আরও একটা সিবিআই তদন্ত চায় না সরকার, পাড়ুইকাণ্ডে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ
পাড়ুইকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের। সিটের তদন্তে অসঙ্গতির কারণে তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে খুশি নয় আদালত। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কোলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা: পাড়ুইকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের। সিটের তদন্তে অসঙ্গতির কারণে তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে খুশি নয় আদালত। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কোলকাতা হাইকোর্ট। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার পাড়ুইকাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় খুন হন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী, নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। বারবার রাজ্যের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। আজ রায় ঘোষণার সময় বিচারপতি ট্যান্ডনের পর্যবেক্ষণ, এসআইটি বা সিট একপেশে এবং প্রভাবিত হয়ে তদন্ত করেছে। এফআইআরে নাম থাকা সত্বেও অনুব্রত মণ্ডলের গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করার কেন প্রয়োজন বোধ করল না সিট, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি।
অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে ডিজির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত। তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সরকারি আইনজীবীর সঙ্গে ডিজির আলোচনা করাও উচিত হয়নি বলে বিচারপতির পর্যবেক্ষণ। এ সমস্ত কারণেই এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া হল বলে জানিয়েছেন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন। সময়ে সময়ে আদালতে সিবিআইকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই রায় ঘোষণার পরই, সিবিআই তদন্ত আপাতত স্থগিত রাখার আর্জি জানান সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিচারপতি আর্জি খারিজ করে দেন।
পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে গতবছর ডিসেম্বরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সাগর দত্তের পরিবার। মামলা করা হয় বিচারপতি সঞ্জীব ব্যানার্জীর এজলাসে। নিহতের স্ত্রীকে এজলাসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিচারপতি। এর পরেই ২৪ ডিসেম্বর পুলিসের কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেসময় মূল অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম। বিচারপতি সঞ্জীব ব্যানার্জি সেসময় মামলাকারির আইনজীবীর উদ্দেশ্য সহাস্যে বলেছিলেন,
মামলা এরপর আসে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে। সিআইডি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে গত ১৪ই ফ্রেবরুয়ারি ডিজির নেতৃত্বে সিট গড়ে দেন বিচারপতি দত্ত। কিন্তু মাত্র দুমাসেই সিটের কাজে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ডিজির ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন...
ডিজি কি ভয় পাচ্ছেন? একজন এসআই এর থেকে ভালো কাজ করতে পারেন। সিবিআই তদন্তের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পরের শুনানির দিনই তিনি ভরা এজলাসে অনুব্রতর বিতর্কিত বক্তব্যের সিডি চালিয়ে দেখেন। নির্দেশ দেন ডিজিকে হাজির হয়ে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। কিন্তু তার পর দিনই রাজ্যের তরফে এর বিরোধিতা করে ডিভিসন বেঞ্চে আপিল করা হয়। তখনকার মতো স্থগিত হয় ডিজির হাজিরা। তবে এরপর জুন মাসেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মামলা থেকে সরে যান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। মামলা এবার যায় বিচারপতি হরিশ ট্যন্ডনের এজলাসে। ততদিনে সিউরি আদালতে পেশ করা চার্জসিটে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু সেখানেও এড়ানো যায়নি পুলিসের ভূমিকা। ডিজি কেন তড়িঘরি সিউরি আদালতে চার্জসিট পেশ করলেন তাই নিয়েই তিনি প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। এমাসেই ফের হাইকোর্টে ডেকে পাঠানো হয় ডিজিকে। যদিও এজলাসে দাঁড়িয়েও অনুব্রতকে ক্লিনচিট দেন ডিজি। পাড়ুই মামলার পরতে পরতে ছিল বিতর্ক। মামলা যত এগিয়েছে ততই সেই বিতর্ক বেড়েছে।