঞ্চন দত্তের ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখানা। যিশু আবার তাক লাগালেন। বাণিজ্যসফল ছবির ক্যাটেগরিতে প্রথমেই থাকবে এই ছবি।

২.দ্বিতীয় স্থানের শ্রেষ্ঠ দাবিদার অবশ্যই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। মাল্টিস্টারার জুলফিকার কেমন হয়েছে তা নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকতেই পারে, কিন্তু এক টিকিটে প্রসেনজিত্‍, দেব, অঙ্কুশ, পরমব্রত কে দেখার লোভ সামলাতে পারেনি গ্রাম-শহরের বহু দর্শক। তাই হল কালেকশন হয়েছে দ্রুতগতিতে।

৩. অরিন্দম শীলের ছবি ঈগলের চোখ প্রথমদিকে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও, শাশ্বত চ্যাটার্জির টানটান পারফরম্যান্স আর গল্পের উষ্ণতাই সেরা আকর্ষণ ছিল। ওয়ার্ড অফ মাউথ পাবলিসিটিতে এই ছবি ব্যবসা দিল দারুণ।

৪. গত বছরের খরা কাটিয়ে জিত্‍ একমাত্র নায়ক যিনি ভাল ব্যবসা দিলেন বাদশা দ্য ডন ছবিতে। টাকা উঠে এসেছে। স্বচ্ছন্দে।

৫. কিরীটীর আবির্ভাব কৌতূহল জাগিয়েছে দর্শকের মনে। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে কেমন মানায় দেখতে ভিড় করেছিলেন আবালবৃদ্ধবণিতা।

ক্যাটেগরি- অন্য ধারার ছবি

১. এ যুগের এপার বাংলা ওপার বাংলার শ্রেষ্ঠতম আখ্যান রুপোলি পর্দায় নির্মাণ করলেন গৌতম ঘোষ। দেশভাগের যণ্ত্রণা আজকের যুগেও কেমন ফল্গুস্রোতের মতো বইছে, সেটাই দেখালেন তিনি। অসামান্য অভিনয় প্রসেনজিত্‍ ও বাংলাদেশের নায়িকা কুসুমের। নিঃসন্দেহে অন্যধারার ছবির শ্রেষ্ঠ পুরস্কার- শঙ্খচিল ছবির।

২. কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি সিনেমাওয়ালা বহু ফেস্টিভ্যালে জয় করেছে মানুষের মন। অসম্ভব প্রশংসিত পরমব্রতর পারফরম্য়ান্সও। এশিয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কার, ফেলিনি অ্যাওয়র্ড জিতেছেন কৌশিক। এ ছবি তাই দ্বিতীয় স্থানে।

৩. এ যাবত কলকাতা চলচ্চিত্র উত্সবে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে বাংলা ছবি এন্ট্রি পায়নি। সেই জগদ্দল পাথরটা ভাঙলেন রানা-সুদেষ্ণা পরিচালক জুটি। বেঁচে থাকার গান গেয়ে। গার্গীর পারফরম্যান্সও দারুণ।

৪. কৌশিক গাঙ্গুলির বছরের প্রথম ছবি বাস্তুশাপ। কাহিনির মাহাত্ম্য, স্টার অ্যাট্রাকশন, কোনওটারই কমতি ছিল না। বক্স অফিসে সাফল্য দিল এই ছবি।

৫. সাহেব বিবি গোলাম ছবিতে নিজেকে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন প্রতিম ডি গুপ্ত। দারুণ অভিনয় করেছেন স্বস্তিকা ও বিক্রম চ্যাটার্জি।

সেরা নায়ক, নায়িকা, পরিচালক (কে কোথায় দাঁড়িয়ে)

