যোগী-অমিত-স্মৃতির ত্রিফলায় বিদ্ধ মা-ছেলের গান্ধী পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদন: "এতদিন সোনিয়া গান্ধীর জামাই রবার্ট বঢঢ়া জমি হাতিয়েছেন, আর এবার সোনিয়া নন্দন রাহুলও সেই মতলবে মাঠে নেমেছেন", এই ভাষাতেই কংগ্রেসের 'রাজ পরিবারে'র বিরুদ্ধে চরম আক্রমণ হানলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
মোদী-শাহর গড় গুজরাটের আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তুলে বিজেপির রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। আর তার পাল্টা হিসাবে এবার নেহেরু-গান্ধী পরিবারের খাস গড় আমেঠি-রায়বেরিলিতে হানা দিয়ে তাঁদের রাতের ঘুমও কেড়ে নিতে চাইছে গেরুয়া নেতৃত্ব, এমনটাই মত রাজনৈতিক মহলের। সেই লক্ষ্যেই আজ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশে হাজির হয়েছেন অমিত শাহ এবং স্মৃতি ইরানি। বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ ও বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই যোগ দিয়েছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আর এরপর পদ্ম শিবিরের এই ত্রিফলা, আক্রমণ শানাতে শুরু করে সোনিয়া-রাহুলের প্রতি।
রাজীব গান্ধী ট্রাস্টের নাম করে সোনিয়া-রাহুলের পরিবার যে দীর্ঘদিন ধরে জমি হাতানোর চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ আনার পাশাপাশি উন্নয়নের খোঁচাতেও বিদ্ধ করা হয়েছে কংগ্রেসকে। অমিত শাহ এদিন রাহুলের কেন্দ্র আমেঠিতে বলেন, "আমি শাহাজাদা রাহুল গান্ধীকে প্রশ্ন করতে চাই, যে আমেঠি আপনার পরিবারের তিন প্রজন্মকে ভোটে জেতাল, তবুও কেন আপনি এই কেন্দ্রের উন্নয়নে কোনও কাজ করলেন না? আমি ৩০ বছর ধরে জনসেবায় রয়েছি অথচ এর আগে এমন কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধিকে দেখিনি যিনি তাঁর নিজের কেন্দ্রেই আসেন না!" আর এরপরই অমিত বলেন, "দেশে উন্নয়নের দুটি মডেল রয়েছে। একটি নেহেরু মডেল এবং অন্যটি মোদী মডেল। আমি কথা দিচ্ছি ভবিষ্যতে যখন যোগী আপনাদের কাছে ভোট চাইতে আসবেন তখন তিনি এমন এক উত্তরপ্রদেশের কথা বলবেন যা গুজরাটের মত উন্নত"।
অমিতের পরই মাইক হাতে নেন স্মৃতি ইরানি। তিনি বলেন, আমেঠি-রায়বেরিলিকে বাদ দিয়ে রাহুল এবং সোনিয়া সারা দেশ ঘুরে বেড়ায়। ফলে এখানকার মানুষের কথা তাঁদের কানে পৌঁছায় না। গত লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের বিরুদ্ধে আমেঠি থেকে লড়ে হেরে যাওয়া স্মৃতি এরপর নিজেকে 'আমেঠির দিদি' বলে পরিচয় দিয়ে এই অঞ্চলের উন্নয়নে পাশে থাকার বার্তা দেন।
কেন এই আক্রমণ?
এদিন বিজেপির এমন 'অল আউট অ্যাটাক'-এর কারণ হিসাবে মূলত দুটি ব্যাখ্যা উঠে আসছে বিশ্লেষকদের আলোচনায়। এক্ষেত্রে প্রথমটি, গুজরাট থেকে রাহুল-সোনিয়ার দৃষ্টি ঘোরানো বা তা সম্ভব না হলে গুজরাটের পাল্টা হিসাবে গান্ধী পরিবারের সাবেক নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রতি হাত চিহ্নের অবহেলার কথা তুলে ধরার কৌশল। আর অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সারা দেশ জুড়ে ইতিমধ্যেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্য গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছে অমিত ব্রিগেড। আর সেক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে গান্ধী পরিবারের ট্রেড মার্ক নির্বাচনী কেন্দ্রে তাঁদের 'রাজনৈতিকভাবে বধ' করতে চাইছে আগ্রাসী মোদী-শাহ জুটি। আহমেদ প্যাটেলকে রাজ্যসভায জিতিয়ে আনতে পারায় উত্সাহিত রাহুল যেমন মনে করছেন, গুজরাটের বিধানসভা ভোটে যদি মোদী-শাহর অশ্বমেধের ঘোড়াকে থামিয়ে দেওয়া যায় তাহলেই কেল্লাফতে। সেক্ষেত্রে নিজের রাজ্যে হেরে যাওয়ার দায় নিয়ে সারা দেশে বিস্তর ব্যাকফুটে চলে যেতে হবে অমিত-মোদীকে। উল্টো দিকে বিজেপি চাইছে, কংগ্রেসের সাবেক ঘাঁটিতেই তাদের হারিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে।