আধার কার্ড অথই জলে, অথচ চালু হয়ে গেল রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি

আধার কার্ড এখনও পৌঁছয়নি অধিকাংশ মানুষের হাতে। অথচ রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতে আজ থেকেই চালু হয়ে গেল আধার কার্ডের ব্যবহার। প্রাথমিকভাবে কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। আপাতত গ্রাহকরা তিন মাসের সময়সীমা পাবেন। এর মধ্যে আধার কার্ড করাতে পারলে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে যাবে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে এই কার্ড করানো কি সম্ভব? ধন্ধে অনেকেই।

Updated By: Nov 1, 2013, 10:17 PM IST

আধার কার্ড এখনও পৌঁছয়নি অধিকাংশ মানুষের হাতে। অথচ রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতে আজ থেকেই চালু হয়ে গেল আধার কার্ডের ব্যবহার। প্রাথমিকভাবে কলকাতা, হাওড়া ও কোচবিহারে এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। আপাতত গ্রাহকরা তিন মাসের সময়সীমা পাবেন। এর মধ্যে আধার কার্ড করাতে পারলে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পৌঁছে যাবে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে এই কার্ড করানো কি সম্ভব? ধন্ধে অনেকেই।
রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতে আধার কার্ড লাগবে। শুক্রবার থেকে এই ব্যবস্থা চালু করে দেওয়ার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। তিন মাসের চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপরও কার্ড না থাকলে, মিলবে না ভর্তুকি। আধার কার্ড না থাকলে, দ্বারস্থ হতে হবে স্থানীয় প্রশাসনের। যাতে এই তিন মাসের সময়সীমা অর্থাত্‍ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা হাতে চলে আসে।
 
যাদের আধার কার্ড আছে, তাঁদের প্রথমেই যেতে হবে নিজের এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে। সেখানে নথিভুক্তকরণের পর কাগজপত্র নিয়ে ব্যাঙ্কের কাছে তা জমা করতে হবে। এই দুই পর্যায় পেরোনর পরই ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাঙ্কে পৌঁছে যাবে।
 
কিন্তু এখন যা অবস্থা, তাতে কতজনই বা পাবেন এই ভর্তুকি? তিন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থা, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম এবং ভারত গ্যাস, এদের কাছে নথিভুক্ত গ্রাহক সংখ্যার দিকে চোখ ফেরালেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ছবিটা।
 
আইওসি- র কলকাতায় গ্রাহক সংখ্যা ৬ লক্ষ ৫১ হাজার। এদের মধ্যে আধার কার্ড আছে মাত্র ২৮ হাজার মানুষের। হাওড়ায় আইওসি-র গ্রাহক ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার। মাত্র ২৫ হাজার ৪০০ জনের কাছে আধার কার্ড আছে। কোচবিহারে আইওসি-র আটানব্বই হাজার গ্রাহকের মধ্যে আধার কার্ড আছে মাত্র ১৬ হাজার ৪৩৫ জনের হাতে।
হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের কলকাতায় গ্রাহক সংখ্যা ৩ লক্ষ ২৪ হাজার। এদের মধ্যে ১০ হাজার জনের এই কার্ড আছে।
 
হাওড়ায় এক লক্ষ ৫৯ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৮ হাজার ৭০০ জনের আধার আছে। কোচবিহারে ২২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে কার্ড হাতে পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ২০০ জন। কলকাতায় ভারত গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ২ লক্ষ। এর মধ্যে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার মানুষের আধার কার্ড আছে। হাওড়ায় এক লক্ষ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে কার্ড আছে ৪ হাজার ৯০০ জনের। কোচবিহারে ১৬ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এক হাজার জনের আধার কার্ড আছে।                
এ তো গেল ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে নথিভুক্ত গ্রাহক সংখ্যা। গড়ে  যা সর্বসাকুল্যে ৪ থেকে ৫ শতাংশ। ব্যাঙ্কের কাছে তা আরও কম। সংখ্যাটা গড়ে ২ শতাংশেরও নীচে।  
 অর্ধেকেরও অর্ধেক লোকের কাছে যেখানে কার্ডই নেই, সেখানে কীভাবে তাঁরা ভর্তুকি পাওয়ার যোগ্য হবেন? এ নিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়ে সুপ্রিম কোর্টেও। নিজের পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, "কোনও সরকারি সুবিধা পেতে হলে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়।"
এরপরই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পাল্টা আবেদন করা হয়েছে। যে মামলা এখনও বিচারাধীন। যদি সুপ্রিম কোর্ট নিজের আগের অবস্থানেই অনড় থাকে সেক্ষেত্রে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতে আধার কার্ড অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। কেন্দ্রের নির্দেশের আর কোনও গুরুত্ব থাকবে না। কিন্তু তেমনটা না হলে, আধার কার্ড নিয়ে নাকাল হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন অধিকাংশ গ্রাহকই।
 

.