সেরা নায়কের সিংহাসনটা এবার ছিনিয়ে নিলেন পরমব্রত। অনেকদিনই তাঁকে অন্য ধারার নায়ক বলে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন অনেকেই। তাঁদের সবাইকে সমুচিত জবাব দিলেন পরমব্রত। কখনও তাঁর ঝুলি থেকে বেরল সিনেমাওয়ালা। কখনও বা হেমন্ত ছবির হ্যামলেট। কখনও জুলফিকারে দেখালেন তাঁর কেরামতি। সব মিলিয়ে এটা ছিল পরমব্রতর বছর।

যিশুকে তো দ্বিতীয় স্থানে থাকতেই হবে, কেননা হিটমেশিন হলেও অভিনয় করেছেন খুব অল্প ছবিতে। জুলফিকর আর ব্যোমকেশ ও চিড়িয়াখান। কোয়ান্টিটিতে হারলেন পরমব্রতর কাছে।

তৃতীয় স্থানে এবার নেমে দাঁড়াতেই হবে আবীরকে। ব্যোমকেশ পর্বে যদিও তিনি দেখিয়েছেন তাঁর কীর্তিকলাপ, তবু বাস্তুশাপ দেখে মনে হয়েছে আর একটু বেশি পাওয়া গেলে ভালই হত। ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ডে চমক আছে, তবু আবীরের অভিনয়টা কোথাও যেন একটু প্রত্যাশার চেয়ে কমই মনে হয়।

দেবকে ঠিক চতুর্থ বলা চলে না। জুলফিকার দেখে শহুরে মেয়েরা নতুন করে প্রেমে পড়েছেন দেবের। তবু লভ এক্সপ্রেস আর কেলোর কীর্তি তো ফ্লপ, তাই কি আর করা যাবে!

বছরের শুরু থেকে শেষ, কী করে তোকে বলব থেকে হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা, কেবলই ছবি করে গিয়েছেন অঙ্কুশ। একনাগাড়ে। এই টেনাসিটির জন্যেই অঙ্কুশ থাকবেন পাঁচ নম্বরে।

নায়িকা মহলেও ঘটে গিয়েছে উলটপুরাণ। কেননা, কোয়েল মল্লিকের নেই কোনও রিলিজ। রাইমা সেনও ছবির সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন। অন্যদিকে শ্রাবন্তী, পায়েল, জয়া এহসানের মতো নায়িকারা দুটিএকটির বেশি ছবিও করেননি। কাজেই এবার ছকটা আবার ঢেলে সাজানো হল। দেখুন এবার।

১. সারা বছর নানা হিট ফ্লপ অ্যাভারেজ দিয়ে বাজার চাঙ্গা রেখেছেন নুসরত।

২. দু নম্বরে অবশ্যই থাকবেন শুভশ্রী। জিতের সঙ্গে অভিমান যেমন করেন, তেমনি প্রায় নবাগত ওমের সঙ্গেও নায়িকা হতে আপত্তি নেই। প্রেম কি বুঝিনি তাঁর প্রমাণ।

৩. নৃত্যপটিয়সী সায়ন্তিকা কিন্তু মোক্ষম চাল চেলেছেন। সবসময়েই দুই নায়িকার এক নায়িকা হন তিনি। এবার ব্যোমকেশ পর্বে তাঁর নাচ দেখে মুগ্ধ বলিউডও। কাজেই নেক্সট বিগ থিং হওয়ার থেকে আটকাচ্ছে না কেউ।

৪. চার নম্বরে যুগ্মভাবে স্বস্তিকা ও পাওলি। অনেকদিন পর স্বস্তিকা অভিনয় দেখানোর সুযোগ পেলেন। সাহেব বিবি গোলাম ছবিতে তাঁর পারফরম্যান্স নজরকাড়া। সঙ্গে টেক্কা দিলেন পাওলিও মহানায়ক সিরিয়ালে সুচিত্রা সেনের অভিনয় সবার নজর কেড়েছে। তাঁকে ভাল লেগেছে কমলেশ্বরের ক্ষত ছবিতেও।

৫. অনেকে বলেন তাঁকে এখনও আবিষ্কারই করা হয়নি। গ্যাংস্টার আর কী করে তোকে বলব, দুটো ছবিতেই নজরকাড়া কারফরম্যান্স মিমির। ব্যক্তিগত জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, কাজের জায়গাটা তিনি ঠিক রেখেছেন।

