বাহিনী প্রত্যাহার করেই আলোচনা : মহাশ্বেতা

শনিবার ঝাড়গ্রামে যে ভাবে মাওবাদীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি মহাশ্বেতা দেবী, কৌশিক সেন এবং নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো বুদ্ধিজীবীরা। মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব তাঁরা।

Updated By: Oct 15, 2011, 10:20 PM IST

শনিবার ঝাড়গ্রামে যে ভাবে মাওবাদীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি মহাশ্বেতা দেবী, কৌশিক সেন এবং নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো বুদ্ধিজীবীরা। মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব তাঁরা।

"যৌথবাহিনী তুলে নেবে বলে ডিক্লেয়ার করুক এবং আলোচনায় বসুক। তুলে নিলেই ভাল হয়ে, অন্তত আলোচনায় বসুক। আলোচনা ব্যাতিত কোনো সমস্যার সমাধান হয়ে না। আমি বিশেষ একটি আদিবাসী ক্ষেত্রে বহুবছর আন্দোলন করেছি। দুই পক্ষরই পরস্পরের মন বোঝা উচিত কি চায়। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু হওয়া সম্ভব। আমি তো জানিনা কোন বিশিষ্টজনেরা গিয়ে মাওবাদীদের উৎসাহিত করছে। মাওবাদীদের সঙ্গে আমি আগাগোড়াই বলেছি যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি আলোচনায় বসা উচিৎ। কারন আমি বিশ্বাস করি যে আলোচনার মাধ্যমে অন্তত কিভাবে সমাধান করা যাবে সমস্যাটার তার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে পারা যায়।" ---মহাশ্বেতা দেবী

"যে সময়টায় উনি প্রধান বিরোধী নেত্রী, যে সময়টায় পরিবর্তনের প্রাক্‌মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ওনার এবং ওনার পার্টির বহু লোকের মনে হয়েছিল যে মাওইস্টরা কেউ নেই, মাওইস্ট রা একজিস্টই করে না, এবং সবটাই সিপিএমের চক্রান্ত, এইগুলো যখন উনি বলছিলেন তখন কোথাও ভেতরে ভেতরে কোথাও একটা মাওইস্টরা উৎসাহিত হচ্ছিল। এবং তার পাশাপাশি এটাও ঘটনা যে যখন অসংখ্য মানুষ মারা গেছে, তখন সেই মানুষের মৃত্যুগুলোকে কন্ডেম যেভাবে করা উচিত ছিল, সেইভাবে কিন্তু করা হয়নি।
বরঞ্চ দায়টা শুধুমাত্র প্রশাসনের ওপরেই চাপানো হয়েছিল। তখন যে ভুলটা হয়ে গিয়েছিল সেই ভুলটার খানিকটা হলেও খেসারৎ কিন্তু এখন দিতে হবে। এইমুহূর্তে উনি মাওবাদী সম্পর্কে যে মনোভাবটা দেখাচ্ছেন সেটা সঠিক, তার কারন, কিছুদিন আগেও যে মৃত্যুগুলো ঘটে গেছে সেইগুলো কোনোভাবেই একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে আমি মেনে নিতে পারিনা। ফলে এই মাওইস্টদের বিরুদ্ধে কথা বলাটা প্রয়োজন, কথা বলতে হবে, কিন্তু একইসঙ্গে যেটা বলা দরকার যে ওনাকে এবং ওনার পার্টিকে স্বীকার ও করতে হবে, এবং এই স্বীকার করার মধ্যে আমার মনে হয় না কোনো গ্লানি থাকা উচিৎ। যে তখন রাজনৈতিক কারনে যে কথাগুলো বলতে হয়েছিল ওনাকে সেগুলো যে ভুল ছিল সেটা স্বীকার করে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।" --- কৌশিক সেন

"বন্দুক তো একতরফা কেউ নামিয়ে রাখতে পারে না এইরকম একটা পরিস্থিতিতে। এবং আমার যেটা ভাল লাগেনি সেটা হচ্ছে যে এরকম একটা আল্টিমেটাম দেওয়া। আমরা তো আশা করেছিলাম যে একটা আলোচনা হবে, একটা মধ্যস্থতাও চলছিল। এখন পুরো ব্যাপারটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াল কিছুই বুঝতে পারছি না। কারণ এই পসিশন অফ স্ট্রেংথ থেকে কথা বলাটা এইরকম পরিস্থিতিতে কতটা যুক্তিযুক্ত হল সেটা ভবিষ্যতই বলবে। এখন বলা যাবে না। ওখানে নিয়মিত ধরপাকড় চলছে, অত্যাচার চলছে, সবই হচ্ছে। কাজেই কোনোকিছু হয়নি, করা হয়নি যৌথবাহিনী অভিযান চালায়নি, তারা বিরত থেকে ছিল এরম কিছু ঘটে নি। হয় তাঁকে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, অথবা তিনি জেনেও ঠিক কথা বলছেন না।
দুপক্ষকেইতো একটা যায়গায় গিয়ে কিছুটা দাবিদাওয়া ছেড়ে দিয়ে আলোচনায় বসতে হয়। কিন্তু আজকে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তাতে এই আলোচনার রাস্তাটা বোধহয় খুব একটা সুগম হল না।" ---নবারুণ ভট্টাচার্য

.