অ্যাগনেস থেকে টেরেসা, সিস্টার থেকে মাদার হওয়ার রূপকথা

Updated By: Sep 1, 2016, 09:47 AM IST
অ্যাগনেস থেকে টেরেসা, সিস্টার থেকে মাদার হওয়ার রূপকথা

ব্যুরো: কবির কলমে কলকাতা কল্লোলিনী-তিলোত্তমা। কিন্তু, এই শহরের মধ্যেই তো লুকিয়ে আছে আরেক শহর। যেখানে জীবন কেটে যায় ফুটপাথে। চুরি যায় শৈশব। উচ্ছিষ্ট খুঁটে খায় অসহায় বার্ধক্য। হাইড্র্যান্ট খুলে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল। সেই কবেকার কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধশুরু হতে ঢের বাকি। তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, ছেচল্লিশের দাঙ্গা, স্বাধীনতা-তখনও কিছুই দেখেনি এই শহর। উনিশশো উনতিরিশে মাত্র উনিশ বছর বয়সে সূদূর ম্যাসিডোনিয়া থেকে কলকাতায় পা রাখলেন অ্যাগনেস। তারপর পুরোটাই যেন রূপকথা। সিস্টার থেকে মাদার। অ্যাগনেস থেকে টেরেসায় রূপান্তরের সাক্ষী এই কলকাতা। 

১৯২৮-এ মাত্র ১৮ বছর বয়সে গৃহত্যাগ। সিস্টারস অফ লোরেটোয় যোগদান। 

ম্যাসিডোনিয়া থেকে আয়ারল্যান্ড হয়ে পরের বছর কলকাতা। বাংলা শিখতে দার্জিলিঙে।

১৯৩৭-এ এন্টালির লোরেটো কনভেন্টে শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান।

১৯৪৪-এ লোরেটোর প্রধান শিক্ষিকা। 

কনভেন্টের জীবন ভাল লাগছিল না। বাইরের দুনিয়ায় এত অসহায় মানুষের কান্না হৃদয় খুঁড়ে রোজ বেদনা জাগাচ্ছিল। তখনই এল সেই ডাকের অন্তরের ডাক। 'দ্য কল উইদিন এ কল'। লোরেটো কনভেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মাদার টেরেসা। চলে এল ভ্যাটিকানের অনুমতি।উনিশশো পঞ্চাশে যাত্রা শুরু হল মিশনারিজ অফ চ্যারিটির। দু-বছর পর কালীঘাটে তৈরি হল নির্মল হৃদয়। মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য আশ্রয়।

১৯৫৫-এ নির্মলা শিশু ভবন তৈরি করলেন মাদার টেরেসা। মায়ের স্নেহে আশ্রয় দিলেন অনাথ শিশুদের। তৈরি হল শহরজুড়ে একের পর এক লেপরসি ক্লিনিক। কুষ্ঠরোগীকে বুকে টেনে নিলেন মাদার। বুঝিয়ে দিলেন কুষ্ঠ পূর্বজন্মের পাপের ফল নয়। আর এ রোগ ছোঁয়াচেও নয়।

মাত্র ১৩ জন সিস্টারকে নিয়ে যাত্রা শুরু হয় মিশনারিজ অফ চ্যারিটির। আজ বিশ্বের ১৩৩টি দেশে আর্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত মাদারের হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৪ হাজার সিস্টার। 

অনাথ শৈশব, অক্ষম বার্ধক্য, পঙ্গু যৌবন, দরিদ্র-গৃহহীন মানুষের কাছে তিনি ছিলেন আলোকবর্তিকা। মাদার বিশ্বনাগরিক, সন্দেহ নেই। কিন্তু, এই শহরের আনাচে-কানাচে যে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর সেবার অভিজ্ঞান। তাই, অসলো সিটি হলে নোবেল শান্তি পুরস্কার যখন কুর্নিশ জানায় মাদার টেরেসাকে তখন মন ভাল হয়ে যায় কলকাতার।

১৯৮০-তে মাদার টেরেসা ভারতরত্ন। স্বাধীনতার পরের বছর তিনি ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। জন্মসূত্রে ভারতীয়দের তিনি বলতেন, তোমরা তো দৈবক্রমে, আমি স্ব-নির্বাচনে ভারতীয়। মাদার টেরেসার সন্ত হওয়ার ক্ষণে আনন্দিত গোটা বিশ্ব। তার শরিক এই দেশ এই শহর।বুকে যিশু। অন্তরে সেবা। বলিরেখা-দীর্ণ ক্ষমাসুন্দর মুখ। সন্ত একদিন হেঁটে যেতেন এই কলকাতায়। 

তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে....

.