প্রতিষ্ঠিত পরিচালকেরা কিন্তু অনেকেই একটির বেশি ছবি করেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম কৌশিক গাঙ্গুলি। সৃজিত মুখার্জির ফ্যানরা কিন্তু বেশ নিরাশ। তবে সেরার আসন থেকে কে-ই বা টেনে নামাবে শিবপ্রসাদ নন্দিতাকে। কিন্তু যেভাবে সুদেষ্ষা- অভিজিত্‍ গাইলেন বেঁচে থাকার গান, তাতে মনে হচ্ছে নেক্সট ইয়ারে প্রতিযোগিতা আসন্ন।

পরিচালক নয়, পরিচালক জুটির দ্বৈরথ বলা চলে বছরটাকে। ২০১৫ বেলাশেষে-র ট্রাডিশন বজায় রেখে এ বছরও সেরার আসন ছিনিয়ে নিলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি।

দ্বিতীয় স্থান অবশ্যই প্রাপ্য কৌশিক গাঙ্গুলির। বাস্তুশাপ থেকে সিনেমাওয়ালা, মিলিয়ে মিশিয়ে বেশ ভালই দর্শক টানলেন সারা বছরে।

তৃতীয় স্থানে নিঃশ্বাস ফেলবেন অপর দুই ডিরেক্টর যুগল। সুদেষ্ণা রায়-অভিজিত্ গুহ প্রমাণ করলেন যে, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। বহুদিন ধরে লড়াই করবার পর তাঁরাও গাইলেন বেঁচে থাকার গান।

অরিন্দম শীল পরিচালক হিসেবে সবসময়েই তাঁর স্বকীয়তা বজায় রাকেন। এ বছর তাঁর দুটি ছবিই দর্শককে যথেষ্ট আকর্ষণ করেছে। সেরা তালিকার অন্যতম দাবিদার তিনি।

কম্পিটিশনের বাইরে থাকবেন গৌতম ঘোষ। এক কথায় শঙ্খচিল তাঁকে পৌঁছে দিল কিংবদন্তির আঙিনায়।

এদিকে এবছর দুটো বড় থাবাই নড়িয়ে দিল টালিগঞ্জ অর্থনীতির ভিত্। সারদা কাণ্ডের প্রভাবে চিটফাণ্ড বন্ধ হওয়ায় আটকে গিয়েছিল বহু ছবির মুক্তি। কারণ, সেসব ছবির সিংহভাগই তৈরি হত চিটফাণ্ডের টাকায়। এ বছর আঘাতটা সাময়িক হলেও বেশ জোরদার। ডিমনিটাইজেশনের প্রভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যত কাজ কালো টাকায় হত, সবই ক্ষতির মুখ দেখল। ২০১৬ বছরটা সত্যিই কি তবে কালো বছর হয়ে থাকবে?

হঠাত্ই বন্ধ হয়ে গেল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। কিন্তু এই নোটের উপরেই কর ফাঁকি দিয়ে রমরমা ব্যবসা চলছিল টলিউডে। সেই সময়ে মুক্তি পেয়েছিল আবীর ও সাবিত্রী জুটির ঠাম্মার বয়ফ্রেন্ড ছবিটি। পরিচালক অনিন্দ্যর দাবি, বহু মানুষ যাঁরা টিকিট কাটতে নোট ব্যবহার করতে পারতেন, তাঁরা এটিএমএর লাইনে দাঁড়িয়েছেন, ছবি দেখতে আসেননি। স্থগিত হয়েছে অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের শঙ্কর মুদি ছবিটিও। যদিও এই ছবি ইতিমধ্যেই কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানো হয়েছে।

দেব-শুভশ্রী জুটির ছবি ধুমকেতু-ও নাকি এই ডিমনিটাইজেশনের শিকার। রানা সরকার প্রোডাকশনের এই ছবি নিয়ে জল্পনা গত বছর থেকেই। কথা ছিল ২৫ ডিসেম্বর মক্তি পাবে, দেবের জন্মদিনে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। এখনও স্থির নেই আগামী বছর কবে মুক্তি পাবে কৌশিক গাঙ্গুলির এই ছবি।

ভাঙাগড়া বারবার...

