ভালোবাসার দাম

Updated By: Mar 31, 2017, 08:51 PM IST
ভালোবাসার দাম

পবিত্র ভট্টাচার্য

চোখে আবারও জল এসে গেল ঝুমুরের। বর তার হাতে হাত রাখল। তবুও সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে দেখে তার বর তার কাঁধে হাত রেখে বলল, " কি গো এত কাঁদছো কেন ? আমাকে যদি পছন্দ না হয়ে থাকে এখনো সময় আছে বলে দাও। গাড়ি কিন্তু বেশি দূর যায়নি ।" ঝুমুর জড়িয়ে ধরল তার বরকে । বুকে মাথা রেখে আরও জোরে কেঁদে উঠল সে । পাণিমোড় থেকে গাড়িটা ছাড়ার পরই ঝুমুরের যন্ত্রণা যেন আরও বেড়ে গেল। গাড়ি যত এগোতে থাকল বুকের মধ্যে কিছু যেন একটা দলা পাকাতে শুরু করল। সবটাই মৃত্যুঞ্জয়ের জন্য।

ধলহরা বাজারের পর মৃত্যুঞ্জয়দের গোলাবাড়ি। গত বছর পর্যন্ত এই ধানঝাড়ার সিজনে মৃত্যুঞ্জয় আর সে একসঙ্গে ধান ঝেড়েছে। ছোটোবেলা থেকেই মৃত্যুঞ্জয়ের সাথে তার সখ্যতা। পাড়ার আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের থেকে মৃত্যুঞ্জয় বড় আপন হয়েগিয়েছিল তার। বিপদে-আপদে, সময়ে-অসময়ে খুব কাছে পেত তাকে। মৃত্যুঞ্জয় খুব কেয়ার করত তাকে। কোথাও বাড়ি থেকে ফিরতে দেরি হলে মৃত্যুঞ্জয় এসে খোঁজ নিত, "কাকিমা , ঝুমু এখনও বাড়ি ফেরেনি?" অসুস্থ হলে রোজ একবার খোঁজ নিত, "কি রে কেমন আছিস, ওষুধ টষুধ খাচ্ছিস তো?" এই কেয়ারিং-এর ভাষা যে কখন বদলে গেল বুঝতে পারেনি দুজনেই। দোলের দিন রং খেলতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম স্পর্শ করে ঝুমুরের শরীর। পাগল হয়ে যায় ঝুমুর। আপন করে নেয় মৃত্যুঞ্জয়কে। আর কানে কানে বলে , "কখনও ছেড়ে যাবিনা তো আমায়!"

হঠাত্ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল। বর জিজ্ঞাসা করল , "কি হল রে?" ড্রাইভার বলল, "চাকা খাদে আটকে গেছে। ঠেলতে হবে।" মুখের কথা শেষ হওয়ার আগে কেউ একজন এসে গাড়ি ঠেলতে শুরু করল খানিকক্ষণের চেষ্টায় গাড়িটা রাস্তায় উঠে এল। সাইড গ্লাসে ঝুমুর দেখতে পেল ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুঞ্জয়কে। ভাবলেশহীন মুখে বরের কাছ থেকে গাড়ি ঠেলার দরুণ ১০০ টাকা না নিয়ে চলে গেল। ঝুমুরের মনে হল, মৃত্যুঞ্জয় যেন তাকে তার ভালোবাসার দাম ফেরত্ দিয়ে গেল।

আরও পড়ুন, প্রেমের অণুগল্প "তোকে লিখছি"

.