অফস্ক্রিন টলিউডেও নানা নাটক সারা বছর জুড়েই। তালিকার প্রথমে থাকবে রাজ-মিমির বিচ্ছেদ। এমনই আরও বিচ্ছেদ পর্ব রয়েছে সারা বছর জুড়ে। এর মধ্যেই বিয়ে করলেন শিবপ্রসাদ। আর বাবা হলেন মাস্টার বিট্টু। দেখুন।

২০১৬ সালে টলিউড কিন্তুু বিখ্যাত হয়ে থাকবে বাস্তবে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায়, যা দর্শককে সিনেমার চেয়েও বেশি উত্সুক করেছে। প্রথম অধ্যায়ে সবাইকে অবাক করে ডিভোর্স ফাইল করলেন শ্রাবন্তী, তাঁর স্বামী রাজীবের বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগ এনে। ছেলেকে নিয়ে আলাদা হলেন শ্রাবন্তী। সংবাদমাধ্যমে তাঁদের বিবাহ-বিচ্ছেদ নিয়ে জলঘোলাও কম হল না। বছরের মাঝামাঝি আবার শ্রাবন্তী বিয়েও করে ফেললেন তাঁর অবাঙালি বয়ফ্রেণ্ডকে। ঘটা করে দিলেন রিসেপশন পার্টিও।

এই জের কাটতে না কাটতেই জানা গেল, একসঙ্গে থাকতে পারছেন না রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা। চিরদিনই তুমি যে আমার এই কথা দিয়েই যাঁরা নেমেছিল রঙ্গমঞ্চে, এতদিনের বিয়ের সম্পর্কই দাঁড়াল ভাঙনের মুখে। প্রিয়াঙ্কা নতুন ফ্ল্যাটও কিনলেন ছেলের সঙ্গে আলাদা হবেন বলেই। টুকটাক কাজও শুরু করলেন। এমনকী রান্নার প্রোগ্রামে শো হোস্ট হিসেবে কাজও করলেন। বিচ্ছেদ অনির্বার্য ছিলই, কিন্তু শেষ মুহূর্তে নাকি তাঁরা আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেছেন।

কোনও কিছুই যে চিরদিনের জন্যে নয়, তা প্রমাণ করলেন রাজ-মিমি জুটি। অফস্ক্রিন এঁরা লিভ-ইন রিলেশনশিপে ছিলেন বহু বছর। টলিউড একরকম দুজনকে একইসঙ্গে দেখতে অভ্যস্ত ছিল। গ্যাংস্টার ছবির শুটিং করতে গিয়ে তুরস্কের এক লাইন প্রোডিউসার মিলির সঙ্গে সেটেই নাকি মাখোমাখো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মিমির। রাজের অভিযোগ, তাই মিমি তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

মিমির আবার একটু অন্যরকম অভিযোগ। তিনি বললেন, রাজ আসলে অ্যাফেয়ার চালাচ্ছেন নায়িকা শুভশ্রীর সঙ্গে। একসঙ্গে থাইল্যান্ড বেড়াতেও গিয়েছেন। পুরোটাই যাতে বিশ্বের সবাই জানতে পারে, সেজন্য টুইটযুদ্ধও চলেছে তাঁদের সঙ্গে।

বিচ্ছেদের পাশে মিলনের সুরও বেজেছে। ছাদনাতলায় বিজয়ীর হাসি হেসেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আর এদিকে মাস্টার বিট্টু এখন বেবি বিট্টুর প্রাউড ফাদার। এ বছর বাবা হলেন সোহম। ওয়েলকাম টু পেরেন্টহুড!

.